দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: দুর্গাপুর ব্যারেজের ৩১ নম্বর লকগেট ভাঙার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও শুরু করা যায়নি ব্যারেজের মেরামতির কাজ। কারণ, এখনও বাঁধের জল সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। তাছাড়া পাঁকজনিত সমস্যায় বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ দেওয়ার কাজ শেষ করা যায়নি। আর এই কারণেই এখনও মেরামতির কাজ শুরু করা যায়নি। বাঁধ মেরামত করতে দেরি হওয়ার কারণে তীব্র জলসংকটে পড়েছেন শিল্পশহরের বাসিন্দারা।
লকগেট ভেঙে যাওয়ার পরে প্রথমে জল কমিয়ে তারপর বালির বস্তা দিয়ে জলের গতিপথ অন্যদিকে ঘুরিয়ে লকগেট মেরামতির কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সেচ দফতরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু রবিবারের আগে সেই কাজ শুরু করা যায়নি। বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু হলেও জলের গতি বেশি থাকায় ও পাঁক থাকায় তাতে সমস্যা হচ্ছিল। সোমবারও সেই সমস্যা অব্যাহত। ব্যারেজ পুরোপুরি জলশূন্য না হলে মেরামতির কাজ শুরু করা যাবে না বলেই জানিয়েছেন সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। আর তাই পাঁক সরানোর জন্য রবিবার বিকেল থেকেই তিনটে জেসিবি মেশিনকে কাজে লাগানো হয়েছে। সেই মেশিনের সাহায্য পাঁক তুলে ফেলা হচ্ছে।


বালির বস্তা ফেলার কাজে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থা জানিয়েছে কাজের সমস্যার জন্যই দেরি হচ্ছে। তবে সোমবার সকাল থেকে কাজে গতি এসেছে। যাতে আরও তাড়াতাড়ি কাজ করা যায় তার জন্য সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ব্যারেজের উপর দিয়ে সব যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সোমবার সারাদিনে জল বেরিয়ে যাওয়ার পর ও বালির বস্তা দেওয়ার কাজ শেষ হলে লকগেট মেরামত করা সম্ভব হবে। অর্থাত্ মঙ্গলবার সকাল থেকে লকগেট মেরামতির কাজ শুরু করতে পারা যাবে বলেই আশা করছেন তাঁরা।
এদিকে দুর্গাপুর ও সংলগ্ন বাঁকুড়ার বাসিন্দারা জলসংকটে ভুগতে শুরু করেছেন। রবিবার একবেলা জল সরবরাহ করা হয়েছিল দুর্গাপুরে। কিন্তু রবিবার বিকেলের পর থেকে আর জল আসেনি। বাসিন্দারা আগে থেকে জল মজুত করে রেখেছিলেন বটে। কিন্তু তাতে কতদিন চলবে। ফলে সোমবার থেকেই দুর্গাপুরে জলের সংকট শুরু হয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায় তার জন্য দুর্গাপুর নগর নিগমের ট্যাঙ্কারে করে পানীয় জল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও লম্বা লাইন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও প্রয়োজনীয়তা মিটছে না বলেই জানিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
সমস্যা হয়েছে সংলগ্ন বাঁকুড়ার বড়জোড়া এলাকাতেও। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে কলকাতা থেকে জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে বলে খবর। বাসিন্দাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। শনিবার সকালে এই লকগেট ভাঙার পরে তার প্রভাব মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রে বিদ্যুত্ উত্পাদনে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা। কারণ, এই ব্যারেজ থেকেই জল যায় মেজিয়াতে। লকগেট ভাঙার পরেই জলের যোগান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেজিয়ার নিজস্ব জলাধারে যে জল মজুত আছে তাতে দু’দিন বিদ্যুত্ উত্পাদন সম্ভব বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাই যদি তাড়াতাড়ি সেখানে জলের যোগান দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে বিদ্যুত্ উত্পাদনে প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর মেজিয়াতে বিদ্যুত্ উত্পাদন বন্ধ হলে জল সমস্যার পাশাপাশি বিদ্যুত্ সমস্যাও তীব্র হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।