দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ বাংলা সফরে রাতেই কলকাতা পৌঁছচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী কাল তিনি বাঁকুড়ার দলিত ও এর পর বনগাঁর মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাঁদের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। আর তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে বঙ্গরাজনীতির দাবার বোর্ডে ‘বোরে’ উন্নতিসাধন শুরু করলেন শাসকদলের সুপ্রীমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
আজ, বুধবার বিকেলে নবান্ন সভাঘরে মতুয়া-সহ রাজ্যের একাধিক প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে আজ মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ছৌ নাচের শিল্পীদের প্রতিনিধি, বাগদী, বাউড়ি, কীর্তনীয়া সম্প্রদায়েক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবান্নের সভাঘরে বিশেষ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভা নির্বাচন ও বিজেপির চাল ভ্রান্ত করতে প্রান্তিক সমাজের জন্য একগুচ্ছ উপহারের ডলি সাজিয়ে দিলেন আজ। তিনি বৈঠকের শুরুতে জানান, “আজ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে ডেকেছি। তফসিলি ভাইবোনেরা সমাজের জরুরি সদস্য। বিশেষ করে যাদের আজ ডেকেছি, মতুয়া, বাগদী, নমঃশূদ্র, বাউড়ি, দুলে, মাঝি প্রমুখ।” আজ উদ্বাস্তু মানুষদের বিশেষ পাট্টা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আজ জানান, আজ ২৫ হাজার জনকে পাট্টা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও কয়েকলক্ষ পাট্টা দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি কলোনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, “এই পাট্টাগুলো কিন্তু নিঃশর্ত জমির দলিল। আমি কিন্তু এটা নিয়ে প্রথম আন্দোলন করেছিলাম। এটা একটা বড় কাজ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি উদ্বাস্তু মানুষেরা কী প্রচণ্ড সমস্যায় থাকেন। এমন কোনও উদ্বাস্তু কলোনি থাকবে না, যাতে কেউ বেআইনি বলতেনা পারে। আমরা সব আইনি করে দিচ্ছি। আপনাদের আর কোনও প্রবলেম হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী আজ আরও জানান যে, সরকার একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এসসি, এসটি, ওবিসি পরিবারের সমস্ত সদস্যরাই সার্টিফিকেট পাবেন। সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট এর অনেক নিয়ম আছে, এই কাগজ আনো ওই কাগজ আনো। অনেক সমস্যা হয় তাতে। সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট এর নিয়ম তাই রাজ্য গুলোকেও করতে হত। আমরা এবার নতুন নিয়ম এনেছি এসসি, এসটি, ওবিসি ফ্যামিলিতে একজন কেউ থাকলে সেই ফ্যামিলির সবাই সার্টিফিকেট পাবে। এর পাশাপাশি তিনি জানান, বেশ কিছু কমিউনিটিকে স্বাস্থ্যসাথী আওতায় আনা হবে।
এর পরে মতুয়াদের নিয়ে আলাদা করে কথা বলেন, “বড়মা যতদিন বেঁচে ছিলেন একরকম ছিল, এখন তো অনেকে উড়ে এসে জুড়ে বসছে। মতুয়াদের বাড়ি আমি প্রথম যাই। মতুয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ড করি, সব কিন্তু আমি আসার পরে করা। ওই বোর্ডের জন্য টাকার বাজেট আমরা রাখলাম। মতুয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ডের জন্য ১০ কোটি টাকা আপাতত দিচ্ছি।”
আজ মুখ্যমন্ত্রী বাউড়িদের নিয়েও আলাদা করে বলেন, এঁদের কথা কেউ চিন্তা করেনি। ভোটের সময় সবাই বড় বড় কথা বলে বলে দাবি করেন তিনি। জানান, বাউড়ি বা বাগদী- প্রত্যেকটা প্রান্তিক সমাজের জন্য কালচারাল বোর্ড তৈরি করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাও কিন্তু কেউ বাউড়ি কেউ অন্য সমাজের। তাতে কী। আমি সমাজের অনেককে নিয়ে আসি, মানুষ করি, বড় করি, তাঁদের বিয়েও দিয়ে দিই।”
পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, তফসিলি পরিবারগুলো কিন্তু ১ হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছে। বাংলার আবাস যোজনার আওতায় নিয়ে আসার ভাবনাও রয়েছে তাঁদের নিয়ে। জানালেন, বাংলায় তৈরি হবে কীর্তন অ্যাকাডেমি। ছৌনাচের শিল্পীদের মহড়ার জন্য বিশেষ কমিউনিটি হলের কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান ২ লক্ষ যুবক স্বনির্ভর হওয়ার জন্য মোটরবাইক কেনার জন্য বিশেষ সফ্ট লোন পাবেন। এছাড়াও আরও একাধিক সম্প্রদায়ের কথা ও অভাব-অভিযোগ তাঁদের প্রতিনিধিদের মুখ থেকেই শোনেন মুখ্যমন্ত্রী, আশ্বাস দেন সেসব পূরণ করার।
এক কথায় আজ অমিত শাহ আসার আগেই প্রান্তিক মানুষদের নিজের দলের দিকে টেনে আনার পাইয়ে দেওয়ার নীতি প্রয়োগ করলেন মমতা ব্যানার্জী, এমনটাই বলছেন বিরোধীরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে মমতা ব্যানার্জী এখনো সেই পুরাতন ফর্মুলাই প্রয়োগ করে চলেছেন, যেখানে ভোটের আগেই বোতলের জল ‘ফচ’ করে শব্দ করে। কাল অমিত শাহ এসে কী পাল্টা চাল দেন সেটার অপেক্ষায় এই প্রান্তিক সমাজের মানুষগুলো যারা বরাবরই রাজনৈতিক দাবার বোর্ডে বোরে হয়ে রয়ে গেল।