দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বৃহস্পতিবার কলকাতা সাক্ষী হয়েছিল CRPF, CBI আর ED’র একযোগে তল্লাশি কর্মসূচির। গতকাল দিনভর গরু পাচারের তদন্তে কলকাতার জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। আর আজ শুক্রবার দিল্লি থেকে পাচার কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা (কিং পিন) মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী মহম্মদ এনামুল হককে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি বা NIA।
ঘুষ মামলায় ধৃত কেরলের বাসিন্দা এবং বিএসএফের কমান্ডান্ট জিবু ডি ম্যাথিউয়ের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন অর্থের উত্স খুঁজতে গিয়েই সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পারেন এনামুল হক এবং তাঁর গরু পাচারের সিন্ডিকেটের কথা। জানা যায়, গবাদি পশু আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাচার করতে সহায়তা করার বিনিময়ে এনামূলের পাচার সিন্ডিকেট থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পেয়েছিল জিবু।
ওই বিএসএফ আধিকারিককে জেরা করেই সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, জিবু ছাড়াও, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে কর্মরত একাধিক বিএসএফ আধিকারিক এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক এনামূলের পাচার সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বিপুল অর্থ পেয়ে থাকেন।
সূত্রের খবর, গতকাল একবার ফের সতীশ কুমারের সল্টলেকের বাড়ি এবং মানিকতলার এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিলেন সিবিআই গোয়েন্দারা। এই বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের দেখানো পথ ধরেই এনামুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগেও গরু পাচারের ঘটনায় একবার কেন্দ্রীয় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল এনামুলকে। তারপর সে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল। এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই তদন্তে হঠাত্ই এই বিষয়ে গা ঝাড়া দিয়ে নামে সিবিআই। এনামুলের সঙ্গে এই ঘটনায় আর এক ব্যবসায়ীর আনারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের এফআইআরের বয়নে বলা হয়েছে, বিএসএফের হাতে আটক তালিকায় পাচারের সময়ে উদ্ধার হওয়া গরুর বর্ণনাতে যথেষ্ট কারচুপি করা হত। বড় গরুকেও ছোট মাপের ও ব্রিডের বলে দেখানো হতো। তার পর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সেগুলো নিলাম করে দেওয়া হত। সাইজে এই কারণেই ছোট দেখানো হতো যাতে নিলামের মূল দাম কম দেখানো যায়।
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে কাস্টমসের দফতরের কর্তাদের যোগসাজসে সেগুলি নিলাম হতো। নিলামে সেই গরুগুলো কম দামে কিনে নিত এনামুল, আনারুল ও গুলাম মুস্তাফারা। বিএসএফের একশ্রেণির অফিসারদের এই কারণেই গরু পিছু ২ হাজার টাকাদিত তারা, আর একই ভাবে কাস্টমসের লোকজনকে গরু প্রতি পাঁচশ টাকা করে দিত।
সিবিআই এর এফআইআর মূল অভিযোগ অন হয়েছে বিএসএফের কম্যেণ্ডেণ্ট বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মালদহের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কম্যেণ্ডেণ্ট ছিলেন সতীশ কুমার। ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধীনে চার কোম্পানি জওয়ান মোতায়েন থাকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে। সিবিআই জানিয়েছে, ওই সময়ে ২০ হাজারেরও বেশি গরু আটক করেছিল বিএসএফ।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, গরু আটকালেও খাতায়কলমে কোনও পাচারকারীকে গ্রেফতার বা আটক দেখানো হয়নি। এমন কী কোনো গাড়িও আটক হয়নি। অর্থাৎ বিষয়টা এমন ভাবেই সাজানো হয়েছিল যাতে মনে হয় ওই গরুগুলো মালিক বিহীন আর তারা একা একাই সীমান্ত পেড়িয়ে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, এনামুলকে দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।