27 C
Kolkata
Saturday, April 1, 2023
More

    এবার কী তবে মন্ত্রীত্ব ছাড়বেন শুভেন্দু অধিকারী! জল্পনা রাজ্য রাজনীতিতে

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব এবং দলত্যাগের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে যখন হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (এইচআরবিসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিলেন। তবে জল্পনা আরও বেড়েছে যখন শুভেন্দুর ইস্তফার পর দ্রুত ওই পদে নিযুক্ত হয়েছেন তৃণমূলের প্রথম সারির সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মজার বিষয় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বাকযুদ্ধ চলাকালীনই ওই নিয়োগপত্রে সাক্ষর করতে হয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। উল্লেখ্য, জগদীপ ধনখড়কে আজ কড়া আইনি আক্রমণ করে ফৌজদারি মামলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কল্যাণ।

    যদিও ইতিহাস বলছে আগেও একাধিক বার এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান পদে ছিলেন কল্যাণ বাবু। কিন্তু সম্প্রতি শুভেন্দু এবং কল্যাণের যে ‘ছায়া লড়াই’ সামনে এসেছে, তাতে শুভেন্দুর জায়গাতে রাজ্য সরকারের সুপারিশে ওই কল্যাণ বাবুকে নিয়োগে ‘রাজনৈতিক’ বিতর্ক উসকে দিয়েছে। তবে ওই পদ থেকে শুভেন্দুর বাবুর সরে যাওয়া শুভেন্দুর দলত্যাগের প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ বলেই তৃণমূলের একাধিক প্রথমসারির নেতা মনে করছেন। সুতরাং পরের ধাপে শুভেন্দু মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেবেন আর অতঃপর দলত্যাগ করবেন। যা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় সংগঠনের শীর্ষ স্তরের এক নেতার মতে, ”আমরা শুনেছি, এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর শুভেন্দু হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের শীর্ষপদেও ইস্তফা দেবে। তার পর মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে নিজের ভবিষ্যত্‍ পরিকল্পনা প্রকাশ্যে ঘোষণা করবে।” বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবর, বৃহস্পতিবার হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের জরুরি বৈঠক হয়েছে কিন্তু শুভেন্দু পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়ার এখনো কোনো খবর মেলেনি।

    প্রসঙ্গত, তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তবে দু’দফা আলোচনার পরেও সমস্যার আশু সমাধান হয়নি। যদিও দ্বিতীয়বার আলোচনার পর সৌগত বলেছিলেন, ”আমি আশাবাদী। আবার আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।” তবে দলের অন্দরে শুভেন্দুকে নিয়ে একটা বিভাজন স্পষ্ট লক্ষিত হয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের একটি অংশর মতে, বিধানসভা ভোটের আগে দল ছাড়লে আখেরে দলেরই ক্ষতি। তবে বিশেষ সূত্রে খবর সংগঠন নিয়ে শুভেন্দুর দাবি এই মূহুর্তে মেটানো এখন সম্ভব নয়। আর একান্তই যদি শুভেন্দুকে দলে থাকতে হয় তাহলে তাঁকে দলের অনুশাসন মেনেই থাকতে হবে।

    সৌগত বাবুর সাথে আলোচনায় শুভেন্দু সরাসরিই বলেছিলেন, তিনি দলের অন্দরে কাজের ‘স্বাধীনতা’ চান। যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে তিনি যে ৬টি জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন, সেগুলি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে এই নিয়ে দলনেত্রীকে সৌগত বাব যে মৌখিক রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল, শুভেন্দু মূলত চারটি সমস্যার কথা বলেছেন। তার দু’টি দলের তরুণ সাংসদ অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর সংক্রান্ত। অন্যটি দলের অন্দরে ‘পর্যবেক্ষক’ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত। শুভেন্দু এমনও দাবি করেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন আর দ্বিতীয় দফার বৈঠকে দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে ভোটের টিকিট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শুভেন্দুবাবু এমনটাই খবর।

    এরই মাঝে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কল্যাণকে সাথে নিয়ে বাঁকুড়া সফরে যান। এই বিষয়টি শুভেন্দু শিবির খুব ভাল ভাবে নেয়নি। ওই জন্যে শুভেন্দুর অনুগামীদের একাংশ বলেন, ”যিনি দাদাকে লক্ষ্য করে এত কথা প্রকাশ্যে বলেছেন, দিদি তাঁকে নিয়েই মঞ্চে উঠলেন! এর থেকে আমরা কী বার্তা পাব?” অন্যদিকে বুধবার বাঁকুড়ার সভা থেকে মমতা ঘোষণা করেন, বাংলার সর্বত্র তিনিই দলের ‘পর্যবেক্ষক’। তিনি আরও বলেন, রাতের অন্ধকারে কে বা কারা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তিনি সমস্ত খবর রাখেন। এর ফলে দলনেত্রীর সেই ‘হুশিয়ারি’ও শুভেন্দু শিবিরের কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট। আর এর পরেই বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর ইস্তফার ঘটনা। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চার এখানেই মিলিয়ে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

    ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাওয়া যাবে ২০১১ সালের অগস্ট-সেপ্টেম্বরে এইচআরবিসি-র নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কল্যাণ প্রথম ওই পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। আবার ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর সময় তিনি ওই পদ ছেড়ে দেন। ভোটে জিতে আবার তিনি ওই পদে নযুক্ত হয়েছিলেন। আবার ২০১৯ সালে লোকসবা ভোটের আগে কল্যাণ ওই পদ ছাড়েন। তবে ভোটে জেতার পর তাঁকে আর ওই পদে নিয়োগ করেনি রাজ্য সরকার। প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে ওই পদে বসানো হয় কিন্তু দেড়মাসের মধ্যে দীনেশ অজানা কারণে ওই পদ ছেড়ে দেন। প্রশাসনিক মহলে তার কারণ হিসেবে বিবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে। দীনেশের পর ওই পদে ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার তিনি ওই সরকারি পদে ইস্তফা দেওয়ার পর আবার কল্যাণকেই সেখানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এবার এটাই দেখার যে জল কথা থেকে কোথায় গড়িয়ে যায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের লড়াই এখন চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। আগামী নির্বাচনে শুভেন্দুই দ্বায়িত্ব নিয়ে তৃণমূলকে ধরাশায়ি করবে ।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...