দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পুজো শুরুর আর মাত্র কয়েকটা দিন। তবে নিউনর্মালে এবারের পূজোয় থাকছে নানান বিধি নিষেধ। আর সেসব মেনেই বাঙালী মেতেছেন তাঁদের সবচেয়ে বড়ো পুজোর আনন্দে। প্যান্ডেলও তৈরী। ইতিমধ্যে উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে বেশকিছু পুজো মণ্ডপের। এমনই এক থিমের পূজো, বেহালার বড়িশা ক্লাবের। তাদের বিষয় ভাবনায় প্রকাশ পেয়েছে বাস্তব পরিযায়ী দুর্গা -র আগমন।
এবছরে বেহালার বড়িশা ক্লাবের থিম, “মারির দেশে, ত্রাণের বেশে/ অন্নপূর্ণার ভেলায় ভেসে”।এবছর করোনার জেরে ক্ষতিগ্রস্থ পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্মান জানাতেই, এমন ভাবনা পূজা কমিটির। অদম্য ইচ্ছা এবং সাহসের জেরে বেহালার বড়িশাল ক্লাব তাঁদের এই ভাবনাকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। থিম ভাবনা, এবং শিল্প সৌন্দর্যের মাধুরতায়, পূজোর আগেই বেশ প্রশংসায় দর্শকের মন কেড়েছে এই ক্লাব।
কার্যত করোনার জেরে কাজ হারিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পেটের জ্বালা আর সহ্য করতে পারছেন না পরিযায়ীরা। তাই কাজের জন্য ছোটাছুটি করছেন শ্রমিকরা।করোনাকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা আমরা শুনেছি। কাজ হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।বাড়ি ফেরার অন্য কোনো উপায় নেই। তাই নিজেদের পা -কেই একমাত্র সম্বল করে হেঁটে মাইলের পর মাইল তাঁরা পথ অতিক্রম করেছেন।পথ অতিক্রমে খাওয়া-দাওয়া তো দূরহস্ত সামান্য তেষ্টা মেটানোর জলটুকুও পর্যন্ত পাননি তাঁরা। সামান্য জিরোনোর জন্য যে আশ্রয় টুকু পেয়েছিলেন রেললাইনে, সেখানেও রেলগাড়ির চাকা এসে কেঁটে ফালা ফালা করে দিল তাঁদের অসহায় শরীরকে।


এক সাধারন নারীর মধ্যেই থাকে এক অসাধারন শক্তি। আর সেই শক্তির জেরেই অতিমারী’র সময়ে বাঁচার তাগিদে এক মা তাঁর অবুঝ ছোট্ট শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মাইলের পর মাইল হেঁটে। বাঁচার তাগিদে। কারন তিনি যে মা। অক্লান্ত হাঁটার পর বিশ্রামের তাগিদে রেললাইনের ওপরে শুয়ে পড়েছিলেন, ঠিক সময়েই কাটা পড়ে সেই মায়ের দেহ। স্টেশন চত্বরে বহুল সেই মৃত্যদেহের মাঝে পড়েছিল সেই মায়ের মৃতদেহ।
মায়ের মৃতদেহের পাশেই ছিল তার ছোট্ট ছেলেটি। যে অধীর খেলায় মত্ত। মা-ছেলের সেই লুকোচুরির খেলায় মেতে ছিল অবুঝ নাবালক শিশুটি।কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি উপর মহলের।তাঁদের দিকে ফিরেও পর্যন্ত তাঁকাননি কেউ। বরং নতুন এক পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন তাঁরা, নাম তাঁদের পরিযায়ী শ্রমিক।পরিযায়ী শ্রমিকের এই গল্প আমাদের সকলেরই জানা।


আর তাই তাঁদের সন্মান জানাতে দূর্গার দশভূজা রূপের বদলে দলিতরুপী মা-কেই পুজোর আসনে নিয়ে আসলেন বেহালার বড়িশা ক্লাব।ইতিমধ্যেই সে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়তেই তা ভাইরাল হয়। সাধারন মানুষ কুর্নিশ জানিয়েছেন পুজোর থিম সহ শিল্পীকে।
শিল্পী রিন্টু দাস জানিয়েছেন, মা প্রখর রোদ, খিদে, কষ্টকে সাথে নিয়েও সন্তানের জন্য খাবার, ত্রাণ খোঁজেন,সেই মাতৃ মূর্তিকেই মা দুর্গার মূর্তিতে রূপ দেওয়া হয়েছে। বাস্তবের ‘দুর্গা’কে অনেক অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়, লকডাউনের সময় বহু স্থানে শুধু মাত্র কাজ হারানোই নয়, গার্হস্থ্য হিংসার বহু ঘটনা উঠে আসে। নারী শক্তির জাগরণ অবশ্যই জরুরি, অতি সাধারণ নারীর মধ্যেও যে দেবীশক্তি নিহিত থাকে, সেই রূপকেই তুলে ধরেছে এই ক্লাবের পুজো। বাস্তবের এই দুর্গা প্রতিমার অঙ্গের রূপ তাই গৌরবর্ণ না করে মৃত্তিকার রঙে করা হয়েছে।