দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গত মঙ্গলবারের ‘ম্যারাথন’ বৈঠক বৃথা গিয়েছে। মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায় পরেছেন মহা বিপদে। দলের থেকে তাঁকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু কে বোঝানোর জন্যে, প্রথম দুটো বৈঠক বিফলে গেলেও, তৃতীয় বৈঠক শেষে তিনি কিছুটা আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন (যেমনটা মিডিয়াতে তিনি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন)। আর তাঁর এই ছোট্ট ভুল (শুভেন্দুর চোখে) দলের ক্ষেত্রে কিন্তু ‘শূলের’ মত বিপদ্দ্জনক হয়ে দাঁড়ালো। শুভেন্দু কে যতটা বাগে নিয়ে এসেছিলেন পিকে-অভিষেকের যুগল বন্দী, সেই পুরো পরিশ্রমটাই জলে গেল।
অন্যদিকে একে একে দায়িত্বভার ছেড়ে ছেড়ে শুভেন্দু যেভাবে এগচ্ছেন তাতে কিছুটা বাঁধাকপির পাতা ছাড়ানোর মতো। এই বুঝি তল পেলেন বলে মনে হচ্ছে অমনি দেখলেন আর একটা পাতা ছড়িয়ে ফেলেছেন শুভেন্দু। অন্য দিকে তৃণমূল সুপ্রীমোও বুঝতে পারছেন যে কোথাও তাঁর ‘ভূমিপুত্র’ তাঁর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর সেই নাগালহীন শুভেন্দু কে আরও কিছুটা দূরে সরিয়ে দিতেই কী এবার শাসকদলের আরও এক দায়িত্ব থেকে অপসারিত করা হলো শুভেন্দু অধিকারীকে? সূত্রের খবর তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টরের পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়েছে। আর এইচআরবিসি’র কল্যাণের মতই আবার ওই পদে পুণর্নিযুক্ত করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
কিন্তু এখনো একটা সুতো আটকে রয়েছে ‘রেবেল’ শুভেন্দুর সাথে দলের। তিনি এখনও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ কিংবা বিধায়ক পদ ছাড়েননি। কিন্তু ভোট মরসুমে কল্পতরু হয়ে যাওয়া মমতাময়ী মাননীয়া তাঁর উপর এতটুকুও ভরসা রাখতে নারাজ। দলীয় সূত্রে খবর, গত শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পরই তাঁকে কার্যত দল থেকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া তিনি শুরু করে দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কালীঘাটের বাড়িতে দীর্ঘ জরুরি বৈঠকে শুভেন্দুকে বাদ রেখেই পাঁচ নেতার উপর দায়িত্ব বাড়িয়ে ভোটের ময়দানে নামানোর ব্লু প্রিন্টটাও তৈরি করে ফেলেছিলেন।
আর এবার সেই নীল নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিল দল। উল্লেখ্য, গত জুন মাস থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টরের পদে বসানো হয়েছিল। কিন্তু পুজোর ঠিক আগে থেকেই তিনি নিষ্ক্রিয় বলে ফেডারেশনের মধ্যে অভিযোগ উঠছিল। তা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছতে বিশেষ দেরিও হয় নি। আজ বৃহস্পতিবার, তিনি নবান্নে তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। সূত্রের খবর, এরপরই নবান্ন থেকে শুভেন্দুকে ফেডারেশনের মেন্টর পদ থেকে সরিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আর এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে যখন গড়বেতার মঞ্চ থেকে শুভেন্দু বলছেন যে তিনি রাস্তায় নেমেছেন বলে অনেক ফ্ল্যাটবাড়ির লোকেদের অস্বস্তি হচ্ছে তখন তাঁর অভিযোগের তীর যে কালিঘাটের দিকেই সেকথা বুঝতে কারোরই আর অসুবিধা হচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শুভেন্দু তো আজ থেকে রাজনীতি করছেন না। তিনি তাই ভালই জানেন কোন তাস তা কখন খেলতে হয়। তিনি নিজেই চাইছেন দল তাঁকে জোর করে বহি:ষ্কার করুক। আর সেকারণেই আজ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তাঁর অনুগামীদের পোস্টারে এটাই দৃশ্যমান হয়েছে “পদ নয় জনগণের জন্যে কাজ করি”। তাহলে কী আসন্ন নির্বাচনে মমতার পথের কাঁটা সেই নন্দীগ্রাম! সে কথা আগামী ৬’ই ডিসেম্বর অনেকটাই পরিষ্কার হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।