দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ গতকাল অর্থাত্ বৃহস্পতিবার দিনটি যদি কল্যাণ বনাম শুভেন্দু হয় তাহলে সন্ধ্যের নাটক জমিয়ে দিয়েছিলেন ‘বেচারাম মান্না’। তাঁকে নিয়ে রাজ্য -রাজনীতির অলিন্দে জোর জল্পনা শুরু হয়; কারণ বিধানসভায় গিয়ে তিনি স্পিকারের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন। হরিপালের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন কৃষি মন্ত্রী বেচারাম মান্নার অনুগামীরাও আজ শুক্রবার সিঙ্গুরে গণ পদত্যাগ করবেন বলে তৈরি হয়েছিলেন। কিন্তু রাত গড়াতেই নাটকের ক্লাইমেক্স এ দেখা গেল, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে সাক্ষাত আর তারপর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার। এ হল নাটকের সারাংশ।
মূল নাটকের অভ্যন্তরের গল্পটা একটু দেখে নেওয়া যাক। সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সভাপতির নির্দেশ মেনেই পদত্যাগের অবস্থান থেকে সরে নিজ জেলায় ফিরেছেন বেচারাম মান্না। আসলে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সংঘাতের আবহ চলার মধ্যেই বেচারামের ইস্তফায় দারুন অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলো রাজ্যের শাসকদল তথা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর নিজেদের ইমেজ বাঁচাতেই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন।
শোনা গিয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, বেচারাম মান্নাকে তৃণমূল ভবনে তলব করেন। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মান্নার সাথে বক্সীবাবুর বৈঠক হয়। আর তারপরই ‘মান ভঞ্জন’ হয় মান্না বাবুর। তিনি অভিমান ছেড়ে দলের প্রতিই মনোনিবেশ করবেন বলে স্থির করেন।
আর বেচারামের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর সে নাটকে যবনিকা পতনে স্বস্তি ফেরে ঘাসফুল শিবিরে। আসলে এই নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল হুগলি জেলা তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বেচারামের বিরোধ নিয়েই। এমনিতেই হুগলী জুড়েই তৃণমূলের সম্প্রতি অসন্তোষ, দলীয় কর্মী বিক্ষোভ যারপর নাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সম্প্রতি দলের ব্লক সভাপতি নির্বাচন ঘিরে সেই সংঘাত চরমে ওঠে। তাতেই প্রকাশ্যে মুখ খুলে দল ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন বেচারাম। কিন্তু বছরের অন্যসময় হলে হয়তো বেচারাম বাবু বেচারাই হয়ে রইতেন। কিন্তু বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আবার সিঙ্গুরই ছিল তৃণমূলের বঙ্গ মসনদ দখলের টার্নিং পয়েন্ট। সেখানে যদি এখন গোলমাল হয়! তাহলে তো গোড়াতেই পোকা ধরেছে বলে মনে হবে। সেই জন্যে তড়িঘড়ি এই উদ্যোগ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তবে ভেতরের খবর বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হতেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে স্বয়ং মাঠে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথবাবুর ক্ষোভের বরফ গলাতে রাতেই বেচারাম মান্নাকে ফোন করে ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার অনুগামী গোবিন্দ ধারাকে সরিয়ে মহাদেব দাসকে পদে বসানোর জন্য নির্দেশ দেন দলনেত্রী। দলনেত্রীর তরফে বার্তা দেওয়া হয় বেচারামকে যে এভাবে চললে হরিপাল কেন্দ্রে তিনি আর টিকিট পাবেন না। আর এই টিকিট লসের ভয়েই কী তাহলে মান ভাঙল বেচারামের! প্রশ্নর উত্তর নিলেব বিধানসভা ভোটের আগেই, এমনটাই মনে করছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহল।