দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: জীবন যাপন হয় জুতো সেলাই করে। আর এরই ফাঁকে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল। এবার তাঁর এই মেধার সুবাদেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেতে চলেছেন মালদা জেলার চাঁচোলের বাসিন্দা সঞ্জয় রবিদাস। তাঁর ছাত্র জীবনের কঠিন লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসাবে তাঁকে রাজ্য সরকার ‘বীরপুরুষ’ পুরস্কারে সম্মাণিত করতে চলেছে। মনের জেদ আর ইচ্ছা থাকলে যে জুতো সেলাই করেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো সাফল্য পাওয়া যায় সেটা সঞ্জয় করে দেখিয়েছে।
মালদা জেলা সমাজকল্যাণ দফতর থেকে সঞ্জয়ের নাম রাজ্য সরকার প্রদত্ত ‘বীরপুরুষ’ পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। শোনা গিয়েছে, ছোটবেলাতেই বাবা জগদীশ রবিদাসকে হারায় সঞ্জয়। তারপর থেকেই সংসার চালানোর জন্য রাস্তায় নামতে হয় তাঁকে। জুতো সেলাই করে মা কল্যাণীদেবীকে সংসার চালাতে সাহায্য করতে শুরু করে সে। তার মাও শ্রমিকের কাজ করেন। কিন্তু জুতো সেলাই করে সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে সে।
বিদ্যালয়ে মেধাবী পড়ুয়া হিসাবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম। মাধ্যমিক পরীক্ষাতে খুব ভালো ফল করে সঞ্জয়। সে পেয়েছিল ৪৬৫ নম্বর। এই ভাল নম্বরের নেশাতেই তাঁর লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক আরও বেড়ে যায়। এর পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সঞ্জয়, যা তাঁর কঠিন জীবন যাপনের নিরিখে এক কথায় দৃষ্টান্ত। তাঁর এই সাফল্যের গাঁথা লুকিয়ে রাখা যায় নি, তা অচিরেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সংবাদ মাধ্যম থেকেই বিষয়টি চোখে পড়ে জেলা প্রশাসনেরও। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে তাঁর এই সাফল্য প্রশংসা কুড়য় প্রশাসনিক মহলেও। সে কারণেই সঞ্জয়ের নাম ‘বীরপুরুষ’ পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করে জেলার সমাজকল্যাণ বিভাগ।
মালদার সমাজকল্যাণ বিভাগীয় জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ী জানান, ‘চাঁচোল-১ ব্লকের বাসিন্দা সঞ্জয় রবিদাস রাজ্য সরকারের ‘বীরপুরুষ’ পুরস্কার পেতে চলেছে। আগামী ২০ শে নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্রসদনে উত্তরবঙ্গের আরও ছয়জনের সঙ্গে পুরস্কৃত করা হবে তাঁকে।’ রাজ্য সরকারের দেওয়া এই পুরস্কারের খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত সঞ্জয়। সে জানিয়েছে, ‘এই পুরস্কার আমাকে প্রেরণা দেবে। দারিদ্র্যের কাছে হার না মেনে আগামীদিনেও উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটতে আরও শক্তি যোগাবে।’ সত্যিই তাঁর মতন পড়ুয়াদের কে নিয়েই তো আমাদের বাংলার ভবিষ্যতের দিন গুলো।