দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ মঙ্গলবার সভা, পাল্টা সভায় সরগরম নন্দীগ্রাম। আজ সকালে তেখালিতে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভায় মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর একের পর হুঙ্কারের পর বিকেলে নন্দীগ্রামের হাজরাকাটায় তৃণমূলের সভায় পাল্টা মন্তব্য করলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি ওই সভা থেক নাম না নিয়েই বলেন ‘মীরজাফর তখনও ছিল। আজও আছে’। কিন্তু তিনি ওই সভা মঞ্চ থেকে কাকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘দাদার অনুগামী’ ব্যানারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নজর কেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। অধিকারী মহাশয়ের একের পর ‘বিস্ফোরক’ বক্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে বেড়েছে জল্পনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই এড়িয়ে চলার নীতি ধরে মেদিনীপুর সহ জঙ্গলমহলের রাশ নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করছেন শুভেন্দু। এমনকী আজকের সভাতেও তাঁর মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের নাম শোনা যায় নি।
আজ শুভেন্দু অধিকারীর এই একচেটিয়া ক্ষমতা দখলের মনোভাবকে কটাক্ষ করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, শুধু ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’ কে নিয়ে চলতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে বাঁচতে হবে। তাঁর কথায়, ‘আমি বড়! আমি আমি আমি! আমিত্ব নয়। আমরা আমরা আমরা। আমরা সকলে মিলেই হবে শক্তি। একা একা থাকলে শক্তি আর থাকবে না। আমি আমি আমি— হয় না।’
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম কান্ডের পর থেকে এই ১৩ বছরে এই প্রথম তৃণমূলের ব্যানারে নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালিত হল। এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত সাংসদ দোলা সেন বলেছেন, ‘প্রতি বছর ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ডাকেই নন্দীগ্রামে শহিদ সভা হয়। কিন্তু তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দেওয়া হয় না। এবার যা হল তা এর আগে কখনও হয়নি। মমতাকে অবজ্ঞা করাতেই আলাদা সভা করেছে তৃণমূল।’
প্রসঙ্গত, আজ সকালের প্রথম সভায় নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেন, ‘নন্দীগ্রামের কথা ওরা মনে রেখেছে বলে ভাল লেগেছে। খুব ভাল লেগেছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘১৩ বছর পরে নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে?’ একপ্রকার আক্রমণ করেই শুভেন্দু অধিকারী কারও নাম না নিয়ে বলেন, ‘ভোটের আগে আসবেন, ভোটের পরেও তো আসতে হবে।’
এদিকে, বিকেলের সভাতে এদিন পূর্ণেন্দু বসু, দোলা সেনের মতো ফিরহাদ হাকিমও মনে করিয়ে দেন, ‘স্বাধীনতার কথা বললে যেমন গান্ধীজির কথা বলতে হয়, তেমন নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, ভাঙড়ের আন্দোলনের কথা হলে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আসে। মমতা ছাড়া সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, ভাঙড় আন্দোলন সম্ভব নয়। অবশ্যই এগুলি মানুষের আন্দোলন। কিন্তু মূল কাণ্ডারী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
আজ প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুর প্যারাশুট–বক্তব্যের পাল্টা দিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘আমরা কেউ হেলিকপ্টারে আসিনি। আমরা প্রত্যেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠেছি। আর সেই সিঁড়ি তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ মন্ত্রীর স্বীকারোক্তি, ‘ফিরহাদ হাকিমকে লোকজন চিনত না যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করার সুযোগ না করে দিতেন। যেদিন নন্দীগ্রামকে ভুলে যাব সেদিন মন্ত্রী হিসেবে থাকার অধিকার আমার থাকবে না।’ ফিরহাদ বলেন, ‘জীবন থাকতে কোনওদিন ভুলব না নন্দীগ্রামের কথা। এই আন্দোলন আমাদের ভিত্তি।’
তিনি আরও বলেন নন্দীগ্রামের সভামঞ্চ থেকে বাংলায় বিজেপি’র ক্ষমতা দখলের চেষ্টাকে রুখে দেওয়ার বার্তা দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘জগদ্দল পাথর সিপিএম কে আমরা হারিয়েছি। কিন্তু তার থেকেও ভয়ানক দল হল বিজেপি। বাংলা দখল করার চেষ্টা করছে ওরা। আজ ‘আমি আমি’ করে সেই দলটাকে সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীতা করা অর্থাৎ বিজেপি’র হাত শক্ত করা। বিজেপি ক্ষমতায় আসা মানে বাংলাকে উত্তরপ্রদেশ বানিয়ে দেওয়া। বিজেপি ক্ষমতায় এলে এনকাউন্টার শুরু হবে, পিটিয়ে খুন করা শুরু হবে।’ কারও নাম না করে ফিরহাদ ফের আক্রমণ করে বলেন, ‘যাঁরা ভাবছেন যে পালে হাওয়া দিয়ে বিজেপি’র হাত শক্ত করব তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’