দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: মহানগরীর মুকুটে নতুন পালক। দেশের মধ্যে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহরের খেতাব পেল তিলোত্তমা কলকাতা।জানাচ্ছে সরকারি রিপোর্ট। ২০১৯ এর নিরিখে ২০২০ -র ফল ভালো। তবে নিরাপত্তা গননায় প্রথম সারির স্হান অর্জন না করলেও দ্বিতীয় স্হান অর্জন করেছে এই তিলোত্তমা মহানগরী। শুধু প্রশাসনিক সতর্কতা নয়, এর কৃতিত্ব এখানকার বাসিন্দাদেরও প্রাপ্য। যাঁরা শহরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।আর তাই
কলকাতা পুলিশের কর্তাদের কাছে ‘দ্বিতীয়’ হওয়ার সাফল্যও অনেকটাই আনন্দ বয়ে এনেছে।
‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরো’ (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট বলছে যে, ‘২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮-য় সার্বিক ভাবে অপরাধ কমেছে কলকাতায়। খুন, ডাকাতি বা ধর্ষণের ঘটনা কমলেও নারীদের উপরে হওয়া অপরাধের সংখ্যা কিন্তু বেড়েছে। ‘নিরাপদ’ শহরের বিচারে কলকাতাকে সামান্য টেক্কা দিয়ে প্রথম স্হান অর্জন করেছে কোয়ম্বত্তূর। তবে মাস কয়েক আগে বেরোনো ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সময়ে প্রথম স্থানে ছিল কলকাতা।
আর পাঁচটা শহরের থেকে নারী নিরাপত্তায় চিরকাল এগিয়ে আমাদের কোলকাতা।
NCRB–এর দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘কোলকাতা মহিলাদের জন্য নিরাপদতম শহর হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অর্থাৎ এই শহরে নারী হেনস্থার সংখ্যা সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে সরকারি রিপোর্টই।
দেশের ১৯টি মেট্রো শহরের মধ্যে কলকাতায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা সবচেয়ে কম জানিয়েছে রিপোর্ট। এমনকী কোলকাতা শহরে, ধর্ষণ বা হেনস্থার ঘটনার কোনও পুলিশ কেস হয়নি’। NCRB–এর দেওয়া আরোও তথ্য অনুযায়ী দেখা গিয়েছে যে, এই শহরে শিশু কন্যা নির্যাতনের ঘটনা একটিও ঘটেনি। মেট্রো অধীনস্থ শহরগুলির মধ্যে পরিসংখ্যান অনুযায়ী কলকাতাকে একেবারে নিরাপদতম শহর হিসাবে তুলে ধরেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে কলকাতা শহরে মাত্র ১৪টি হেনস্থার অভিযোগ জমা পড়েছে। যা বাকি সমস্ত মেট্রো শহরের সংখ্যার তুলনায় কম। তবে এই রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর শহরে একটিও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।
তবে কলকাতা শহর অবশ্য কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন রয়েছে। মহিলাদের সঙ্গে ঘটা নানান অপরাধের সংখ্যার পরিমাণটাও ক্রমাগত বেড়েছে। যেমন: গত বছরই শহরের রাজপথে নিগৃহীত হয়েছেন তরুণী মডেল। এছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বহু ঘটনায় অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগও উঠেছে।
এদিকে NCRB–এর তথ্যেই দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে ৫৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালে। যদিও তালিকায় শীর্ষে আছে দিল্লি, সেখানে নারী হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে ১২৩১টি। রাজস্থান রাজ্য হিসাবে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে সুরক্ষাহীন শহর হিসাবে উঠে এসেছে। সেখানে ১৮ হাজার গার্হস্থ্য হিংসার হিসাব এসেছে রিপোর্টে। এছাড়া জানা গিয়েছে যে, ২০১৬ সাল থেকেই ধীরে ধীরে অপরাধ কমছে। আর তাতে সক্ষম হয়েছে লালবাজার।
২০১৬ সালে কলকাতায় অপরাধের মোট সংখ্যা ছিল ২২৫১৯টি। পরের বছর তা কমে হয় ১৯৯২৫। ২০১৮ সালে তা হয়েছে ১৯৬৮২। তবে এই রিপোর্ট নিয়ে ধন্দ রয়েছে অনেক। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ (বিশেষ করে কলকাতা শহর), অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় ও সিকিমে অপরাধের পরিসংখ্যান চূড়ান্ত নয়। তবে নারী সুরক্ষায় শুধু প্রসাশন নয়, যাঁরা শহরকে আপ্রাণ চেষ্টায় নিরাপত্তা দিয়ে বারবার এগিয়ে এসেছেন, শুধুমাত্র তাদের চেষ্টাতেই কলকাতা শহর আজ নারী নিরাপত্তায় শ্রেষ্টতম এক উদাহরণ তৈরি করেছে।