দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনার জেরে, এবারে পোড়ামাতলার কালী পূজো আড়ম্বরহীন করে করবার সিদ্ধান্ত নিল, পোড়ামাতলা মন্দির কর্তৃপক্ষ। বহু পুরানো এই পূজো এবছর পা দেবে ৩০৫ বছরে। তবে এরই মধ্যে করোনার দাপট তথা সংক্রমন এড়াতে জাঁকজমকহীন পূজার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায়, অবিভক্ত বর্ধমানের কাটোয়া সংলগ্ন, গঙ্গাটিকুরির মজুমদার পদবিধারী এক ব্রাহ্মণ বংশ এই কালী পুজো শুরু করেন। কথিত আছে এই পরিবারের সদস্যরা দেবীর পূজো করতেন বেশ জাঁকজমক ভাবেই। পুজোর পর বিসর্জনের জন্য দেবীকে নিয়ে আসা হত মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরে গঙ্গার ঘাটে।
একবার হল কি, দেবীর পূজার্চনার পর প্রতিমা বিসর্জনের জন্য দেবীকে শক্তিপুর গঙ্গার ঘাটে নিয়ে এলে, কোনও এক আশ্চর্য কারনে একশো জন মিলেও দেবীর কাঠামো কিছুতেই নড়াতে পারছিলেন না। কথিত আছে, এর পর দেবী স্বপ্নাদেশে জানান, তিনি আর ফিরবেন না, তাঁর পুজো যেন শক্তিপুরেই দেওয়া হয়। সেই থেকে আজও প্রায় ৩০৫ বছরের প্রাচীন এই কালী মা পূজিত হয়ে আসছেন শক্তিপুরের পোড়ামাতলা মন্দিরে। বর্তমানে ভাগীরথী নদী তীরে পোড়ামাতলা মন্দিরে দেবীর পুজো হয়।
দেবীর মন্দির পোড়ামাতলা হবার পেছেনেও রয়েছে একটি ঘটনা। এখানকার রীতি আছে পুজো শেষে আরতি করবার। একবার এমনই আরতি করতে গিয়ে আরতির আগুন থেকে আচমকা আগুন ধরে যায় দেবীর সাজে। দাউদাউ করে সব সাজ ও প্রতিমা পুড়ে যায়। তারপর থেকে গ্রামের মানুষ ও ভক্তরা এখানকার পূজোয় আরতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকেও এই মন্দির নাম হয়ে ওঠে পোড়ামাতলা মন্দির।
দেবীর পুজোয় কোন চাঁদা নেওয়া হয় না। পুজোর মানসিক ও পুজোর অর্ঘ থেকেই এই পুজো সম্পন্ন হয়ে থাকে। শক্তিপুর পোড়ামাতলা পুজো কমিটি সম্পাদক বামদেব জানিয়েছন, ‘‘এবছর এই প্রতিমা ৩০৫ বছরে পা দিল। জেলা ও জেলার বাইরের প্রচুর মানুষ এই পুজোয় অংশ গ্রহন করে। প্রচুর মানুষ এই পুজোতে যোগ দেন। তবে এই বছর কোভিড বিধি মেনে পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
পাশাপাশি তিনি বলেন ,”মন্দিরে এ বার বড় প্যান্ডেল হচ্ছে না। মন্দিরের প্রবেশ পথে স্যানিটাইজ়ারের গেট রাখা হবে। মন্দিরে প্রাঙ্গণে বড় গ্রামীণ মেলাও বসেছে না”। প্রচুর মানুষকে প্রসাদ, ভোগ খাওয়ানোর যে মহোৎসব প্রতিবার হয়; করোনা আবহে এবার সেটাও বন্ধ থাকবে। এমনকি প্রসাদ বিতরণ, অঞ্জলি দেবার ক্ষেত্রেও মানতে হবে একাধিক বিধিনিষেধও।