33 C
Kolkata
Monday, June 5, 2023
More

    কলকাতার রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী, বললেন ‘একি চলছে উত্তরপ্রদেশে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি সেই গ্রামে ছুটে যাই’

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: উত্তরপ্রদেশের হাথরাস-কাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার প্রস্তাবিত মিছিলে পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। শুধু মিছিলে হাঁটা নয়, সেই সাথে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন, ক্ষোভ, উষ্মা প্রকাশ করলেন তিনি। আজ বিকেল ৪’টেতে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয় বিড়লা তারামণ্ডল থেকে আর শেষ হয় মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। গান্ধী মুরতির পাদদেশেই একটি ছোট সভামঞ্চে নিজের বক্তব্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মিছিলে শয়ে শয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও পা মেলাতে দেখা যায়।

    মঞ্চে উঠেই মমতা ব্যানার্জী বলেন যে গত ৬-৭ মাস ধরে এই কোভিড পরিস্থিতিতে কোনও মিটিং-মিছিলে তাঁর সায় ছিল না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে যেভাবে দলিত কন্যার ওপর অকথ্য অত্যাচার এবং পরিবারের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ যেভাবে নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে তা দেখে আর মৌনতা বজায় রাখা যায় না। তিনি আবেগমথিত গলায় বলেন, ‘‌মনে হচ্ছে এখনই উত্তরপ্রদেশে ছুটে যাই। আমার মন পড়ে রয়েছে সেই গ্রামে।’‌

    উল্লেখ্য, মমতা ব্যানার্জী নিজে যেতে না পারলেও নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সাংসদ ডেরেক ও’‌ব্রায়েন-সহ তৃণমূলের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে হাথরাসে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ব্যানার্জী। কিন্তু শুক্রবার তাঁদের সেখানে আটকে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এমন কী শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয় কাকলী ঘোষ দস্তিদার সহ মমতা বালা ঠাকুরকে। ডেরেক কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বলে ইউপি পুলিশের প্রতি অভিযোগ করেন মমতা। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘‌ওঁরা গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। সামান্য ভদ্রতাও করা হয়নি ওঁদের সঙ্গে। মহিলাদের গায়ে হাত দিয়েছে পুরুষ পুলিশকর্মীরা। কাল সাংবাদিকদেরও সেখানে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গ্রামের ভেতর যেতে না দেওয়ায় তাঁরা সেখানে ধর্নাও করছিলেন। এ কী চলছে উত্তরপ্রদেশে!‌’‌

    এরে সাথে তিনি জুড়ে দেন, ‘‌কোনও অপরাধ হলে আগে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে ও তার পর নিয়ম অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে অত্যাচার হওয়ার পর বিজেপি সরকার পরিবারের হাতে দেহ না দিয়ে দহন করে দিল। এ কেমন বিচার?‌’‌ আমি সারা ভারতকে বলতে চাই, আমার মন উত্তরপ্রদেশের ওই গ্রামে পড়ে রয়েছে যেখানে আমার এক দলিত বোনকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে।’‌

    এই সহমর্মিতার পাশাপাশি তিনি বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল সিঙ্গুরে। তখন আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। তাই ‌আজ নয়তো কাল, কাল নয়তো পরশু। সময় একদিন আসবেই। আমি যাব উত্তরপ্রদেশের ওই গ্রামে। আপনারা (‌বিজেপি)‌ জানতেও পারবেন না।’‌

    তবে এদিনের তাঁর বক্তব্যে সারা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন তিনি। তাই বাংলায় কম, হিন্দিতেই বেশি কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সভামঞ্চ থেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনও গণতন্ত্র নেই ভারতে। রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে যাচ্ছে দেশ। এ দেশ এখন একনায়কতন্ত্রের সরকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’‌

    মিটিং এর শেষে মুখ্যমন্ত্রী এদিন দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে ব্লকে ব্লকে মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছেন, উদ্দেশ্য একটাই হাথরাস কাণ্ডে এবং দলিতদের ওপর বিজেপির অত্যাচারের প্রতিবাদ। সেই ঘোষণা মত, আগামী কাল, রবিবার থেকে ১৭’ই অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বলেছেন। তাঁর নির্দেশে তিনি জানিয়েছেন, ‘‌সব দলিত গ্রাম, আদিবাসী গ্রামে গিয়ে বিজেপি দলিতদের ওপর কীরকম অত্যাচার করে সেটা বলতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় পোস্টারিং করে প্রতিবাদ জানাতে হবে। পোস্টার হাতে এই প্রতিবাদ মিছিল ব্লকে ব্লকে চলবে। দলের মহিলা কর্মী, যুব কর্মী, ছাত্রসমাজ, সংখ্যালঘু, দলিত সম্প্রদায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।’‌

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এছাড়াও অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি নির্বাচনের আগে বড় বড় কথা বলছে, কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্যকে “আবৃত” করে রেখেছে। “নির্বাচনের সময় বিজেপি নেতারা একটি দলিত বাড়িতে যান, বাইরে থেকে খাবার পান, খেয়ে থাকেন এবং দাবি করেন যে তারা একটি দলিত বাড়িতে খেয়েছেন। নির্বাচনের পর তারা দলিতদের উপর অত্যাচার করবে, তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলবে,” তিনি বলেন।

    “বিজেপি দেশকে লজ্জা দিয়েছে। আমাদের মেয়ের সাথে যা ঘটেছে তার জন্য বিজেপির লজ্জা-লজ্জা। আমি হাথরাস নির্যাতিতার পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে… কমিশন হাথরাসে এসেছিল, কিন্তু দিল্লি দাঙ্গার পর কয়টা কমিশন এসেছে?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন যে সংখ্যালঘু কল্যাণ নিয়ে কথা বলার যে কোন প্রচেষ্টাকে “মুসলিম সন্তুষ্টি” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। “আপনি (বিজেপি) কে সার্টিফিকেট (অনুমোদন) দেবেন? আপনি মুম্বাইয়ে নাটক দেখেছেন (সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে)। আমরা দলিতদের জন্য ন্যায়বিচার চাই, নাটক নয়,” তিনি বলেন।

    বিজেপির অধীনে দেশে গণতন্ত্র নেই, কিন্তু একটি “একনায়কতন্ত্র” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে ভারত “রাষ্ট্রপতি শাসন” এর দিকে যাচ্ছে, এবং দেশের সবচেয়ে বড় “মহা পুরুষ নেতাজি বা গান্ধী বা আম্বেদকর বা ঠাকুর বা ভগৎ সিং নয়, বিজেপি”।

    পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধর্ষণের তথ্য না পাওয়া নিয়ে বিজেপির বিদ্রুপের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান সংসদে অভিবাসী ও কৃষক মৃত্যুর বিষয়ে কেন্দ্রের প্রতি “কোন তথ্য” প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

    “বিজেপি দেশের ভবিষ্যৎ নয়। তারা পরাজিত হবে,” তিনি আরও বলেন যে বিজেপি নির্বাচনী লাভের জন্য জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দেয়, কিন্তু পরে “রেলওয়ে, এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি” করে দেয়।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারের সন্তানদের পাশে দাঁড়ালেন ভীরু।

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো :ওড়িশার মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় শোকাহত সমগ্র বিশ্ব। টুইটার - ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদ থেকে ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বরা।

    নতুন জার্সিতে নিজেকে রাজা মনে হবে : বিরাট কোহলি

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : সম্প্রতি ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দলের জার্সি ও অন্যান্য সরঞ্জামের দায়িত্ব নিয়েছে...

    করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ! বিপদগ্রস্ত যাত্রীদের জন্য হেল্পলাইন চালু করল রেল

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা চালু করা হল হেল্প লাইন নম্বর। হাওড়া ডিভিশনের যাত্রীদের জন্য 033 2638...

    ‘আধা-চাঁদ’-এর খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : 'আধা-চাঁদ'-এর খোঁজ পেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। আদতে এটি একটি গ্রহাণু। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু আসলে এটি...

    ভয়াবহ দুর্ঘটনায় করমন্ডল এক্সপ্রেস। মৃত্যু শতাধিক।

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো :উড়িষ্যার বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুত করমন্ডল এক্সপ্রেস মৃত অন্তত ১০০। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উদ্ধার...