30 C
Kolkata
Thursday, June 8, 2023
More

    প্যান্ডেলে করুণাময়ী : করোনার ভোটে কাড়াকাড়ি, দূরত্বে দেবতা- দেবারুণ রায়

    বুধবার আদালতের রায়ে  প্রায় সবাই রাজা। পুজোওয়ালারা হাইকোর্টের পয়লা রায়ে পড়ি মরি নোএন্ট্রির বোর্ডের অর্ডার দিয়েছিলেন।  সঙ্গে  সাজসজ্জার ব্যারিকেড।  একে পয়সায় টান পড়েছে  করোনাকারণে, তায় আবার গোদের গোড়ায় বিষফোঁড়া ফেটেছে । একটা বচ্ছরকার দিন বলে কথা। তাই মায়ের নাম করে আগে উকিল খোঁজার পালা। এবার তো ভোগ বিতরণ , ফলপ্রসাদ বিলি  আর পঙক্তিভোজের পাটাপাট নেই।  কিন্তু সাশ্রয় কোথায় ? 

    সাশ্রুনয়নে উকিলের প্রণামী জোগাড় করতেই চক্ষু চড়কগাছ !  একে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের ব্যবহারজীবী তার ওপরে ডাকাবুকো নেতা।  সুতরাং সম্মান দক্ষিণা জোগানো ,পুজো কমিটির কষ্টকল্পনা। তবু ভগবানের, মানে  আম জনতার বকলমে কমিটির কর্তাদের  ভাগ্য যখন উকিলবাবুর হাতে তখন তাঁর  ফুল বেলপাতা, আর কিছু ধোয়া তুলসীপাতার ব্যবস্থা তো আগে রাখতেই হবে। যদিও  পুজোর হাল যা হবে তার ওপরই নির্ভর করবে পুজো কমিটির কর্তাকুলের চাল। পুজোর দায়ে কুঁজো হওয়ার জোগাড় সেক্রেটারি প্রেসিডেন্টের।  ঠিকঠাক পুজো না হলে, মায়ের কোপে নয় , মহিষাসুরের গুঁতোয় দাদার গদি টলবে। মানে কমিটির দাদাদের।  মুখিয়ে আছে অপোজিশন। 

    বড়দা ফেল করলেই  মেজদা ছোড়দা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। রাজনীতিতেও তাই। একেবারে স্যানিটাইজারে ধোয়া  হাত গুটিয়ে রেডি হয়ে  আছেন । বং পুজো কমিটি মানেই  লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব গুলে খাওয়া একেকজন লড়াকু।  কমিটি তো ছোটদের স্টেট। এই থেকেই তো রাজনীতির পাঠ। রংবেরঙের দাদারা রাজনীতিতে এতো রঙ ছড়ানো শিখলেন কীকরে ? প্রত্যেকেই যে  এক এক চত্বরের জায়েন্ট কমিটির জ্যাঠামশাই। ডানপন্থীরা পথ্যে ,মানে  প্রকাশ্যে।  আর বামেরা নেপথ্যে।  আগে বাম পড়ে  ডান  যাঁরা তাদেরই তো যত শান। পুজোর জাঁক আর করোনার কল নিয়ে কূটকচালির শুরুতেই তো এল শ্রীভূমি। এককালে পাতিপুকুরের পেছনে পড়ে ছিল , এখন কালীঘাটের পালের হাওয়া কেড়েছেন শ্রীভূমির সালংকারা মা। ওদিকে ম্যান্ডেভিলের কালারফুল কারুকার্যের শান আর মান যাঁর হাতে  তিনি  আরও অনেক বড় নেতা।  কলকাতাতেই রাজনীতির আর জীবনের  ৫০ বছর পাত করেছেন। সোজা সাপ্টা কথায় খ্যাতিমান তিনি  কিন্তু আসল কথাটা বলেই দিলেন।  আদালত নোএন্ট্রির নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যদি ঢুকতে চায়, উৎসবের দিনে তাদের আটকানো যাবে না।

    কিন্তু আদালত আছে আদালতেই। সেটাই থাকলে আর কোনও দুঃখ থাকে না জনগণের ফাটা কপালে। একটা নতুন শব্দের নিপাতনে সিদ্ধ সংযোজন হল এবার বাঙালির অভিধানে। “উৎশব ।” উৎসবের  প্রাণখোলা ও মাস্ক এবং গ্লাভস খোলা  হুল্লোড়  শবের মিছিল বের করবে নাতো ? সাবধানবাণী ! তবলিগি জামাতিরা মসজিদে মাতোয়ারা হয়েছিল সংক্রমণে। তারপর জ্ঞানে অজ্ঞানে সারাদেশ যেন  সংঘং শরণং গচ্ছামি ! গদি যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ। আর এখন দুর্গতিহারিণীর নামে প্যান্ডেল খাটিয়ে দুর্গতিকারিনী করোনার পুজোয় তাদের তত্ত্বকথা গেল  কোথায় ?

    সবসময়ই উলটো অভিযোগের কাদা ছেটানো হয় সেকুলারিজম বিধৃত পূণ্যশ্লোক সংবিধানে।  যেন  পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর শব্দ ধর্মনিরপেক্ষতা । প্রচারের দাঁতে এত বিষ যে সেই দংশনের নেশায় কাণ্ডজ্ঞান যুক্তি বুদ্ধি  বিবেকের স্বঘোষিত  মোরেটরিয়াম। আগে পুজোটা হোক।  তারপর না হয় ফের  লম্বা লকডাউন হবে। যখন কেউ  ধর্মের কাহিনি শোনেনা  তখনই আদালতের “পরিত্রাণায় সাধুনাম…..” রায়। এবং এখানেও মেরুকরণ।  তবে এই মেরুকরণের রঙ একটু ঘোলাটে। পুজোর প্রশস্ত মণ্ডপে শরতের সেই বিশুদ্ধ নীলাকাশ নেই। মনের রং চটেছে। একপাশে বিকাশ আর অন্যপাশে কল্যাণের কোলাহলে অন্য বঙ্গ , অন্য রঙ্গ , অন্য জনতরঙ্গ। আদালতের নির্দেশের পর সোশ্যাল মিডিয়ার সোশ্যালিস্টরা খিস্তি করছেন  বিকাশ ভট্টাচার্যকে। যেন সংবিধানের কথা বলে তিনি গোহত্যা করেছেন। গোমাংস নিয়ে প্রায় তাঁর মাংস ছিঁড়ে খাওয়ার জোগাড়।  অথচ এই ভক্তদলের গুরুভক্তি গোভক্ষক ট্রাম্পের প্রতি। ট্রাম্প মন্দির হল বলে।

    এদিকে যারা অযোধ্যার রাম মন্দিরে ক’দিন আগেই নাকমুখ খোলা সাধুদের সঙ্গে উঠবোস করলেন তাঁরা এখন বিশ্রী ধর্ম সংকটে। লকডাউনের গোড়ায় প্রথম নিয়মভঙ্গ  অযোধ্যার পরিক্রমায়।  যোগী  হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।  বটেই তো। যোগী সায়েব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী,  গোরক্ষপুরের মহন্তজি। তাঁর ফরমান কাঁপাল বিজেপিকেই। ওঁর রাজ্যে  নবরাত্রি তে রামলীলা চলবে , কিন্তু  হবেনা  দুর্গাপুজোর আয়োজন। কিন্তু বিজেপির বঙ্গ চ্যাপ্টার মুখে আঙুল গুঁজে থাকলেও রাজ্যসভার বিজেপি সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত ঝেড়ে  চিঠি লিখলেন।  বিজেপি এস্টাব্লিশমেন্টের শীর্ষ পুরুষের সংকেতে যোগী আদিত্যনাথ ঢোঁক গিললেন। দুর্গাপুজোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেন  এবং একে পুজো তায় আবার  যোগীরাজ্যে কুঁজো হয়ে যাওয়া  বিজেপির ক্লিপ  কোং  চাপা  আনন্দ গলায় ,” ইদ হবে পুজো  হবে না”  বলে গুঞ্জনের বোধন করে দিল এবং বিপরীত মুখী চোরা স্রোত পায়ের তলায় বুঝেই  হার্টবিট বেড়ে গেল নবান্নের। কী হবে দেশের করোনার নামে প্যান্ডেল আর হিন্দু ভোটের হ্যান্ডেল যদি লক হয় ! 

    ওদিকে,  প্রধানমন্ত্রীর মহাষষ্ঠীর ভাষণ  কাঁসর ঘন্টার নামে থালি তালি বাজানোর মতো আরেকবার চমকে দেবে ভাবতে ভাবতেই দেখা গেল নবরাত্রির সময় বা কাছে দূরে অন্য উৎসবের নাম করে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানালেও দুর্গাপুজোর নামোচ্চারণ করেননি । আশা,  তিনভরিয়ে দেবেন নাকি দুহাতে।  আর যদি মোদী নাও বলেন তাঁর ভক্তরা থালি তালি বাজাতে বাজাতে  মোদী মোদী মোদী মোদী  করবেন এমনই ছন্দে  আনন্দে ।  কান থেকে মনে , মন থেকে  শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিটি  লোহিতকণিকায়  যেন সব মণ্ডপের ভোরের ভৈরবী আর সাঁঝের আজান থেমে যায়। হাইকোর্টে  রিভিউ পিটিশনের রায় নিঃশ্বাসের বাতাস বাড়িয়েছে পুজোকর্তাদের। ভাইরাসের রাশ টানতে সতর্ক করেছে তাদের। এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে কল্যাণ হবে বলে মনে করেনি। এমতাবস্থায় দেবতার ভাগ্যে কী আছে জানেন শুধু  গণদেবতা!

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    কোচ হতে চলেছেন ‘কলকাতার মহারাজ’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : ১৪ ম্যাচে মাত্র পাঁচটি জয়। ১০ পয়েন্ট নিয়ে নয় নম্বরে শেষ করেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। তখনই দেওয়াল লিখন...

    ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা নিবেদন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ।

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল বালেশ্বরে হওয়া ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাক্তিদের উদ্দেশে...

    অভিষেকের বিরুদ্ধে পোস্টার খোদ সিঙ্গুরেই ।

    দ্য কালকাটা মিরর ব্যুরো : এবার অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়লো তৃণমূল কংগ্রেসের ভিত্তিভূমি খোদ সিঙ্গুরের । ' চোর ডাকাতের যুবরাজ নট...

    ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রকে তলব কোলকাতা হাইকোর্টের ।

    দ্য কালকাটা মিরর ব্যুরো : ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য তরজা লেগেই ছিলো । একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির পর কোলকাতা...

    মেসি কি ফিরছেন বার্সাতেই?

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পিএসজির হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। হার দিয়েই শেষ তাঁর পিএসজি অধ্যায়। বিদ্রুপের মুখেও পড়তে হয়েছে...