দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: দূর্গাপূজো বাঙালির মোশন-ইমোশন-ইন্সপিরেশন। মহালয়ার ভোর চারটে মানেই বাঙালীর পরিচিত কন্ঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং চিরকালীন জনপ্রিয়। এক শঙ্খধ্বনিতে রেডিওর ওপার থেকে ভেসে আসে সেই আগমনীর বার্তা। সেখানে শাশ্বত এক সুর, সে সুর যেমন গানের, তেমনই পাঠের।
১৯০৫ সালের ৪ঠা অগাস্ট তাঁর জন্ম হয় উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায়। ১৯৩০-এ শুরু এরপর দীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিও-য় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন তিনি। এই সময় তিনি একাধিক নাটক প্রযোজনাও করেন। তাঁর পরিচিতি ব্যাপকভাবে সামনে আসে যখন তাঁরই লেখা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বেতার সঙ্গীতালেখ্যটি বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে।
১৯৩১ সাল থেকে আজও, মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় কলকাতার আকাশবাণী থেকে এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর পরিবারের লোকেরা বলেছেন, ‘তিনি প্রতিবছর চণ্ডীপাঠের সময় আকাশবানীর স্টুডিওয় বসেই কেঁদে ফেলতেন। আবেগে গলা বুজে আসত রাশভারী বীরেন্দ্রকৃষ্ণর’।
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন, সহ প্রমুখ একাধিক ব্যাক্তি তাদের স্মৃতিচারণায় বলেছেন যে, কীভাবে দেবীপক্ষের শুরুর দিনটিতে শ্বেত শুভ্র আভরণে, শুদ্ধ চিত্তে গঙ্গা স্নান করে রেডিওর স্টুডিওয় আসতেন শিল্পীরা। সেই আয়োজনের প্রাণপুরুষ ছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য, ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।
এরপর ১৯৩১ সাল থেকে টানা এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতে থাকে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে একবার ছেদ পরে। সে সময়ে উত্তম কুমারকে দিয়ে ‘দুর্গা দুর্গতিহারিনী’ নামক একটি অনুষ্ঠান মহালয়ার দিন সম্প্রচার করানো হয়। কিন্তু আবেগী ও স্বাত্তিক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ’র দরাজ গলাকে গলাকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি স্বয়ং মহানায়ক।
বাঙালীর সেই ইমশনকে ধরে রাখতে সেই বছরই ষষ্ঠীতে সম্প্রচারিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। কিন্তু রেডিও তাঁকে জানায়নি সেই নতুন অনুষ্ঠানের কথা। মনে মনে ভারী দুঃখ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মানুষের আন্তরিক ভালবাসায় সেই দুঃখ তার মুছে গিয়েছিল।
সেদিন থেকে আজও এই অতিমারীর মধ্যেও ভোর চারটের সময় সব প্রতিকূলতাকে মুছে রেডিও চালাবে বাঙালি। মুগ্ধ হয়ে শুনবে স্তত্রোচ্চারণ, চণ্ডীপাঠ। কারন অতিমারী কখনোই বাঙালির এই আবেগকে মুছে ফেলতে পারবে না।