দ্য ক্যালকাটা মিরর: শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে, মৃদু হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। আশ্বিনের শারদপ্রাতে শোনা গেল জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা কিন্তু পূজো কি হবে এবার সেভাবে! এ বছর পরিস্থিতি অন্যরকম। বাঙালির সবচেয়ে প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেললেও পূজো হওয়া নিয়ে তৈরী হয়েছে সংশয়। এরই সন্ধান পাওয়া গেলো প্রতিমা তৈরির আঁতুরঘর কুমারটুলিতে। কারণ এখান থেকেই প্রাথমিকভাবে বাঙালীর দুর্গাপুজোর শুরু।
প্রতিবছরই মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর আর কুমারটুলিতে মায়ের প্রতিমা নির্মাণ, এই দু’য়ের যুগলবন্দীতেই বাঙালির হৃদয়জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ। প্রায় তিনশো বছর ধরে কুমারটুলিতে মায়ের মূর্তি তৈরীর কাজ বংশ পরম্পরায় চলছে। প্রতি বছর মাটি, কাঠামো, খড় আর কিছু অসামান্য শিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যতার ছোঁয়ায় মাটির মূর্তিগুলিও জীবন্ত হয়ে ওঠে। সৃষ্টিশীল মায়ের মূর্তিগুলোকে ঘিরে হাজারো স্বপ্নের জাল বোনে প্রতিটি বাঙালি।


কিন্তু গতবছর এই সময়ের কুমারটুলির সাথে এ বছরের কুমারটুলির কোনও মিল নেই। পাঁজী’র চক্করে এ বছর কুমারটুলির চিত্রটা খুবই অন্যরকম। করোনা আবহে কুমারটুলি যে ভালো নেই তা বলাই বাহুল্য। মহালয়ার এই শুভ তিথিতে সময়ের হেরফেরেই মায়ের চক্ষুদান সম্ভব হয়নি। ছোটো কিছু প্রতিমার হলেও, দেখা মিললো না বড় প্রতিমার চক্ষুদানের। কারণ মলমাস পড়ে যাওয়ায় দুর্গাপুজো এবার মহালয়ার এক মাস পিছয়ে। জমা পড়েনি বায়নাও।


সে কারণেই অসম্পূর্ণ বেশিরভাগ প্রতিমাই। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পরিচয়হীন কাঠামোগুলো। মূর্তি তৈরীর সংখ্যা অনেকটাই কম। বড় ঠাকুর হাতে গোনা। যা তৈরী হচ্ছে তা সবই ছোটো এবং এক চালার। শিল্পীরা মানসিক এবং অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। মায়ের আগমনের অভাবে তাঁদের ঘরেও অন্ন-বস্ত্রের অভাব। দিন গুনছে মায়ের মূর্তি তৈরীর বায়না পেতে। দিন গুনছে আবার পরিচিত ছন্দে নিজেদের ফিরে পাওয়ার।
অন্যদিকে, মহালয়ার ভোরেই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপূজা নিয়ে খানিকটা আশার আলো দেখিয়েছেন। তিনি একটি টুইট এ লিখেছেন “কোভিডের জন্য আমাদের উৎসব উদ্যাপন অনেক বিধিনিয়মে বাঁধা পড়েছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর উদ্দীপনাকে কোনও ভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।” যা কুমারটুলির পটুয়াদের কপালে চিন্তার ভাঁজ সাময়িক কমিয়েছে। এবারে কুমোরটুলির বিষন্ন মুখে স্নিগ্ধ হাসি ফুটিয়ে তুলতে পূজো কমিটিগুলো এগিয়ে আসবে বলেই বিশ্বাস। আবার পরিচিত ছন্দে ফিরবে কুমারটুলি।