দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গত শনিবার দুর্গাপুর ব্যারেজের ৩১ নং লক গেট ভেঙে ফের পানীয় জল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়া শিল্প ও শহরাঞ্চল। অন্যদিকে দুর্গাপুর ব্যারেজের লক গেট ভাঙার জেরে অচলাবস্থা অব্যাহত মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রে। নির্জলা হওয়ার আশঙ্কায় দু হাজার কর্মী পরিবার। পাওয়ারপ্ল্যান্ট এর ডোমেস্টিক অঞ্চলে জল সঙ্কট কমাতে ইতিমধ্যেই উত্পাদন বন্ধ করা হয়েছিল মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের একটি ইউনিটে। জল সরবরাহ কমানো হয়েছে অন্যান্য খাতেও। নির্জলা দিন কাটানোর আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় দু হাজার কর্মী ও আধিকারিকদের পরিবারের সকলেই।
প্রসঙ্গত, মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমান জল প্রয়োজন হয়। বিপুল জল লাগে বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রায় দু হাজার কর্মী ও আধিকারিকদের পরিবারেও। এছাড়াও বিদ্যুত্ কেন্দ্রের বাগান ও স্টেডিয়াম সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনেও প্রতিদিন বিপুল পরিমান জল খরচ হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রে দৈনিক জলের চাহিদা প্রায় দেড় লক্ষ কিউবিক মিটার। জলের বিকল্প কোনো উত্স না থাকায় এই জলের জন্য মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় দুর্গাপুর ব্যারেজের উপরই।
গত শনিবার দুর্গাপুর ব্যারেজের ৩১ নম্বর লকগেট ভেঙে যাওয়ায় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় মেজিয়া তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের। কেন্দ্রের নিজস্ব রিজার্ভারে যে জল ছিল তা দিয়ে শনি, রবিবার বিদ্যুত্ উত্পাদন অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু এরপর, জলাভাবের কারণে বাধ্য হয়ে ৮ নম্বর ইউনিটে বিদ্যুত্ উত্পাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, কর্মী আবাসনে জল ব্যবহার কমানোর আবেদন জানিয়ে মাইকিংও করা হয়। কর্মী আবাসনে দৈনিক যেখানে তিনবার জল দেওয়া হত সেখানে দুবার জল দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি কমানো হয় জল সরবরাহের সময়সীমাও। আর তার ফলে কার্যত নির্জলা দিন কাটানোর আশঙ্কা তাড়া করতে শুরু করেছে কর্মী আবাসনের বাসিন্দাদের। আর এবার, জলের অভাবে বন্ধ হয়ে গেল ২৩৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট। জলের খরচ কমাতে সোমবার রাত আটটা নাগাদই বন্ধ করে দেওয়া হয় মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৮ নম্বর ইউনিটটি। এরপর মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ বন্ধ করে দেওয়া হয় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৭ নম্বর ইউনিটটিও।
এর ফলে মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের বর্তমানে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা নেমে দাঁড়ালো ১৩৪০ মেগাওয়াটে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে জলের যোগান এর বিষয়ে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তাদের নির্দেশ পেলেই আবারও বন্ধ হতে পারে আরও বেশ কয়েকটি ইউনিট। ফলে বিদ্যুতের যোগান কিভাবে আসবে সেই নিয়েই শুরু হয়েছে মাথাব্যথা।
ইতিমধ্যেই, মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ইউনিট গুলিতে জলের যোগান এর পাশাপাশি এই ১৫ লক্ষ কিউবিক মিটার নিজস্ব জলের ট্রাঙ্ক থেকে মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের কর্মীদের আবাসনের জল সরবরাহ করা হয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই পানীয় জলের যোগান দিতে আগামী দিনে মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমনটাও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে মেজিয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত্ গ্রহণ করা সংস্থাগুলি সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুত্ সরবরাহ যে ঘাটতি দেখা দেবে তাও মনে করছেন অনেকেই। সেই সাথে হতে পারে নিরবিচ্ছিন্ন লোডশেডিং ও।