দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বুধবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত গরুপাচার মামলায় সতীশ কুমারকে ১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। সতীশের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগও এনেছে সিবিআই। শুধু তাঁর নিজের অ্যাকাউন্টেই নয়, শ্বশুর, শালা, ছেলে, বউ-সহ প্রায় সব আত্মীয়ের অ্যাকাউন্টে বহু কোটি টাকা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে একশ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে সিবিআই। এই টাকা কীভাবে এল সেই নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গতকালই বিএসএফের এই কমান্ডান্টকে গরুপাচারকাণ্ডে গ্রেফতার করে সিবিআই। কমপক্ষে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন এই গরুপাচারের মাধ্যমে হয়েছে বলেই মনে করছে সিবিআই আধিকারিকেরা। যদিও বারংবার তাঁকে নোটিশ পাঠানো সত্ত্বেও তিনি আসেননি। অবশেষে গতকাল নিজাম প্যালেসে আসার পরে দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও, ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে সিবিআই।
এদিন সিবিআই আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, সতীশ কুমার গত এক মাস ধরে কলকাতায় থেকে সাক্ষীদের ভয় দেখিয়েছেন। ফলে তাঁর হেফাজত অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি, এই সাক্ষীরা ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর কাছে বয়ান দিয়েছেন। সেই বয়ানও সিবিআই আদালতে জমা দিয়েছে।
তদন্তকারীরা দেখেছেন, ওই সময়ে ২০,০০০ বেশি গরু আটক করে ছিল বিএসএফ। এত গরু আটক হলেও একজন পাচারকারী বা কোনও গাড়ি গ্রেপ্তার ও আটক হয়নি। এই সন্দেহে তদন্তের একাধিক পথ খোলা রেখে তদন্ত চালায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তারপরেই চলতি মাসে প্রথমে এনামুল হককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে বিএসএফের এই কমান্ডান্টের নাম সামনে আসে। মঙ্গলবারই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই। গোরু পাচারকাণ্ডে তাঁর গ্রেফতারির পরই রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক শুরু হয়। এই সতীশের থেকে একাধিক প্রভাবশালি নেতা ও আমলা টাকা পেতেন বলেই দাবি করছে বিজেপি। যদিও তার কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। দক্ষিণ কলকাতার একাধিক নেতা ও সরকারের শীর্ষপদে থাকা একাধিক আমলার নাম সামনে এসেছে। আয়কর দফতর সূত্রে খবর, তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়ে চিঠিও পাঠানো হচ্ছে।
যদিও এই বিষয়টি সম্পূর্ণ সাজানো বলেই দাবি শাসক দলের। দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘প্রতিবারই নির্বাচনের আগে এরকম বিভিন্ন জিনিস বিজেপি সামনে আনে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না। কারণ, এটা বিজেপির চাল, তা বুঝতে মানুষের বাকি নেই কিছুই।’ গরু পাচার নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে সক্রিয় সিবিআই। কলকাতায় অভিযুক্ত বিএসএফ কর্তার সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশির সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের ষোলো জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালিয়ে বহু নথি সংগ্রহ করেছিল তদন্তকারী এই সংস্থাটি। এখনো পর্যন্ত তদন্তে জানা গিয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা করে লেনদেন চলত। সতীশ এর শ্বশুরের অ্যাকাউন্ট এ ১২.৮ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে।