দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কথায় আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার! সারা বিশ্বের জন্যে ২০২০ ‘র শেষ টা তেমন ভাল না হলেও তৃণমূলের জন্য বছরের শেষটা ভাল যাওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখল গতকাল সন্ধ্যে থেকে রাত অবধি চলা ‘ম্যারাথন’ বৈঠক। শুভেন্দু-অভিষেক কে কেন্দ্র করে সৌগত-পিকে-সুদীপের গোল টেবিল বৈঠকে বিগত কয়েকমাস ধরে চলা দলীয় অচলাবস্থা কাটলো বলেই সূত্রের খবর। তবে দলীয় নেতাদের উপস্থিতি থাকলেও আসলে তুরুপের তাসটি খেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই! নিজের মোবাইল থেকে ফোন করেন নি, কিন্তু ‘পরিবারের’ সংযোগ কে সামনে রেখে, অভিষেকের মোবাইল থেকে কথা বলে কী তিনি শুভেন্দু কে বোঝাতে চাইলেন যে ‘শুভেন্দু’ও পরিবারের অঙ্গ? আর এই ‘ইমোশনাল শো’ তেই কী গোলে গেল জমে থাকা বরফ?
তৃণমূল দলের সূত্রে খবর, এদিন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এই বৈঠকে শেষ কথা বলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন থেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের মতে শুভেন্দুকে এক সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন ‘দিদি’। এমনকি একই সঙ্গে মেদিনীপুর টাউনে আসন্ন কর্মসূচিতে তাঁর সঙ্গে মঞ্চে থাকতেও বলেছেন শুভেন্দুকে। বৈঠক শেষে সৌগত রায় নিজে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। কিন্তু উত্তর কলকাতার এক বাড়িতে দু ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকের শেষে তৃণমূল কে যতটা আশাবাদী দেখাচ্ছে ঠিক ততটাই নিরব কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী!
কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে অন্য যায়গায়। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মহল থেকে যা খবর তাতে সৌজন্য সাক্ষাতকার, কথাবার্তা চলেতেই পারে কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে নিরাবতাই সম্মতির লক্ষণ। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু তিনি দল ছাড়েননি। তিনি আগেও জানিয়েছিলেন যে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত চাপানোর কারণে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। তবে ‘অনুগামী’দের বক্তব্য শুভেন্দু বাবু যতক্ষণ না নিজের মুখ থেকে সেই কথা স্বীকার করছেন ততক্ষণ কেউ ই কিছু বিশ্বাস করছেন না।
অন্যদিকে সূত্রের খবর, এই বৈঠকে সৌগত রায়, সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সাথে সরাসরিই কথা হয়েছেন। এমন কী মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের তরফ থেকেও কোনো খবর পাওয়ায় যায় নি। শুভেন্দু বাবু কাল রাত দেড়টা নাগাদ ফিরেছেন আর এখনো অবধি তিনি একটাও কথা বলেন নি। তাঁর বাবা শিশির অধিকারীর মতে “শুভেন্দু দলের জন্যে কাজ করেছেন। সব ঠিকঠাক মিটে গেলেই ভালো।” শুভেন্দুর তরফে কোনও বার্তা না মিললেও, শোনা যাচ্ছে যে তিনি যে পাঁচ জেলায় তিনি কাজ করতেন সেখানে কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে চান।
তাহলে কী দল শুভেন্দুর দাবি মেনে নিতে চলল? বাঁকুড়া’র মঞ্চ থেকে দেওয়া মমতার হুঁশিয়ারি কী আদতে রাজনৈতিক গিমিক! এই বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শুভেন্দু অধিকারী অভিমান করে সরে আসতেই তৃণমূল বুঝতে পেরেছে কিভাবে সারা বাংলা জুড়ে ‘দিদি’র সমান্তরাল শক্তি গড়ে উঠছে। বিজেপি বাংলায় দাঁত নখ হিন সার্কাসের বাঘ। যে কারণে মোদী-শাহ’র মত ‘রিং-মাষ্টার’দের ময়দানে নামতে হচ্ছে। আর এখানেই ভয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদি শুভেন্দু বিজেপি তে যোগদান করেন, তাহলে কী বাংলায় তাঁর জয় অবধারিত? কারণ অনেকেরই বিশেষ করে তাঁর অনুগামীদের মনে হচ্ছে ‘দিদির’ পর একমাত্র মুখ ‘শুভেন্দু’ই। তবে শুভেন্দু বাবু এখনো নিজেই নিজের রহস্য জিইয়ে রেখেছেন। আজ সময় গড়ালে বোঝা যাবে জল আসলেই প্রবাহিত হচ্ছে না হচ্ছে হচ্ছে বলে ‘ইল্যুশন’!