দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গতকাল রাত থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনা এবার কি তবে ‘বিদ্রোহী’র ভূমিকাতে দীর্ঘদিনের কর্মী অতীন ঘোষ? তৃণমূল সুপ্রীমোর গতকালের বৈঠকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা বাদেই মুখ খুললেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। গতকাল একটি প্রথমসারীর সংবাদ মধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ”রাজনৈতিক জীবনে বঞ্চিত হয়েছেন, কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছে। তাই এখন হতাশা বাড়ছে। শুভেন্দু অধিকারীর মতো জননেতা দল ছাড়লে তৃণমূলের ক্ষতি হবে।” আর তাঁর এই প্রকাশ্য মন্তব্য তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন দশক ধরে উত্তর কলকাতা থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত অতীন ঘোষ দীর্ঘদিন ধরেই মেয়রের পদপ্রার্থী ছিলেন। যদিও তীয় মেয়র হতে পারেননি। আর কিছুটা সেই ক্ষোভের কথাই এবার তাঁর গলায়। শুক্রবার এই বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, “এত বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলিনি। অনেক বঞ্চনার স্বীকার হতে হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে। আমাদের মতো কর্মীরা আশা করেন, দলের শৃঙ্খলা যাঁরা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা না হওয়ায় ক্ষোভগুলি প্রকাশ্যে আসছে।”
গোপন সূত্র মারফত যা জানা গিয়েছে তাতে, কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে অতীন ঘোষকেই মেয়র হিসেবে ‘মুখ’ করে ময়দানে নামতে চাইছে বিজেপি। এই বিষয়ে তাঁর সাথে কথাও হয়েছে বলেই খবর। তবে পরিসিংখ্যান বলছে অতীন ঘোষ পুরনিগমের বরাবরই জনপ্রিয় মুখ। তাঁর ঝুলিতে বহু সাফল্য রয়েছে। আর সেই রেপুটেশনকেই বিজেপি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জিততে চায়। এই বিষয়ে শোনা গিয়েছে উত্তর কলকাতার বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদকের সাথে তাঁর কথাও অনেকটা এগিয়েছে।
গতকাল অতিন ঘোষ কিছুটা হতাশ সুরে বলেন, “দলের দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে যাঁরা দলকে, নেত্রীকে চূড়ান্ত আক্রমণ করেছেন, তাঁরাও দলে এসে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন! এসব যন্ত্রণা দেয়। ফলে আমাদের মতো যাঁরা দলটা শুরু থেকে করেছি, আজ তাঁরা হতাশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কিছু মানুষের উপরে নির্ভর করেন। তাঁরা যদি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতেন, তাহলে দলের আজকে এই অবস্থা হত না।’ বিশেষজ্ঞদের মতে তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দিকেই ইঙ্গিত পূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল কিছুটা রাখঢাক না করে অতীন ঘোষ দাবি করেন, “কোনও দিন প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট টিমের অধীনে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা নেই। আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষক, পথপ্রদর্শক ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা।” তিনি যে প্রশান্ত কিশোরের হস্তক্ষেপ নিয়েই বিব্রত সেটা তাঁর এই মন্তব্যে পরিস্কার। এছাড়া বিধায়ক মিহির গোস্বামীর দল ছাড়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলেন, “মিহিরের মতো ভালো, সৎ ছেলে কেন দল ছেড়ে চলে গেলেন এবং দল কেন তাঁকে ধরে রাখতে পারল না, এটাও আমার কাছে খুব বিস্ময়ের।”
এইও প্রসঙ্গে বলে রকহ দরকার যে, শুভেন্দু অধিকারীর আকস্মিক বিদ্রোহ, বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের ক্ষোভপ্রকাশ, বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বিজেপিতে যোগদানের পর দলীয় স্তরের বহু নেতাই বেসুর গান গাইতে শুরু করেছেন। উপরন্তু গতকাল তৃণমূল সুপ্রীমো যেভাবে বলেছেন যে ‘যার যার যেতে ইচ্ছে করে বেরিয়ে যান। আমার চার জেনারেশন তৈরি আছে!’ এই ব্যবহারে দু:খ পেয়েছেন বহু বর্ষীয়ান নেতা ও কর্মীরাও। ফলে এবার উত্তর কলকাতার নেতা অতীন ঘোষের গলাতেও যখন সেই একই সুর, তখন আগুন যে ভালই ছড়াচ্ছে সেটাই আঁচ করতে পারছে দলের নিচুতলার কর্মীরাও। এখন এটাই দেখার আগামী কাল শুভেন্দু অধিকারী কী বক্তব্য রাখেন! কারণ কাল তিনি যা পদক্ষেপ নেবেন সেখান থেকেই রাজ্য রাজনীতি ইউটার্ন নেবে বা দৌড়বে নতুন দিশাতে।