দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: তিন বছর ধরে বেপাত্তা, রাজ্য পুলিশের এসআই খুনের দায়ে অভিযুক্ত , UPA আইনে দোষী বিমল এর যাবতীয় ময়লা কী তবে ধুয়ে গেলো? এই বছরের পঞ্চমীতে রাজ্য সরকারের ‘গুরুং’ বোধন কারোর নজর এড়ায়নি। নাহলে পুলিশের সামনেই সাংবাদিক সম্মেলন অথচ পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না, এমনটা কেমন যেনো ‘কিন্তু কিন্তু ভাব’ ছিল। তবে রাজ্য-গুরুং চুক্তি যে এক কথায় পাক্কা সেটা বোঝা গেল যখন বিনয় তামাং এর জরুরী নবান্ন তলব হলো। এর পর কোথায় যেন আমে দুধে মিশে গেলো। আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খেলো সেই পুলিশের যুবা ছেলেটি, যে আর নেই! একটা প্রশ্ন কিন্তু এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই গুলিটা গুরুং এর পিস্তল থেকেই বেরিয়েছিল তো?
তিন বছর আগে পাহাড় যখন অশান্ত তখন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে দার্জিলিংয়ের চকবাজারে জনতার ঘেরাটোপে মারধরের কথা আজও মনে করিয়ে দিলেন বিমল গুরুং। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর শিলিগুড়ির গান্ধী ময়দানে সভা করতে গিয়ে আজ হুঙ্কার, “গোর্খাদের সঙ্গে প্রতারণা করলে, তার ফল কী হয়, রাজু বিস্তা, দিলীপ ঘোষদের ভালভাবে বুঝিয়ে দেব।” আজ সকালে রেল রোকো আন্দোলনের জন্যে সময় মত পৌঁছতে পারেননি সভায়। তবে রাজ্য পুলিশের বদান্যতায় সভায় পৌঁছে যে ছাব্বিশ মিনিট বক্তব্য রাখলেন তার ৯০%ই ছিল, বিজেপির প্রতি হুংকার।
যদিও তিনি তাঁর অজ্ঞাতবাস পর্বের শেষে আবির্ভূত হয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিলেন। জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকুণ্ঠ সমর্থন করবেন তিনি। আর সেই সাথে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে অঘোষিত জোটে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তবে কী জট পাক্কা তাঁর? যদিও এই প্রত্যাবর্তনকে মোটেই ভাল নজরে দেখেনি বর্তমানের মোর্চা নেতৃত্বরা। মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং, জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপারা গুরুংয়ের অস্তিত্বই কার্যত উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন গুরুং তাঁদের কাছে ‘ক্লোজ় চ্যাপটার।’
তবে গুরুং এর রবিবারের শিলিগুড়িতে জনসভার পরিকল্পনা করার আগে ডেপুটি রোশন গিরিকেও পাঠান পাহাড়ে। তবে পাহাড়ে ওঠার আগে গুরুং নিজে সমতলের গান্ধী ময়দানে সভা করলেন। আর আজ সেই মাঠে ভিড় দেখে বোঝা গিয়েছে, তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি পাহাড়ের মানুষের কাছে। আজ সভা থেকেই তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, “নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাদের সমস্যা সমাধানের। কিন্তু কোনও কিছু হয়নি। অনেকবার আলোচনা হয়েছে, ফল শূন্য। গোর্খাদের কথা ভাবেইনি কেউ। গত ১২ বছরে পাহাড়ে বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এবার রাজু বিস্তা, দিলীপ ঘোষদের বুঝিয়ে দেব, গোর্খাদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ফল কী হয়।”
তবে আজ তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে আগামী নির্বাচনে তৃণমূলকে বেশি ভোটে জেতানোর আহ্বান জানান। বলেন, “আমরা সবরকমভাবে তৃণমূলের হয়ে কাজ করব এখানে। আপনারাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিততে সাহায্য করুন।” তবে এদিন শিলিগুড়ির বুকে কোনওভাবেই গুরুংকে বাধা দেওয়া হয়নি। আর তা দেখে খুব স্বভাবিক ভাবেই বিরোধীরা বলছেন, অমিতাভ মালিক কে সামনে রেখে রাজনীতির খেলাটা নগ্ন হয়ে মানুষের সামনে এসে গিয়েছে। তৃণমূল যে নিজেই নিজের কফিনে পেরেক ঠুকছে সেটা প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে শিলিগুড়িতে সভা করতে গিয়ে পুলিশ, প্রশাসনের বাধা পেরিয়ে তা করতে হয়েছে। আর এই মুহূর্তে UAPA মামলায় অভিযুক্ত গুরুংকে রবিবারের সভা করতে কোনও বাধার মুখেই পড়তে হল না, উল্টে পুলিশের সহায়তা মিললো! আর এ নিয়েই প্রশ্ন রাজনীতিক ও জনতা জনার্দনের!