সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই কী দল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবার! “ফিরহাদ হাকিমের রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি…” মেদিনীপুরের দেড় দশকের রাজনীতির মুকুট অর্থাৎ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে । সুতরাং তিনি প্রত্যাঘাতে বেনজির মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, “ছোটলোকদের দিয়ে বলাচ্ছে।” এই প্রাঞ্জল বাংলা জল এনেছে তৃণমূলের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মী সমর্থকদের প্রাণে।
শুধু দুই মেদিনীপুরে নয়। দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র, এমনকি কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে , অ-পদে , কু-পদে ও আপদে বিপদে থাকা অনেক নেতা তাকিয়ে আছেন কাঁথি আর নন্দীগ্রামের দিকে। তাই ওই বিস্কোরক ও বিদ্রোহী মন্তব্যের উত্তরে মৌনতাই পরম ধর্ম সাব্যস্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটাই মিলে যাচ্ছে ১৯৯৯ ও তার কিছু আগের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ অবস্থার সঙ্গে। যখন প্রভাবশালী সোমেন মিত্র নেতা থাকা সত্ত্বেও জনতার কাছে যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন ও তাঁর ক্যারিশমার প্রতি নিবেদন ছিল বেশি।
যার ফলে প্রদেশে প্রণব, বরকত, প্রিয়, সোমেন, সুব্রত প্রমুখ জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির তুখোড় নেতারাও মমতার জনশক্তির জোয়ারে হালে পানি পাননি। বিজেপি তখনও ওঁৎ পেতে ছিল তাদের বন্ধু খোঁজার রণনীতিকে হাতিয়ার করে। সেই নীতি ছিল আডবাণীর। যে রাজ্যে একক শক্তিতে সরকার গড়ার ক্ষমতা নেই বিজেপির, সেখানে বড় দল ভেঙে বেরিয়ে গড়া আঞ্চলিক দল বা অন্য কংগ্রেস বিরোধী শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে-ভোটে-জোটে যাওয়া। এরই ফলিত রূপ এ রাজ্যে ছিল কংগ্রেস ভেঙে বেরনো তৃণমূল।


এই কৌশলের বলেই পা রাখার জায়গির পেল বিজেপি। তাদের অকর্ষিত অলিতে গলিতে গড়া শুরু হল ঘর। তা থেকেই গড় । তৃণমূলেরসেকেন্ড ইন কমান্ড যসবে থেকে বদলে গেল, তখন থেকেই ঠাণ্ডা লড়াই শুরু। এদিকে, বিজেপি বহু আগেই টোপ দিতে শুরু করেছিল বেছে বেছে। এবার সেটা তীব্রতর। বলা হল আরও কত কী। এমনকি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ। কিন্তু চিঁড়ে না ভিজলে কী করা যাবে?
শুভেন্দু অধিকারীর মেদিনীপুরের দলে সবরকম অর্থেই বিজেপির বিরোধীদের সংখ্যা বেশি। তবে দাদার প্রতি নির্ভরতা অসংখ্য কর্মীর। এই অবস্থায় ১০ নভেম্বর বিশেষ সভায় হাজির থাকবেন শুভেন্দু। তারপর ২৭ শে। এই দুই সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু কী বলেন তার ওপরের নির্ভর করছে একুশের ভবিষ্যত। সূত্র বলছেন, দুই মেদিনীপুরের অসংখ্য সংখ্যালঘু সমর্থকদের বাদ দিয়ে কিছু করবেন না শুভেন্দু। কংগ্রেস ছেড়ে আসার সময় যা মমতার লক্ষ্য, কারণ ও সিদ্ধান্তর প্রায় সবটাই হাজির শুভেন্দু অধিকারীর কার্যকারণে।
কংগ্রেসের উৎসমুখকে তিনি কখনও অস্বীকার করবেন না। কারণ বাবা শিশির অধিকারী বিবেকের ভূমিকা নিয়েই হাজির থাকবেন ছেলের সঙ্গে। অতুল্য ঘোষ যাঁর বাড়িরসামনে অবস্থান করে তাঁকে কংগ্রেসে নিয়েছিলেন। এবং যাঁর মতো প্রবীণ প্রাজ্ঞ ও মাটি-মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্কযুক্ত নেতা দলে আর কেউ নেই। বিজেপি চাইলেও অধিকারী পরিবারের এই নেতারা দলে সরাসরি যাবেন সে সম্ভাবনা কম। তার চেয়ে নিজেদের সেকুলার আইডেন্টিটি বজায় রেখে অতীতের মমতা ও আবহমান নীতীশকুমারের মতো আলাদা দল করে প্রয়োজনীয় আঁতাঁত করলে শ্যাম ও কুল দুটোই থাকবে। দরকারে বিজেপির হাত ছেড়ে অন্য হাতও ধরা যাবে।