28 C
Kolkata
Wednesday, March 29, 2023
More

    মমতার পথে যাওয়া হলনা শুভেন্দুর, বিজেপি বলছে, “তৃণমূলের ভয়টাই আমাদের জয়” – দেবারুণ রায়

    মমতার পথে যাওয়া হল না শুভেন্দুর। ইচ্ছে ছিল যথেষ্টই কিন্তু উপায় ছিল না। মমতা যেভাবে রাজ্যে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস গড়েছিলেন সেই পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার বঙ্গের রাজনীতির কোনও মিল নেই। তাছাড়া, তৃণমূল যেমন কংগ্রেস নয় তেমনি শুভেন্দু অধিকারীও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। অন্য সব কিছু বাদ দিলেও বলতেই হবে,  কংগ্রেস ভাঙার আগে সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর এক যুগের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় ছিল হাতে। বিধায়ক না হয়েও রাজ্য কংগ্রেসে নিজের বিপুল প্রভাবের জেরে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। কংগ্রেসের সনাতনী ঘরানার  রাজনীতির সঙ্গে তিনি একমত হতে না পেরে বেসুরো গাইলেও ১৯৯১ থেকে ‘৯৮ পর্যন্ত সংসদে কিছুদিন কংগ্রেসের  মন্ত্রী ও বাকি সময় কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের শরিক ছিলেন।

    See the source image
    মমতা ব্যানার্জী । সংগৃহীত চিত্র

    অর্থনৈতিক সংস্কার নীতির প্রতিরোধের পাশাপাশি ওই সময়ে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সরকারকে বাঁচার রসদ যুগিয়েছে বাম দলগুলো। আবার কংগ্রেস সরকার গরিষ্ঠতা অর্জনের পর সংস্কার ও দুর্নীতি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেও বিজেপিকে রোখার রণকৌশল ছ’কেছে। বিশেষ উল্লেখ করার মতো ঘটনা হল, কংগ্রেসের সমর্থনে দেবগৌড়ার ও গুজরালের সরকার চলাকালীন কংগ্রেসেই ছিলেন মমতা। ‘৯৬ থেকে ‘৯৮ প্রধানত সিপিএম আর জনতাদলই ছিল যুক্তফ্রন্ট সরকারের মূল স্তম্ভ।  রাজ্যে তীব্র সিপিএম বিরোধী অবস্থানে অবিচল থেকেও কেন্দ্রের মেরুকরণের রাজনীতিতে সক্রিয়ই ছিলেন। ‘৯৯তে রাজ্যে কংগ্রেসকে সিপিএমের বি টিম আখ্যা দিয়ে বেরোলেন এবং শিবির বদলে এনডিএ সরকারে শামিল হলেন।

    See the source image
    প্রণব মুখার্জী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি : সংগৃহীত।

    এই আগাগোড়া প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে মতাদর্শ ও রণনীতিগত মতপার্থক্য ছিল মমতার। প্রদেশের সভাপতির পদটি নিয়ে  কংগ্রেসের  নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া যতটা ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক অবস্থান। এই অবস্থানের মধ্যে দূরদৃষ্টি কতটা ছিল, বা মমতার ওই অবস্থানের ফলে সিপিএমের শাপে বর হয়েছিল কিনা সেসব প্রশ্নের মধ্যে না গিয়েও বলা যায়,  শুভেন্দুর রাজনীতি সেদিনের মমতার রাজনীতির সঙ্গে অনেকটা মেলেনা। সেজন্যই সার্বিকভাবে তৃণমূল জনতার কাছে শুভেন্দু অধিকারীর উচ্চাশার সঙ্গে সেদিনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতা হওয়ার জেহাদ এক নয়।

    সেদিন মমতার সঙ্গে দল ছেড়ে আসাদের  মধ্যে  কেউ কেটা  ছিলেন অজিত পাঁজা। যিনি ছিলেন রাজীব গান্ধীর জমানা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বেশ কিছুদিনের সাংসদ ও প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। পেশায় ব্যারিস্টার। শেষ জীবনে তৃণমূলে ব্যাকবেঞ্চার বনে যাওয়া অজিত পাঁজার দিকে ফিরেও তাকানোর সময় ছিলনা যাঁদের,  তাঁদের অন্যতম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদানীন্তন ব্লু আইড বয় শুভেন্দু। অবশ্যই শুভেন্দুর এটা কোনও অপরাধ নয়। অপরাধ করে থাকলে করেছেন বড়রা। কিন্তু এমন তো সব দলেই ঘটে। জমানা যার মানুষ ও ঈশ্বর তাঁরই বন্দনা করেন। তাঁকে নিরঙ্কুশ করে তোলেন।  প্রস্তুত হতে বলেন চূড়ান্ত ও একক বিচারের জন্য।

    আরও পড়ুন: এবার কী তৃণমূলই চাইছে শুভেন্দু দল থেকে বেরিয়ে যাক! নতুন পদক্ষেপে সেটাই দৃশ্যমান

    শুভেন্দু অধিকারীর আজকের বিচ্ছিন্নতার ভবিষ্যত কী তা নিয়ে সংশয় আছে তাঁর নিজের ও যাঁদের সঙ্গ ছাড়ছেন তাঁদের। মানুষ মানে আম আদমি তো আবেগের স্রোতে ভেসে যায়।  এখন কে  কতটা খরস্রোতা তা বলবে একুশ। কিন্তু  আপাতত বিশে বিশে ( ২০২০ ) বিজেপি জানে সবটা। অবশ্যই পুরোটা বোঝেন মুকুল।  নিজের জীবন দিয়ে বুঝতেই হয়েছে। না বুঝে আর কী করা। বিজেপির কাছে মুকুল ছিলেন তৃণমূলের মূল চাবি। কিন্তু বিজেপির মতলব মমতার মত আর কে বোঝেন তাঁর দলে ? সুতরাং ঐ চাবিতে দেরাজ খুললে এতদিনে সব ঘাসফুল গরুতে খেয়ে নিত।

    বিজেপি কি এটা কম বোঝে ? কখনও নয়। তারা জানে, কাকে কতটা দাম দিতে হয়। শুভেন্দুর লাগাতার জল মাপা দেখে দুপক্ষের দুটো প্রতিক্রিয়া। তৃণমূল তৃপ্ত , মেদিনীপুরই তপ্ত নয়। লোকাল “দাদা”ও দৃপ্ত নয়। নন্দীগ্রামে গিয়ে কী হল ? মনে হল বিজেপির জাঁক দেখে,  এ যেন সেই দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন।  কতদিন হল, গুনে দেখুন। “মনে পড়েছে….. ” বলে বিশাল চিৎকারে প্রশ্ন।  হ্যাঁ দিদিকে ! একেবারে প্রাণভোমরা নিয়ে হ্যাঁচকা টান মনে হল। তারপরই শুভেন্দুর ঘোষণা,  অরাজনৈতিক মঞ্চে রাজনীতির কথা নয়। মানে তো নেতাকে দেওয়া  কৈফিয়ৎ। এতে শাস্তি হয়না। মানে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝে নিলেন দম নেই এবং নো সমঝোতা। 

    See the source image

    প্রথমে ফিরহাদ নন্দীগ্রামে। তারপর ছিরামপুরে দুর্বাসা। ছি ছি। শেষ পর্যন্ত তুই তোকারি ! চলে যা। বাড়ি  ফিরতে পারবিনা । হলও তাই শুভেন্দু আর বাড়ি  ফিরতে পারলেন না। আড়ি করে দিলেন।  কোনও রাজনৈতিক উত্তর এলনা। আই প্যাক গেল শান্তি কুঞ্জে। শিশির অধিকারী কিছুতেই  বিবেকের ভূমিকা নেবেন না। ছোটবেলা থেকে অনেক যাত্রা দেখেছেন। কিন্তু কে কার কথা শোনে। আই প্যাক তাঁর কানের কাছে   প্যাঁক প্যাঁক করল ঘন্টা দুই।

    আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী কি কংগ্রেসে যোগদান করছেন! আঁচ পাওয়া গিয়েছে রহস্যময় ফোনালাপে!

    তারপর ঋষি নারদের মর্ত্যে অবতরণ। তথাগত আছেন তথাগততেই। জাতক ভিন্ন ভূমিকায়। এবং এবার দীপ জ্বেলে যাই। আই প্যাক সেখানেও ঢুকে গেল।দীপ জ্বেলে যাই বৈঠকে চারদিন সময় নিয়েছিলেন শুভেন্দু। আই প্যাকের প্যাকেজ,  এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরেও। সুতরাং দমদমের খবর, ওঁর  দল করার দম নেই। আর আসল কিন্তু বিজেপির মন কি বাত। একুশ হাতা জল গেলানোর জন্যে তাঁরা হাজির দীন দয়ালের প্রেস কনফারেন্স রুমে। দশ তারিখ স্যানিটাইজার মাখানো ফুল নিয়ে ভালমানুষ জগৎ নাড্ডা কিছুক্ষণ  আড্ডা দেবেন পত্রকারদের সঙ্গে। কৈলাস মুকুলের কানে কানে কিছু বলছেন ছবি উঠবে। আর প্রসাদী লাড্ডু গুঁজে দেবেন নবাগতের হাসিমুখে। 

    কিন্তু আর যাই করুন ভাল বল তৈরি করেন। রাইট ইনে অনেকদিন খেলছেন। বলবেন, দাদা, এ তো আমাদের পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। ওরা আমাদের টিমে সবাই আসবে কেন। সেমসাইড করলে তো ভালই। কমসে কম খারাপ তো খেলবে। ওটা করলেই হবে। নচিকেতার গান শুনেছে বিজেপি। বলছে এটাই আমাদের জয়। ওরা ভয় পেয়েছে।  ভয় ভয় ভয়, পাছে ভোট নষ্ট হয়।

    আরও পড়ুন: বেনচাপাড়া কঙ্কাল কান্ডের পর্দা ফাঁস করার হুশিয়ারি দিলেন সুশান্ত ঘোষ! শাসক দলের অভ্যন্তরে অস্বস্তি!

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...

    মাঝে মাঝেই জ্বরে ভুগছেন ? মুক্তি পেতে ভরসা রাখুন হোমিওপ্যাথিতে

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : জ্বরের অনেক কারণ থাকতে পারে তৎসহ জ্বরের বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। নীচে জ্বরের উপসর্গ অনুযায়ী...

    ৩রা এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর। এবার মহাবীর জয়ন্তীতেও ছুটি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। শনিবার...