দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:মন্ত্রীত্ব ছাড়ার পর এখনও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে কিছুই জানান নি শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে গতদিন তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘যে পথে হোঁচট খাবেন না, সে পথেই হাঁটবেন’। আর এই উক্তি ইতিমধ্যে রাজ্যরাজনীতির নতুন ‘রহস্য’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তিনি গেরুয়া শিবিরে যাবেন না নিজের দল তৈরি করবেন সে বিষয়টি আরও রহস্যজনক হয়ে ওঠে যখন গতকাল হলুদ রঙের পতাকা লাগানো ‘ওম’ লেখা ২০০০ বাইক বাহিনী নিয়ে তিনি রাস উত্সব উদ্বোধন করেন। এবার রাহুল গান্ধি ও শুভেন্দু অধিকারীর বৈঠক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়েছে নতুন জল্পনা।
যদিও এই প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বা শুভেন্দু কেউ কী কোনো শব্দ করছেন না। তবে এই জল্পনাকে নিছক বলেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না দুই শিবিরের কেউই। বরং দুই শিবিরের মধ্যেই একটা হালচাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে; যে কোন মুহূর্তে বড় চমকের খবর আসতে পারে! আর স্বাভাবিক ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী ও রাহুল গান্ধির বৈঠকের সম্ভাবনা ছড়িয়ে পড়াতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এর ফলে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে যেমন অস্বস্তি ঠিকঅস্বস্তিতে পড়েছে বামেরাও। কারণ আদৌ বাম-কংগ্রেস জোট হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই, রাহুল-শুভেন্দু’র একদফা টেলিফোন-বার্তালাপ হয়ে গিয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত্কার বাকি রয়েছে। এই ঘটনা সত্যি হলে শুভেন্দু অধিকারীর কংগ্রেসে ফেরার বিষয়টি সুনিশ্চিত। আর শুভেন্দু বাবু ‘হ্যাঁ’ করলেই দুই নেতার বৈঠক প্রকাশ্যে আসবে বলেই গোপন সূত্রে খবর। তবে এই বিষয়টিতে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বামেদের সঙ্গে জোট বাধার বিষয়টিও।
সূত্রের খবর, বামেদের সঙ্গে হাত মেলানোর বিষয়ে শুভেন্দুর ‘না’ রয়েছে। কংগ্রেস যদি বামেদের সঙ্গ ছাড়তে রাজি হয় তাহলেই হয়তো কংগ্রেসে ফিরতে পারেন শুভেন্দু, এমনটাই জল্পনা। আর এখানেই নাকি আটকে রয়েছে গোটা প্রক্রিয়া। আর এ কারণেই নাকি থমকে গিয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট প্রক্রিয়াও। এখন সামনের দিনগুলোতে কিভাবে এই রহস্য জটমুক্ত হয় সেটাই দেখার।
সূত্রের খবর হিসেবে জানা যাচ্ছে, প্রদেশ কংগ্রেস শিবিরের কাছে এটা পরিষ্কার বামেদের সঙ্গে জোট হলেও তাতে কংগ্রেসের বিশাল কিছু লাভ হবে না। বড় জোর আগেরবারের জেতা কিছু আসন হয়তো এবারেও জেতা যাবে। তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী কংগ্রেস শিবিরে নাম লেখালে তৃণমূল থেকে অন্তত ২ ডজন বিধায়কও কংগ্রেসে ফিরবেন বলা জানা যাচ্ছে। সঙ্গে ফিরবে কংগ্রেসের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক। তাই বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। যদিও এই বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেল রাহুল গান্ধি ও সোনিয়া গান্ধিই।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের একটা বড় অংশই সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধি। আবার রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারির অনুগামী। নানা সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে যে, শুভেন্দু অধিকারি দল ছাড়লে তার সঙ্গে চলে যেতে পারে তৃণমূলের প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল না ছাড়লেও দলের সঙ্গে সজ্ঞানে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী তা বলাই যায়। নিয়ে চলেছেন নিজস্ব ভাবে সমান্তরাল কর্মসূচীও।
তিনি যেখানেই পৌঁছাচ্ছেন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন তার অনুগামীরা। শুভেন্দু অধিকারীর পিছনে যে বেশ ভালো জনসমর্থন রয়েছে সেটা ভালোমতই জানে তৃণমূল নেতৃত্বও। আর তাই বিধানসভা নির্বাচনের নরমে গরমে চলছে শুভেন্দু অধিকারীকে দলে আটকে রাখার প্রচেষ্টা। যদিও এখনও পর্যন্ত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন নি শুভেন্দু অধিকারী। আর এই রকম টানাপোড়েন পরিস্থিতির মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে রাহুল গান্ধির সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বৈঠকের সম্ভাবনা। যা নিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে জল্পনা।