দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:শুক্রবার তৃণমূল ভবনে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিজেপির অবাঙালি কার্যকর্তা নিয়োগ প্রসঙ্গে মমতব্য করে বলেন ‘যে সব বহিরাগত এ রাজ্যে তাণ্ডব শুরু করেছেন, তাঁরা বাংলার কী বোঝেন? আজ দলিত, নমশূদ্রদের নিয়ে রাজনীতি করছেন, অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মতুয়াদের কোনও স্থান নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মতুয়া সঙ্ঘ থেকে একজনকে পূর্ণমন্ত্রী করেছিলেন। যে সব বহিরাগত বাংলায় এসে ঘোরাফেরা করছেন তাঁরা রবীন্দ্রনাথ, বীরসা মুন্ডাকে চেনেন না। তাণ্ডব করেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল। এটাই ওঁদের সংস্কৃতি।’
এর পর আরও একধাপ এগিয়ে ব্রাত্য বাবু মন্দির প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘রামমন্দিরে ১৭টা মন্দির আছে। কিন্তু সেখানে একটাও হরিচাঁদ, গুরুচাঁদের মন্দির নেই। কিন্তু দেখুন বাংলায় আছে। এমনকী বাংলায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ও করা হয়েছে। বহিরাগতরা এসে বলছেন, বাংলায় মন্দির করবেন। অথচ যেখানে প্রয়োজন সেখানে মন্দির বানাচ্ছেন না।
২০১১ সালে রচপাল সিং মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, অথচ অন্য কোনও রাজ্যে বাঙালিকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছে তা দেখতে পাবেন না। আমরা এই উদারতায় বিশ্বাস করি, সকলকে নিজের লোক মনে করি। অর্জুন সিং মমতা ব্যানার্জির দয়ায় সাংসদ হয়েছিলেন। তাহলে উত্তরপ্রদেশ থেকে কেন অর্জুন রায় বা গুজরাটে কেন একজন অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হবেন না!
বিজেপি চায় বহিরাগতদের দিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। আর আমাদের মাথা নত করে থাকতে হবে! আমাদের বাঙালি জাতির কি এই দুর্দশা এসেছে! আমাদের এখানে ধর্মের ভিত্তিতে লোককে ভাগ করা হয় না। আমাদের কাজই হল মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সুযোগ-সুবিধে দেখা। এটা রাজ্য সরকারের কর্তব্য। স্বাধীনতা আন্দোলনও বাঙালিদের নেতৃত্বেই হয়েছিল।’
ঠিক এর পরেই ব্রাত্যবাবু সুভাষ চন্দ্র বোসের সময়কাল আর মমতা ব্যানার্জীর এই লড়াই কে তুলনা করে বলেন যেভাবে অবাঙালিদের দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে কোণঠাসা করা হয়েছিল সেই একইভাবে উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লোক পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তুলনা করছি না। অবাঙালিদের দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে চেপে দেওয়ায়, তাঁকে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করতে হয়েছিল। সে রকমই প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মমতা ব্যানার্জিও তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছেন। আমি এই তুলনা দিয়েছি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। ওটা ছিল ঔপনিবেশিক লড়াই।’
যদিও ব্রাত্য বাবুর এই মন্তব্য নিয়েই জনমনসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য স্বাধীনতার কিছুদিন পর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সূচেতা কৃপালিনী। তিনি বাঙালী কন্যা ছিলেন। বিবাহের পর পদবী বদলে হয়েছিলেন কৃপালিনী। একইভাবে আশীর দশক থেকে এই ২০১৭ সাল পয’ন্ত বেনারাস থেকে বিজেপির এম এল এ হয়েছিলেন দেবপ্রিয় রায়চৌধুরী। উড়িষ্যাতে মালকানগিরি থেকে দীঘ’দিন ধরে এম এল এ আছেন অরবিন্দ ঢালী। আগে বিজেপিতে ছিলেন। এখন বিজেডিতেও আছেন। উড়িষ্যা মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হয়েছিলেন। এইরকম উদাহরণ প্রচুর আছে। ব্রাত্য বসু একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ও অধ্যাপক। তাই একটু পড়াশোনা করে এসে বললে ভাল হত।
এই প্রসঙ্গে অনেকেই বলছেন যে ব্রাত্য বাবু ‘অবাঙ্গালি’ প্রসঙ্গ তুলছেন অন্যদিকে কেন বাঙালি অধীরও চৌধুরী ও মমতা ব্যানর্জী দুজনের প্রথমজন কংগ্রেস এ আছেন আর দ্বিতীয় জন ছিলেন। আর ওই দলটাই নেতাজিকে তাড়িয়ে / কোণঠাসা আর গুমকরে ছেড়েছিলো। তাই তাদের মন্তব্য এই অবাঙ্গালির ছক এখানে কী খাটে !
অবাঙালিরা কি পাকিস্তানী নাগরিক! এই আঞ্চলিকতাই তো তৃনমুলের সর্ব ভারতীয় ইমেজ কে কলিম লিপ্ত করবে। তবে কি তৃনমুল “অ-বাঙালি বিরোধী” কট্টর আঞ্চলিক দল হয়ে এই রাজ্যে ও দেশের রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিন্হিত হবে! আর তৃনমুলের অবাঙালি নেতারা কিমমতার বিরোধী! এরকম হাজার প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের রাজ্য রাজনীতির কোন্দল।