দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:বাংলার বাইরে থেকে সুনীল দেওধর, দুষ্মন্ত গৌতম, বিনোদ তাওড়ে, হরিশ দ্বিবেদী এবং বিনোদ সোনকর এই পাঁচ নেতাকে এনে বাংলায় নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেমেছে বঙ্গ বিজেপি। যদিও উল্লেখ্য সব নেতাই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের ‘আস্থাভাজন’। আর শাহ’র নির্দেশেই বাংলায় ভোটের রণনীতি তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছে এই পাঁচ নেতা।
পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি রণ-অঞ্চলে ভাগ করে এই পাঁচ নেতার প্রত্যেককে এক একটি অঞ্চল বন্টন করা হয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যেই নিজেদের অঞ্চলের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তত্পরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের দাবি এঁরা প্রত্যেকেই অবাঙালি এবং অতীতে রাজনীতির কাজও করেছেন বাংলার বাইরে অন্যান্য রাজ্যে তাই তাদের নিয়ে কটাক্ষ- ”বাংলার লড়াইয়ে বাঙালির উপর আস্থা রাখতে পারছে না বিজেপি!”
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্যে রাজ্য বিজেপি-র যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় দুই নেতৃত্ব। অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডা। এখনো কর্মসূচী অনুযায়ী মাসে দুবার আসবেন শাহ ও তিনবার আসবেন নাড্ডা। আসলে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর প্রতি কেন্দ্রীয় নেতারা আগেই সতর্ক করেছিলেন। এমনকি সম্প্রতি দিল্লিতে ডেকে দুই শিবিরকেই সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ মোদী-শাহ জুটি। আজ এই বিজেপির এই পঞ্চ পাণ্ডবের আগমন মাত্রই তৃণমূল সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, ”বহিরাগতদের দিয়ে রাজ্যে অশান্তির চেষ্টা করছে বিজেপি।” অন্য দিকে এই তৃণমূলের এই উক্তি শুনে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ”আমরা কি চীন থেকে এসেছি নাকি?”
কিন্তু এই পঞ্চপাণ্ডবের ওপরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের এত অগাধ আস্থা কেন একটু নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক-
সুনীল দেওধর :


বর্তমান পোস্ট :
অতীতের সঙ্ঘের প্রচারক সুনীল দেওয়ধর এখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক। এখন তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের পর্যবেক্ষকও।
সফলতা:
২০১৩ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লির দায়িত্বে,
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীর দায়িত্ব,
দীর্ঘসময় উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ে সঙ্ঘ প্রচারকের দায়িত্ব পালন,
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব।
শক্তি:
সংসার নেই।
সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা,
স্থানীয় ভাষা শেখ ও বলার ক্ষমতা। জানেন বাংলা, মারাঠি, তেলেগু, হিন্দী, ইংরেজি ও ককবরক ভাষা
দ্বায়িত্ব:
বিধানসভা ভোটে মেদিনীপুর জোনের দায়িত্বে। এই জোনে রয়েছে দুই মেদিনীপুর ছাড়াও হাওড়া ও হুগলি জেলার আসনগুলি।
দুষ্মন্ত গৌতম


বর্তমান পোস্ট :
সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দুষ্মন্ত হরিয়ানা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ। বর্তমানে ছত্তীসগঢ়ের পর্যবেক্ষক।
সফলতা:
মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র সাফল্যে বড় ভূমিকা।
শক্তি:
দীর্ঘসময় বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালে বিজেপি গোটা দেশে যে ‘সদস্যতা অভিযান’ চালিয়েছিল, তার গুরুভার ন্যস্ত ছিল দুষ্মন্তর উপরে।
দ্বায়িত্ব:
বাংলার ভোটে দিল্লির দুষ্মন্ত সামলাবেন কলকাতা জোন। এই জোনে কলকাতা ছাড়া রয়েছে দুই ২৪ পরগনাও।
বিনোদ তাওড়ে
বর্তমান পোস্ট :
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিনোদ এখন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি হরিয়ানার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে
সফলতা:
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ছিলেন। দু’দফায় মহারাষ্ট্র বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। প্রথমবার ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯। দ্বিতীয়বার ২০০২ থেকে ২০১১। সামলেছেন সর্বভারতীয় দায়িত্বও। ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্রের বোরিভলি আসন থেকে জিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান প্রথম দেবেন্দ্র ফঢণবীস মন্ত্রিসভায়। স্কুলশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষা, মেডিক্যাল শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি ক্রীড়া, সংস্কৃতি, মরাঠি ভাষা দফতরও ছিল তাঁর হাতে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এক সময় বিরোধী দলনেতাও ছিলেন বিনোদ।
দ্বায়িত্ব:
বিনোদের দায়িত্বে বর্ধমান জোন। দুই বর্ধমান ছাড়াও এই জোনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং বীরভূম জেলা।
হরিশ দ্বিবেদী
বর্তমান পোস্ট: উত্তরপ্রদেশের হরিশ বর্তমানে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক।
সফলতা:
২০১৪ এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পর পর দু’বার জিতেছেন উত্তরপ্রদেশের বস্তি আসন থেকে। দীর্ঘসময় উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র যুবমোর্চার দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ সরকার গঠনে রাজ্যের সংগঠন সামলানোয় হরিশের বড় ভূমিকা ছিল বলেই মনে করা হয়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও তাঁকে বড় দায়িত্ব দেন শাহ।
দ্বায়িত্ব:
উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে হরিশ। এই জোনে রয়েছে উত্তরবঙ্গের সবক’টি জেলা।
বিনোদ সোনকর


বর্তমান পোস্ট: সদ্য ত্রিপুরার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন বিনোদ
সফলতা:
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পর পর দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী বিনোদের জন্ম থেকে রাজনীতি সবই উত্তরপ্রদেশে। ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র দু’বারই জিতেছেন কৌসম্বি লোকসভা কেন্দ্র থেকে। দীর্ঘসময় উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র সহ-সভাপতি থেকেছেন। পরে বিজেপি-র তফসিলি মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি হন। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে বিপুল সাফল্য নিয়ে যোগী সরকার গঠন এবং গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে সে রাজ্যে ভাল ফলের পিছনে বিনোদের পরিশ্রম ছিল বলে দলের শীর্ষনেতৃত্ব মনে করেন। নিজের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
দ্বায়িত্ব:
বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিনোদের দায়িত্বে জঙ্গলমহল জোন। এই জোনে রয়েছে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলা।