দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: শনিবাৱ দুর্গাপুর ব্যারেজের লকগেট ভেঙে যাওয়ায় বিপর্যস্ত শিল্পনগরী দুর্গাপুরের সঙ্গে বাঁকুড়ার বড়জোড়া মেজিয়া শিল্পাঞ্চল ও বাঁকুড়া ১ ও ২ নম্বর ব্লক। আজ ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। পানীয় এবং কলকারখানায় জল সংকট শুরু হয়ে গেছে।শনিবার ভোরে লকগেট ভেঙে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল হুহু করে বেরিয়ে গেছে।
যদিও আজ দুপুরের থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজের ভেঙ্গে যাওয়া লকগেট মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে তবুও ৩৭-৩৮ ঘণ্টা যে গরমসি দেহ গিয়েছে তা নিয়ে বিরোধীরা যেমন সরাসরি রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তেমনি রাজ্য সেচ দফতরের যে গাফিলতি রয়েছে তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন শাসক দলের নেতারাও।
রবিবার ৩১ নম্বর লকগেট সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন প্রযুক্তিবিদরা। বালির বস্তা দিয়ে নদীর ঝরনা আটকে এই কাজ শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক কর্তারা কাজের তদারকি করতে ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন। ঘটনাস্থলে রয়েছেন ডিভিসির আধিকারিকরাও।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রবীর চাঁদ বলেন, কাজ শেষ হলেই ডিভিসি আপার ভ্যালির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু করবে। কিন্তু ২০১৭ সালে ১ নং লক গেট ভেঙে পড়ায় ৫ দিন সময় লেগেছিল। এবার দু’দিনের বেশি সময় লাগলে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া পৌর এলাকা সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে পানীয় জল সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বড়জোড়ার বাম বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, “ব্যারেজ জল শূন্য হয়ে পড়ায় প্রশাসনিক কর্তারা দুর্গাপুরের জল সংকট নিয়ে যতটা মাথা ঘামাচ্ছেন বাঁকুড়া জেলাকে নিয়ে ততটা তত্পরতা দেখাচ্ছেন না। অথচ বাঁকুড়ার নিজস্ব সম্পদ এই দামোদরের জলে জেলার কয়েক লাখ মানুষ নির্ভরশীল। এখানের জল নিয়ে মেজিয়া বিদ্যুত্ প্রকল্প সহ শিল্পাঞ্চলের ৭০ – ৮০ টি কারখানাও নিৰ্ভরশীল। আমি জেলা প্রশাসনকে বলেছি জেলার কোনও মানুষ যেন জল সংকটের সমস্যায় না পড়েন সে বিষয়টি দেখার জন্য।”
এদিকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দামোদরের লকগেট মেরামতের কাজ ঠিক করে জল সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের বিদ্যুত্ উত্পাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু মেজিয়া বিদ্যুত্ প্রকল্পেই নয় বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা ডিভিসির দুর্গাপুর স্টিল থার্মাল পাওয়ার স্টেশনেও। এই দুই বিদ্যুত্ প্রকল্পের উত্পাদন ক্ষমতা তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ফলে ৪৮ ঘন্টার পর জল সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দেশের যে সব এলাকায় ডিভিসি বিদ্যুত্-এর যোগান দেয় সেখানে ঘাটতি দেখা দেবে।
মেজিয়া বিদ্যুত্ প্রকল্পের ডিজিএম প্রবীর চাঁদ বলেন, এমটিপিএসে যে দুটি রিজার্ভার রয়েছে তার জলধারন ক্ষমতা ১৫ লক্ষ কিউবিক মিটার । শনিবার দুপুর পর্যন্ত যতটা সম্ভব ইনটেক পাম্প হাউস থেকে জল ভরে নেওয়া হয়েছে। তাতে দুদিনের মত জল মজুত রয়েছে। এখানে ৮ টি ইউনিট চালাতে দৈনিক দেড় লাখ কিউবিক মিটার জল প্রয়োজন। এছাড়াও ডিভিসির আবাসনে পানীয় জলের সরবরাহ করতে হয়। আমরা মাইকিং করে জল খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি। তিনি বলেন, শুনেছি লক গেট মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।