দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: প্রায় নয় বছর জেলে বন্দী থাকার পর সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে নিজের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতাতে ঢুকতে পারলেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। উল্লেখ্য বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে সুশান্তকে এতদিন জেল বন্দী রাখা হয়। গতকাল প্রায় ২০০০ বাইক বাহিনী নিয়ে জেলায় ঢুকে প্রথম সভা থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। আর সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি দেখে কী এখন থেকেই ভয় পেতে শুরু করল তৃণমূল!
এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় যখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি অজিত ভুঁইয়া সরাসরি সিপিএমের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,” শুধু মুখে মেকি বিজেপির বিরোধিতা করবেন না। যদি সত্যিই বিজেপির বিরোধিতা করতে হয় তাহলে দলের কর্মী-সমর্থকদের বলুন তাঁরা যেন সিপিএমকেই ভোট দেন”। অনেকেই বলছেন আসলে ‘বিজেপি’কে রুখতে সিপিএম এর এখন খুব প্রয়োজন তৃণমূলের। অথচ কদিন আগেই নবান্নে বসেই মাননীয়া বলেছেন সিপিএম হচ্ছে বিজেপির থেকেই ভয়ংকর। ওরাই এই রাজ্যের ক্ষতি!
যদিও তৃণমূলের এই বামে দের রাম বলে ভাবা তা শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন থেকেই। অনেক তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি রাজ্যে সিপিএম তথা বামেদের ভোটের সিংহভাগ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। ঠারেঠোরে মমতা বারবারই প্রকাশ করেন যে, সিপিএম তথা বাম সমর্থকদের ভোট যেন বিজেপি না পায়। আসলে তৃণমূলরা চাইছে ভোট ভাগ হোক। আর ভোট ভাগ হলেই যে তৃণমূলের সুবিধা হবে আর সেই কারণেই যে এদিন অজিত ভুঁইয়া এমন কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যপুলিস এসকোর্ট করে পৌঁছে দিলেন গুরুংকে! তাহলে কী রফা পাক্কা তৃণমূল-জিজেএমএম এর মধ্যে?
এদিকে প্রায় নয় বছর পর জেলায় ফিরেছেন সুশান্ত। রীতিমতো শোভাযাত্রা করে তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন জেলা সিপিএমের নেতা কর্মীরা। ছিলেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। সুজন চক্রবর্তী, তন্ময় ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পরে সভা মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুশান্ত বলেন, “বিজেপি আমাদের মূল শত্রু। তাদের পরাস্ত করতেই হবে।” সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন যে, কঙ্কাল কাণ্ডে চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।সুশান্ত ঘোষ বলেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে জেলে ভরে দেওয়া হয়েছিল। এলাকার বাইরে করে দেওয়া হয়েছিল। এবার একে একে তাদের মুখোশ খুলছে। আজ যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট মানুষ কোন মিথ্যাকে গ্রহণ করেননি। কোন রকম প্রচার ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিল। আজ বাংলার রাজনীতিতে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সংযোজন হবে এখন থেকেই দাবি তার।
তিনি এও জানান যে মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। তিনি বলেন তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা অটুট রয়েছে। মিথ্যের কালি সহজে মুছে যায় সত্যের কালি থেকে যায়। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে শুরু। ২০২১ এ আবার বামফ্রন্ট আসবে বলে দাবি তার। গতকাল সুশান্ত ঘোষ কে নিয়ে গড়বেতার মানুষের মধ্যে যে উন্মাদন দেখা গিয়েছে, সেখান থেকেই স্পষ্ট মুখে ভোট ভাগের গল্প বললেও ভোটের আগে সুশান্ত ঘোষের নিজের গড়ে ফিরে আসা, রাজ্য বামেদের জন্যে যে অনেকটাই অক্সিজেন সেটা বলাই বাহুল্য।