দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ প্রথম বাঁকুড়ার রাজনৈতিক সভা থেকে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’দের উদ্দেশ্যে কড়া ‘হুশিয়ারি’ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে শুভেন্দু ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে ‘কু-কথা’ ‘কটাক্ষ’ ছুঁড়ে দিলেও, মুখ্যমন্ত্রী’র মুখ থেকে প্রতিক্রিয়া শোনা যায় নি। আজ এই প্রথম ‘তাঁদের’ উদ্দেশে মমতার বললেন, তিনিই ‘গোটা বাংলার পর্যবেক্ষক’। কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, সে সবের উপর তিনি নজর রাখছেন।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই তৃণমূলের অন্দরে ‘জেলা পর্যবেক্ষক’দের পদ তুলে দেওয়া নিয়ে দলের একাংশ ক্ষুব্ধ ছিল যার প্রভাব হুগলী থেকে পূর্ব মেদিনীপুর, হলদিয়া থেকে হলদিবাড়ি লক্ষ্যণীয়। আর এদের পুরোভাগে রয়েছেন দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং। আর সেকারণে শুভেন্দুর সঙ্গে দলের বর্তমান দূরত্বের আবহে বুধবারের বার্তা বিশেষ ‘তাত্পর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে দলের একটি বড় অংশ।
সাংগঠনিক রদবদলে দলের জেলা পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়া নিয়ে দলের নানা স্তরে ‘ফিশফিশ’ থাকলেও নন্দীগ্রামের বিধায়ক তা দলীয় আলোচনায় প্রকাশ্যে এনেছেন। উল্লেখ্য এর আগে দুই মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ ৬ জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রদবদলের পর তিনি-সহ অন্য পর্যবেক্ষকরাও আর ওই পদে নেই। আর তাঁর সাথে রফা করতে দু’দফায় আলোচনাতেও বসেছেন দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়; কিন্তু সেই আলোচনায় কোনও মীমাংসা সূত্র মেলেনি। ভেতরের খবর শুভেন্দু পর্যবেক্ষক পদ তো চানই এর পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছিলেন, কাজ করার ‘স্বাধীনতা’র প্রসঙ্গ যা প্রকারন্তরে প্রশান্ত কিশোরের দলের ওপরে আধিপত্যকেই সামনে এনেছে।
এর মধ্যে আজ বুধবার বাঁকুড়ায় কারও নাম না করে মমতা বলেছেন, ”অনেকেই বলছেন এই জেলায় পর্যবেক্ষক কে, ওই জেলায় পর্যবেক্ষক কে। আমি বলছি, সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক!” অর্থাত্, দলের দায়িত্ব নিজের হাতেই যে রাখছেন সেটা স্পষ্ট করলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, ”এত দিন সরকারের কাজে বেশি মন দিয়ে দলকে একটু ঢিলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার পুরো দলটাই আমি দেখব। আর এই বাঁকুড়ার মাটি থেকেই সেই কাজ শুরু করলাম।”
এর আগে শুভেন্দু একাধিকবার তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, নেত্রীর নির্দেশ মেনে নিতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি অন্য কারও নেতৃত্ব মানবেন না। ‘অন্য কারও’ বলতে শুভেন্দু দলের তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরকেই বুঝিয়েছেন বলে তাঁর শিবিরের বক্তব্য। আজ বুধবারের বক্তৃতায় মমতা সেই বিষয়েই বলেছেন যে ”এবার থেকে তিনিই পুরো দল দেখবেন। ফলে কারও আর কোনও ক্ষোভ বা অনুযোগ থাকার কথা নয়।”
আজ মমতা এও বলেছেন যে কেউ কেউ ভাবছেন কিছু একটা হবে কিছু একটা হবে, তখন ওদিকে যাব। তাদের তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে ‘কেউ একটা আসন পাবে না। এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আসন জয় করতে দেবেন না। প্রয়োজনে তিনি জেলে যাবেন। জেল থেকেই তিনি তৃণমূলকে জয়ী করবেন’। এখানেই বিরোধী সহ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন ‘জেলে’ যাওয়ার মত কাজ কী তিনি সত্যিই করেছেন যে কারণে তিনি সহ তাঁর দলের নেতারা এত ভয় পাচ্ছে। আদতে কী তিনি তাহলে স্বীকার করে নিলেনই যে তাঁর সরকার ‘দুর্নীতি বাজ’। আর আজকের এই বাঁকুড়ার সভা থেকেই নিজেই নিজের দলের বিরুদ্ধে বিতর্ক উসকে দিলেন।