দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: শুভেন্দু যদি তুষের আগুন হন তাহলে তাতে ফু দিয়ে ফুলকি তুলেছেন কল্যাণ। আর দিন যত এগোচ্ছে ততই শাসক দলের অন্দরে ‘গৃহযুদ্ধ’ প্রকট হচ্ছে। ইগো’র লড়াই লড়তে গিয়ে আদতে নিজেদেরই ক্ষতি করছেন নাতো! ইতিমধ্যেই কোচবিহারের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এরই মধ্যে তৃণমূলেরই সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ওপর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।
প্রসঙ্গত, দলের বিধায়ক ও নেতাদের এই দল ছেড়ে যাও নিয়ে কল্যাণের বক্তব্য,সারদা-নারদায় অভিযুক্তরাই সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে যাবেন। আর ঘটনাচক্রে, নারদায় অভিযুক্তদের মধ্যে অপরূপার নামও রয়েছে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই কল্যাণের ওই মন্তব্য নিয়ে আরামবাগের সাংসদ বেজায় ছোটে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে অপরূপার পাল্টা বক্তব্য, ”কল্যাণই বিজেপিকে সুযোগ করে দিচ্ছেন।” আর এই জল্পনার মধ্যেই বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক দাবি, ”কল্যাণ নিজেও তো বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন!”
উল্লেখ্য সম্প্রতিক সময়ে যখন রাজ্য রাজনীতি শুভেন্দু জ্বরে আক্রান্ত সেই সময়ে প্রকাশ্যে মঞ্চ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু’র নাম না করেই অনেক ‘কুকথা’ বলেছেন যা শুভেন্দু বাবু হজম করে নিলেও তার অনুগামীরা মোটেও ভালভাবে নেন নি। এমনকি শুভেন্দু বাবুর এই হটাত্ পদত্যাগ সেখানেও ‘কল্যাণ’ কেই সকলে দায়ী করছেন। তার মধ্যে বাঁকুড়া সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কল্যাণের সহবস্থান সেই জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়েছে। যে পশ্চিমাঞ্চলের মাটিতে শুভেন্দু ছাড়া ‘দিদি’ এক পাও ফেলতেন না সেখানে সাথে নিলেন সেই ‘কল্যাণ’ কে যে কিনা নিজের লোকসভা কেন্দ্রের ‘গোষ্ঠী কোন্দল’ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন!
এছাড়াও যে ‘আলটপকা’ মন্তব্যের জন্যে বিজেপির দিলীপ ঘোষ পরিচিত এখন অনেকেই বলছেন তৃণমূলের দিলীপ ঘোষ হচ্ছেন কল্যাণ। সম্প্রতি একাধিক সভাতে কল্যাণ দাবি করেছেন, সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচতে সারদা-নারদায় অভিযুক্তরাই বিজেপিতে যাবেন। তাঁর বক্তব্য, ”বিজেপির যোগদান মেলায় প্রথম সারিতে রয়েছেন তৃণমূলের সেই সব নেতা, যাঁরা নারদা-সারদা-রোজভ্যালিতে অভিযুক্ত।” এই যেমন রবিবার শ্রীরামপুরে তৃণমূলের একটি কর্মিসভায় যোগ দিয়েছিলেন কল্যাণ। তার আগে শনিবার ছিল রিষড়ায় দলীয় কর্মসূচি। দুই সভাতেই কল্যাণের দাবি, ”কেউ কেউ তো দু-তিন বছর আগে কথা দিয়ে রেখেছেন। বলে রেখেছেন, গায়ে হাত দেবেন না। নির্বাচনের আগে আগে চলে আসব!”
এবার লড়াই টা অন্য যায়গায়। এমনিতেই মেদিনীপুর আর উত্তরবঙ্গ নিয়ে দল হিমশিম খাচ্ছে। আগামী ৭ তারিখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছেন মেদিনীপুরের জল মাপতে। সেখানে হুগলি জেলায় তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান কল্যাণ ও সদস্য অপরূপার এই যে কোন্দল শুরু তাতে লোকসভার মত ফল হলে কিছুই করার থাকবে না। নারদা স্টিং অপারেশনে অভিযুক্ত অপরূপা বলেছেন ”দলের সিনিয়র নেতা বলছেন নারদা-সারদায় অভিযুক্তরা বিজেপিতে চলে যাবেন। এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ”সুপ্রিম কোর্ট কি বলে দিয়েছে এরা অপরাধী? আমি মনে করি, এটা বিজেপিকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করা ঠিক নয়।”
যদিও এই প্রসঙ্গকে একদমই পাত্তা দিতে চাইছেন না হুগলির সাংসদ লকেট। লকেটের মতে, ”নারদা-সারদার তদন্ত সিবিআই করছে। সেটা আলাদা বিষয়। তৃণমূলের যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তাঁরা বিজেপিতে স্বাগত। আর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কথাই বলেন। ওঁকে আমরা সিরিয়াসলি নিই না।” যা প্রকৃত অর্থে আরও অপমান জনক। সুতরাং একে একে তৃণমূলের ভেতরেই যে গুরুত্ববান ও গুরত্বহীনের লড়াই টা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে সে কথা বলাই বাহুল্য। এখন এটাই দেখার পি কে’র কোন আশ্চর্য ম্যাজিক এদের কে আবার জনপ্রিয় করে তুলতে পারে!