দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গত সপ্তাহে তমলুকে শুভেন্দুর অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে চোখ ঘোরাতে হলদিয়ায় আয়োজিত হয়েছিল তৃণমূলের মিছিল। আর সে মিছিলে কিছুটা চমক হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুজিত বসু। মূলত: ওই মঞ্চ থেকে ‘প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী’ বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। আর সেই বার্তা যাদের মাধ্যমে প্রকাশিত, বলা চলে ‘যাকে’ শীর্ষ নেতৃত্বদের ‘আস্থাভাজন’ বলে বোঝা যাচ্ছিল। সেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবার ‘বেসুরো’ গলায় কাঁদুনি গাইছেন।
উল্লেখ্য আজ শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে রাজীব বলেন,” রাজনীতির মঞ্চকে অনেকেই নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন। এখন স্তাবকতার যুগ। হ্যাঁ তে হ্যাঁ এবং না তে না বলতে হবে। তবেই আপনার নম্বর বাড়বে। আমি সেটা পারি না বলে আমার নম্বর কম”। তবে এদিনের বক্তব্য নতুন নয় এর আগেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশানা করেছিলেন। ফলে আজকের এই বক্তব্যে ফের সেই স্মৃতিরোমন্থন। এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে থেকে গরিব মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।
শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হন নি রাজীব। বরং মঞ্চ থেকে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,” ভালো কাজ করতে গেলে পেছন দিক থেকে টেনে ধরে রাখা হচ্ছে। যারা ঠাণ্ডা ঘরে বসে থাকে তারাই সামনের সারিতে আসছে। অথচ যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করে তাদের গুরুত্ব নেই। যোগ্যতা নিয়ে কাজ করলেও পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমাকে এসব কষ্ট দেয়, দুঃখ দেয়। রাজনীতিতে যাদের দেখতে চায় না মানুষ, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাঁদের অনেকেই আজ সামনের সারিতে।”
রাজীবের আজ আক্ষেপ মানুষ এই কারণেই রাজনীতি বিমুখ। তিনি বলেন “মানুষ অনেক আশা করে একজন জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচন করেন। তাঁর ওপর ভরসা করেন। কিন্তু কি হচ্ছে সবাই দেখছেন।” উল্লেখ্য দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বলেছেন, রাজ্যে কর্মসংস্থান কিভাবে বাড়ছে। লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে চাকরি পাচ্ছে। কিন্তু আজ রাজীবের বক্তব্যে স্পষ্ট তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পরিসংখ্যানের উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে। তিনি এও বলেন,”যারা মানুষকে বোকা ভাবেন তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।”
বর্তমানে রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর দল বদল নিয়ে জোর জল্পনা। শুভেন্দু যে দল ছাড়ছেন এটা কার্যত পরিষ্কার। আর আজ সেই বিষয় নিয়েও বিশেষ মন্তব্য রাজীবের- “নেতাদের এত ক্ষোভ বিক্ষোভ কেন বাড়ছে সেটা ভাবতে হবে। যত তাড়াতাড়ি ভাবা হবে ততই মঙ্গল।” তবে অতীন বাবুর মতই তিনিও একমত যে শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়লে দলের
ব্যাপক ক্ষতি। একটা শূন্যতার সৃষ্টি হবে।
একটা সময় তৃণমূলের সঙ্গে থাকলেও বর্তমানে দলের সঙ্গে রাজীবের দূরত্বও বেড়েছে বলেই সকলে মনে করেন। তাই সংগঠকদের পাশাপাশি উপস্থিত মানুষদের উদ্দেশ্য করে রাজীবকে এসব কথা বলতে শোনা গেলেও, সকলেই বুঝতে পারছেন তাঁর নিশানায় কারা কারা রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন একটাই, তিনিও কী শুভেন্দু-মিহির-শীলভদ্র-অতীনের পথেই পা বাড়াবেন? এই উত্তর মিলবে হয়তো খুব শিগগিরই।