দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। আর এই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে একের পর এক উন্নয়ণমূলক ঘোষণা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক সন্মেলনে বাংলায় রাজ্য সরকার কী কী কাজ করেছেন তার হিসেব দেন। তিনি একটি পুস্তিকার ও প্রকাশ করেন আর সেখানে তিনি আগামী দিনে কৃষক, তাঁতিদের জন্য কি কি পরিকল্পনা নিয়েছেন সেগুলোও জানান। আজ তথ্য প্রযুক্তি, জমির খাজনা মেটানোর দিন বৃদ্ধি সহ, রাজ্য জুড়ে ৬১৭ টি মেলার ঘোষণা করেন। এরপর যখন তিনি উঠে চলে যাচ্ছিলেন তখন এক সাংবাদিক বলে ওঠেন দিদি একটা প্রশ্ন ছিল। অমনি মুখ্যমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেন “আপনারা সব সময় এত নেগেটিভ লিখছেন কেনো পজেটিভ নিউজ দেখান আমরা যেটা ভালো করছি সেটাও দেখান এতে মানুষের মধ্যে ভালো বার্তা যাবে। এতে মানুষ ভাল থাকবে।” আর এর পরেই তাঁর কাছে প্রশ্ন আসে ‘ গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটি রাজ্য রয়েছে দেশে যারা কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালুই করতে দিচ্ছে না!
এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে “কেউ ব্যক্তিগত পকেট থেকে একটা চিরকুট বার করে বললেন এটা ইম্প্লিমেণ্ট করতে হবে, করতে পারব না। আমরা সংবিধান মেনে কাজ করি। আমার সরকার ১০০% স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করে। আর কেন্দ্র সরকারী প্রকল্প করব কেন। বাংলা এখন সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেল। রাজ্যের টাকা নিয়ে গিয়ে রাজ্যের মানুষ কে ফেরত দিয়ে বলবে আমরা (কেন্দ্রীয় সরকার) দিয়েছি সেটা হবে না।” মুখ্যমন্ত্রী আজ জানান যে মাত্র দেড় কোটি মানুষ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে সুযোগ পাচ্ছে। যেখানে ৬০% টাকা দেয় সরকার আর ৪০% দিতে হয় রোগীকে। সেখানে বাংলায় ১০০% টাকা দেয় সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আর এখন এর আওতায় আসছে ১০ কোটি মানুষ!
প্রসঙ্গত, আজ দুপুরেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে যে ‘আমফান’ দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করবে CAG বা ক্যাগ। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে সরাসরি উল্লেখ না করলেও বলেছেন যে ” দলের কয়েকজন গরীব মানুষ ভুল করে ১০০০, ২০০০ টাকা নিয়ে ফেলেছিল, সেগুলো ফেরত ও দিয়েছে; তা বলে এজেন্সি লাগিয়ে রাজ্যকে বদনাম।” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি আমফানের জন্যে যে ১০০০ কোটি টাকা এসেছিল সেটা রাজ্যকে লোন হিসেবে দেওয়া হয়েছে!
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে আমফানের হিসেব চাওয়া হচ্ছে কিন্তু পিএম কেয়ার্স ফান্ডে কত টাকা জমা পড়েছে সেটার হিসেব কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। “ভাত দেওয়ার নাম নেই কিল মারার গোঁসাই।” তিনি বলেন, যে খেতে দেয় সেই মা হয়। তাই বাংলার মানুষ বিজেপিকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবে, বেশিদিন আর দেরি নেই।
উল্লেখ্য, রবিবারের ‘মন কী বাত’-এ ঋষি অরবিন্দের দর্শন এবং বিস্মৃতপ্রায় কবি মনোমোহন বসুর কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে তা বেশ স্পষ্ট করেছেন তিনি। মোদির এই বাংলাপ্রীতির নেপথ্যে ভোট রাজনীতি থাকলেও আজ তাঁর এই বাংলা বলা নিয়ে মমতা ব্যানার্জী’র প্রতিক্রিয়া ‘টেলিপ্রম্পটারের (TP) দৌলতে এখন এ সবই সম্ভব। গুজরাটি হরফে বাংলা লিখে উচ্চারণ করা কোনও ব্যাপারই নয়।’ তাঁর আরও শ্লেষ, ‘বাংলা বললেই বাঙালি হয় না। আমিও গুজরাটি ভাষা বাংলা হরফে লিখে বাংলা বলতে পারি। টেলিপ্রম্পটারে সম্ভব সব। তাই কেউ বাংলা বললেই তা নিয়ে মাতামাতি করার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, “আমি ভিয়েতনামি ভাষা জানি, আমি মণিপুরি ভাষা জানি, আমি রাশিয়ান ভাষা জানি সামান্য। তিনি আরও বলেন আমি নাগামিস ভাষা জানি, অসমিয় ভাষা জানি, আমি নেপালি জানি, আমি উর্দু ভাষা জানি, আমি গোর্খা ভাষা জানি, আমি নেপালি ভাষা জানি, আমি হিন্দি ভাষা জানি, আমি বাংলা ভাষা জানি। এরজন্য আমি যেখানে যাই সেখানে গিয়ে আমি তাঁদের ভাষায় বলার চেষ্টা করি, তাঁদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি। ভালো লাগে।”
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগে বারবার সরব হন বিজেপি নেতারা, তার জবাবে মমতার সাফ কথা – “দুর্নীতি তো দূরঅস্ত, সরকারের টাকায় চা-ও খান না তিনি। এও জানালেন যে তাঁর লেখা বই বিক্রির, গান বিক্রি, আঁকা ছবি বিক্রিই তার টাকা আয়ের উত্স। তিনি জানান যে তিনি যেখানেই যান নিজের টাকা পে করেন। এর পর তাঁর অভিযোগ আমি একটু আঁকি এত হিংসা? আমার দলকে আমি যদি কিছু দিয়ে সাহায্য করি আপনাদের আপত্তি কোথায়?” এরপরই ঝাঁজি মেরে বলে ওঠেন “সিপিএমের লজ্জা থাকা উচিত্। বিজেপির সবথেকে বড় বন্ধু হচ্ছে সিপিএম। আমি বামপন্থী বন্ধুদের বলছি আপনারা এই সিপিএমকে চেনেন না। বুদ্ধ বাবু, জ্যোতি বাবুর সময় সিপিএম এমন ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, বিজেপি এখন ঠিক করে দেয় একটা সংবাদ চ্যানেলের প্রধান কে হবে। কী লেখা হবে কী লেখা হবে না। দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গিয়েছে। তিনি এও বলেন যে, আমি গুজরাতি ভাষা জানি আমি গুজরাতি ভাষায় কোথা বলতে জানি। আমি যখন গুজরাটে যাব তখন আমি গুজরাতি ভাষায় কথা বলব। আমি ভিয়েতনামি ভাষা জানি, ভিয়েতনাম গিয়েছিলাম তখন শিখেছিলাম।
সেই সাথে আজ কৃষি বিল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান এটা ভিন্ন রাজ্যের বিষয় তবুও তাঁর মতে কেন্দ্রীয় সরকার এই কৃষিবিল এনে ঠিক করে নি। বাজারে এখন আলু আর পেঁয়াজের যা দাম তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই নতুন কৃষি বিলের জন্যে। তিনি জানান, রাজ্যের কাছে যতক্ষণ মজুত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ২৫ টাকা কেজি দরে তিনি আলু দিতে পারবেন। এর পরে কী হবে সেটা কেন্দ্রীয় সরকার জানে। তিনি আজও জানান যে কেন্দ্রীয় সরকার বারে বারে বঞ্চনা করছে। ঘৃণ্য রাজনীতি করছে মোদী-শাহ’র কেন্দ্রীয় সরকার।