দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: শুভেন্দু অধিকারীর সাথে দলের দূরত্বটা প্রতিদিনই একটু একটু করে বড় হয়ে ক্রমে মারিয়ানা খাতের মত হতে চলেছে। দলের নিচুতলায় যেমন ‘কাটমানি’ নিয়ে অসন্তোষ থেকে গোষ্ঠীসন্ত্রাস। তেমনি দলের ওপর তলায় ‘ক্ষমতার’ বন্টন নিয়ে পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি। আজ সে দৃশ্যর ও কোনো ব্যাতিক্রম রইল না। আজ নাম না নিয়েই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় ফের মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যে কটাক্ষ করে বললেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে পুরসভাতে আলু বিক্রি করতিস।’ আজকেই আবার ঘাটালের একটি সভাতে শুভেন্দু বললেন “দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মত ফুলবি”।
উল্লেখ্য, ভোট যত এগোচ্ছে ততই দলের রাশ আলগা হতে শুরু করেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত থেকে এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের রাজনীতিকরা। এখন নিজেদের বিধায়ক ও মন্ত্রীদের মুখে লাগাম টানতে অক্ষম তৃণমূল সুপ্রীমো। আজ থেকে কয়েকদিন আগে কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন,”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বলেই নন্দীগ্রামে আন্দোলন হয়েছিল। আজকে উনি অনেক বড় হতে পারেন। কিন্তু বড় হলেন কার ছায়ায়, সেটাই বড় ব্যাপার।”
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের সংগ্রাম দিবসে শহীদ স্মরণকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছিলেন শুভেন্দু আর ফিরহাদ। দু তরফ থেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন দলের দুই মন্ত্রী। যদিও সেখানেও কেউ নাম নেন নি। আজ ঠিক একদিন বৃহস্পতিবার আরও চাঁচাছোলা ভাষায় নাম না নিয়ে শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ।
আজ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় শালীনতা হারিয়ে ‘তুই’ তাকারি করতে শুরু করেন। তিনি বলেন,”হিসাবটা আমরা বুঝে নেব। চলে যা বিজেপিতে। কোনও অসুবিধা নেই। যাবি কংগ্রেসে, চলে যা। তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। সিপিএমে যাবি, চলে যা। তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। দাদার অনুগামী হলে দাদার সঙ্গে চলে যা। তৃণমূল কংগ্রেস করে বেইমানি করলে বাড়ি ঢুকতে দেব না।”
শুধু তাই নয় শুভেন্দুর অনুগামী হিসেবে যে ‘অশরীরী’ অনুগামীরা চতুর্দিকে পোস্টারিং করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কল্যাণের হুঁশিয়ারি, দেখি কত বড়! দেখতে চাই কত হিম্মত রয়েছে! বাংলার মাটিতে দেখতে চাই, কোন দাদার কত অনুগামী? লড়াই করতে এসেছি। লড়ে যাব। লড়াইয়ের ময়দানে এক ইঞ্চিও ছাড়ব না। বেইমানদের আগামী দিনে বুঝিয়ে দেব।”
এরপর উত্তেজিত হয়ে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙতে’ বসেন কল্যাণ। তিনি বলেন,”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে গাছের তলায় বড় হয়েছিস। ৪টে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস, ৪ খানা চেয়ারে আছিস। কত পেট্রোল পাম্প করেছিস! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বিক্রি করতিস রে, আলু বিক্রি করতিস।”
কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় এর এরকম মন্তব্য প্রকাশ্যে তৃণমূলের ভেতরের ‘গুছিয়ে নেওয়া’র দিকটা প্রকট করে তুলছে। আখেরে তৃণমূলের ওপর তলার নেতারা থুথু ওপরের দিকে ছুঁড়ে নিজের গায়েই মাখছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর এতে খুব সহজেই বিজেপির জন্যে যে যায়গা প্রস্তুত হচ্ছে বাংলার মাটিতে সে কথা বলাই বাহুল্য।