দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে রণংদেহি মুডে তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তিনি যেমন শুভেন্দুকে নাম না করেই বুঝিয়ে দিলেন তিনি ও তাঁর দল মনে প্রাণে তাঁকে ত্যাগ করেছেন তেমনি নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ কেও এক হাত নিলেন। বাঁকুড়ার সভা যদি দলকে সতর্ক করার জন্যে হয়ে থাকে তাহলে মেদিনীপুরের এই সভা বিধানসভা নির্বাচনের জয়ঢাক বাজালেন তিনি স্বয়ং।
আজ তিনি দৃপ্ত সুরেই বলেন, “করোনার জেরে অনেক বিধায়ককে আমরা হারিয়েছি। অন্য নানা কারণেও বিধায়ক হারিয়েছি।” এই অন্যান্য নানা কারণ বলতে যে তাঁর ইঙ্গিত দলের গোষ্ঠী কোন্দল বা বিদ্রোহ, সেটা কারোর বুঝতে অসুবিধা নেই!
আজ তিনি উত্তরভারতে চলা কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ডাকা আগামীকালের ভারত বন্ধ প্রসঙ্গে বলেন, “এই মেদিনীপুরের মাটিতেই আন্দোলন হয়েছে। আমরা অতীত ভুলি না। আজ মেদিনীপুরের সব বিধায়করা এসেছেন। গোটা ভারতের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছি।” তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ” নবান্নের ধান ছুঁয়ে শপথ করলাম। কৃষকদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছো। দাঙ্গা লাগাচ্ছ, মিথ্যে বলছো, দল ভাঙছো, জেনে রেখো তোমাদের উত্খাতের সময় এসেছে। আগে নিজেদের বাঁচাও।”
এদিন তাঁর অভিযোগ করেন, নতুন কৃষি আইনের মাধ্যমে কেন্দ্র কৃষকের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূলের কণ্ঠ রোধ করতে ব্লকে ব্লকে বিজেপি নতুন লোক নিয়োগ করেছে। কারা কী কাজ করছে তার ওপর নজরদারি করতে হবে। এমনকি সংবাদ পত্র ও টেলিমিডিয়া কনট্রোল ও করছে বিজেপি। তাই আগামীকাল অর্থাত্ ৮’ই ডিসেম্বর থেকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করছে। তিনিও সেই আন্দোলনে যোগ দেবেন।
রাজ্যজুড়ে বেড়ে চলা সবজির দাম প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য “আগে আলুর দাম বৃদ্ধি হলে রাজ্য ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু এখন তা নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের নেই। তিনি ডায়াসে রাখা সুতোয় বাঁধা বেগুন,পেঁয়াজ তুলে ধরে বলেন, দেশে আলু, পেঁয়াজ, মূলোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দিল্লই সব খাবে, রাজ্য কিছু খেতে পারবে না।
আজ তিনি অভিযোগ করেন যে বিজেপি সরকার ভাঙছে, ঘর ভাঙছে। তিনি বলেন- “বিজেপি তুমি তৃণমূল কংগ্রেসকে কিনতে পারবে না। মার খেতে খেতে এসেছি এই জায়গায়। তৃণমূলকে কিনতে পারবে না বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস ঠুনকো নয়। বহিরাগতদের বাংলা দখল করতে দেব না হুঙ্কার ছাড়লেন তৃণমূলনেত্রী।” আরও সুর চড়িয়ে বলেন, ‘কোভিডের টাকা দেয়নি। কোন মুখে হিসেব চাইছে কেন্দ্র? আমফানের টাকা দেয়নি। ‘তুই’ টাকা দিয়েছিস যে হিসেব দেব। এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। গুজরাট বানাতে দেব না বাংলাকে। বিজেপি-র অনেক গুন্ডা আছে। অনেক টাকা আছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের মতো কর্মী নেই। অনেক চোর চুরির টাকা সংরক্ষণের জন্য বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে।”
আজ তৃণমূল সুপ্রীমোর মুখ প্রধানমন্ত্রী’কে ‘তুই’ সম্বোধনে লোকসভা নির্বাচনী প্রচারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিরোধী নেতৃত্ব। তাঁর মতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি নির্বাচনী প্রচারের সূচনাতেই এমনভাবে ‘শালিনতা’ হারান তাহলে দলের কর্মীদের কাছে তা নেতিবাচক বার্তা দেয়। বিরোধীদের বক্তব্য। CAG আর CBI এর জোড়া খপ্পরে ‘দিদি’মনির পিত্তউতলা।
যদিও আজ মুখ্যমন্ত্রী ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন যাঁরা দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন বা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরাই আসল ‘চোর’। যাদের জন্যেই দলের মধ্যে এত ভাঙ্গন! আজ শুভেন্দুবাবু মমতার সভায় না থাকলেও তাঁকে কলকাতার পথে আসতে দেখা গিয়েছিলো। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তাঁকে শেষ ‘সুকিয়া স্ট্রীট এ’ ঢুকতে দেখা গিয়েছে।