দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ বৃহস্পতিবার মালদার সুজাপুরে প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই আকস্মিক দুর্ঘটনাতে যতটা মানবিকতা নজরে আসছে তার থেকেও বেশি রাজনৈতিক তরজা। এই বিস্ফোরণের বিষয়ে মালদা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন প্রাথমিক তদন্তে প্লাস্টিক তৈরির মেশিন ওভার হিটেড হওয়ার জন্যেই এই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভেঙে পড়ে কারখানার দেওয়াল। উড়ে যায় চাল। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মৃতদেহগুলি।
আর এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে সহায়তা পৌঁছে দিতে হেলিকপ্টারে করে পুরমন্ত্রী’র পৌঁছে যাওয়া একদিকে যেমন তত্পর সরকারের লক্ষণ অন্যদিকে বিরোধীদের চোখে ভোট টানার উপঢৌকন। এদিন হেলিকপ্টারে মালদা পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। ৪৫ ঘোড়া মোটর ফেটেছে। আমি এসে দেখলাম ঘরের চাল তখনও গাছের ওপরে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে।
এই বিস্ফোরণ নিয়ে বিজেপির দাবি, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ NIA তদন্ত করাতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য সব বিষয়েই সন্ত্রাসবাদ, অনিয়মের ভূত দেখছে বিজেপি। আর এ বিষয়েও মুখ খুলতে দ্বিধা করেন নি স্বয়ং রাজ্যপালও। তড়িঘড়ি বিবৃতিও জারি করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন নিহত দের ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহত দের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য।
এবার রাজ্যের এই তড়িঘড়ি ঘোষণাতে রাজ্যপাল টুইটে লেখেন, বিস্ফোরণে ৫ জনের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্তের আগেই কারণ বলে দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতর। এখানেও পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । কেন পুলিশ নিরপেক্ষ হয়ে ঘটনার তদন্ত করছে না? কেন মুখ্যমন্ত্রী মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ্যে আনছেন না?
রাজ্যপালের সুর ধরেই এই ঘটনায় NIA তদন্ত দাবি করে উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘সুজাপুরের মতো জায়গায় যখন বিস্ফোরণটা হয়েছে তখন নিশ্চিতভাবে এখানে বোমা ছিল। নির্বাচন যত এগোবে তত বোমা তৈরির কারখানার সংখ্যা বাড়বে। তারই একটি উদাহরণ সুজাপুরের বিস্ফোরণ। প্লাস্টিক তৈরির কারখানার নামে সেখানে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে আমি NIA তদন্ত দাবি করছি। কিন্তু ওরা হতে দেবে না। কারণ ওরা চায় না সত্যটা বেরিয়ে আসুক। ওরা সবকিছু ধামাচাপা দিতে চায়’।
বিশেষজ্ঞদের মতে রাজ্যে বিস্ফোরণ এখন জলভাত। রোজ কোথাও না কোথাও তাজা বোমা পাওয়া যাচ্ছে আবার কোথাও বিস্ফোরণে উড়ে যাচ্ছে গোয়াল ঘর। এর আগেও মালদাতে টোটোতে বিস্ফোরণ হয়ে পাশের বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছিল। সেক্ষেত্রেও পুলিশের গরিমসি ও দীর্ঘসূত্রীতা লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। বিস্ফোরণের প্রায় চারদিন পর ফরেনসিক টিম পৌঁছেছিল। এর মধ্যে বৃষ্টিতে সব ধুয়ে গিয়েছিলো। আজ জানা যায় নি যে কী থেকে সেই বিস্ফোরণ হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে টিপ্পন্নী কেটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি আরও যোগ করেন যে ‘মুর্শিদাবাদ, মালদা-সহ গোটা রাজ্যেই বোমা আর অস্ত্রের কারখানা তৈরি হয়েছে। পুলিস প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।’
বিরোধীদের এই পর পর মন্তব্যের কারণে স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, সুজাপুর বিস্ফোরণ নিয়ে অনেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন সেখানে মোটরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাজ্য সরকার হতাহতদের পাশে রয়েছে।
এই বিষয়ে অন্য একটি সম্মেলনে তৃণমূলের তরফে প্রতিক্রিয়ায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওরা সবকিছুতেই তৃণমূলের ভূত দেখছে। এটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা। যারা তদন্ত করছে তারা এটা দেখবে। NIA-কে এখানে দেখতে হবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনই যথেষ্ট’। তবে বিরোধীদের বক্তব্য যতই তৃণমূল চিত্কার করুক, গ্রাম বাংলার সাধারণ মাঠেই এই শীতে পিকনিক করতে যাওয়াও এখন মানুষের কাছে ভীতির কারণ হয়ে গিয়েছে। বলা যায় না হয়তো বাঁধাকপির ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে তাজা বোমা!