দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার যে রায় দেওয়া হয়েছিল এবার সেই ঘটনা বেশ চাঞ্চল্যকর মোড় নিল। উল্লেখ্য, ডিএ বিতর্ক মেটার জন্য রাজ্য সরকার স্যাট গঠন করেছিল। আর সেই স্যাটের তরফেই গত ২৩ সেপ্টেম্বর জানানো হয়েছিল, ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যকে বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এবার সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন জমা দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যার অর্থ আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা আর হাতে বাড়তি ডিএ পাচ্ছেন না।
কেন এত দেরি হতে পারে এই ডিএ নিয়ে রায় দানের! উল্লেখ্য, আগামী ৩’রা ডিসেম্বর থেকে হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হতে পারে। আর শুনানি হতেই যে সেই মামলার রায় হাইকোর্ট কবে দেবে তা এখনই বলা সম্ভবও নয়। খুব কম করেও দেড়-দুই বছরওলেগে যেতেই পারে এই মামলার রায় বার হতে। এর অর্থ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের পালাবদল হবে না তৃণমূল থাকবে তার একটা বিক্ষোভের নতুন মঞ্চ তৃণমূল একাই করে দিলো।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবি তুলে স্যাটে মামলা করেছিল কংগ্রেস সমর্থিত ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ়’ ছাড়াও আরও দু’টি সরকারি কর্মীদের সংগঠন। কার্যত রাজ্যে পট পরিবর্তন ঘটার পরেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে সেই মামলায় স্যাটের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ও প্রশাসনিক সদস্য সুবেশকুমার দাস রায় দিয়েছিলেন ডিএ দেওয়া বা না -দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। স্যাটের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন। এর পরে ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলে, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। একই সঙ্গে মামলাটি পুনরায় স্যাটে ফিরিয়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ডিএ কীভাবে ও কী হারে দেওয়া হবে, তা বিচার করে স্যাট তিন মাসের মধ্যে জানাবে।
২০১৯ সালের ২৭ জুলাই রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশের উত্তরে জানিয়ে দেয়, পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিতে হবে। এমনকি সেই সময় স্যাট এটাও বলে দিয়েছিল, কী ভাবে ভাতা বাবদ বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে তা তিন মাসের মধ্যে জানাতে হবে প্রশাসনকে। কিন্তু সেই নির্দেশ রাজ্য সরকার মেনে না নেওয়ায় স্যাট-এ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে একাধিক কর্মী সংগঠন।
এই পরিস্থিতিতে স্যাট-এর রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য সরকারের সেই আবেদন খারিজ করে স্যাটের রায় বহাল রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তারপরও স্যাটের নির্দেশকে এবারেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে গেল রাজ্য। ফলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে অর্থাত্ বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের হাতে যে বাড়তি অর্থ যাচ্ছে না সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এই প্রসঙ্গে অনেকেই বলছেন যে রাজ্যের সরকারী কর্মচারীদের অধিকাংশই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছিলো। এবার এই নতুন ডিএ বিতর্ক কতটা ছাপ ফেলে সেটাই দেখার।