Citizenship Amendment Act, 2019 এটি চালু হয়ে গেছে কিন্তু সাধারণ মানুষের আন্দোলন থেমে থাকেনি। এখনো নানাভাবে নানা জায়গায়, দেশের আনাচে কানাচে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। আমরা শাহিনবাগ থেকে পার্ক-সার্কাস অথবা ২০১৯ এ ডিসেম্বরে একগুচ্ছ NRC বিরোধী মিছিল দেখেছি। কিন্তু সেই আন্দোলন আসলে কি সঠিক? বিরোধীতা অবশ্যই আছে কিন্তু সেটা কোন প্রেক্ষিতে সেটা আগে বুঝতে হবে। আগামী ১১ ই এবং ১৯ শে ডিসেম্বরে শহরের বুকে আবার NRC বিরোধী মিছিল হবে কিন্তু ৯ ই ডিসেম্বর মৌলালিতে একটি জমায়েত হবে, এটি সম্পূর্ণ আলাদা, তার মানে কি এটি বিজেপির পক্ষে বা NRC এর পক্ষে, তাও নয়। এর পেছনে থাকা কারণ গুলো শুনে নেবো এই নতুন ধারার আন্দোলনের একজন পার্শ্ব চরিত্র কে, সৌম্য মন্ডল, তিনি এই NRC-CAA নিয়ে গবেষণা করে এই আন্দোলন কে পজিটিভ করার কথা তুলে ধরেন। আমরা সেটাই জেনে নেবো।
১. আচ্ছা যখন সুপ্রিম কোর্টে এই CAA এর বিরুদ্ধে পাল্টা আবেদন করে নেবা তখন আবেদনকারীরা জানায় যে বিলটি মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত সমতার অধিকার কে লঙ্ঘন করে…. এ বিষয়ে তোমার বক্তব্য কি?
প্রশ্ন যদি হয় এই আইনটা মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য মূলক কিনা, এটার উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটো এক সাথে। এই ২০১৯ সালের CAA টি শরণার্থী বা রিফিউজিদের মধ্যে বৈষম্য করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে কেউ শরণার্থী বা রিফিউজি নয়। আমাদের এখানে উদ্বাস্তু এবং শরনার্থী শব্দ দুটো সমার্থক অর্থে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সংজ্ঞা অনুযায়ী শরণার্থী হল সেই বিদেশী যে নিপীড়নের কারণে বা আশংকায় নিজের দেশ ছেড়ে অন্যদেশে গিয়ে সরকারের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। সরকার তার আবেদন মঞ্জুর করলে তবে সে শরণার্থী হয়। সুতরাং শরণার্থী বা রিফিউজি শব্দটার স্থাথে অফিশিয়াল রেজিষ্ট্রেশন ব্যাপারটা জড়িয়ে আছে। কেউ যদি এই দেশে বা যে কোনো দেশে এসে সরকারের কাছে আশ্রয় না চেয়ে থাকে তবে সে শরনার্থী নয়। সেই ব্যক্তি যদি আইনি ভাবে আসে তবে সে বৈধ অভিবাসী আর আইন না মেনে এলে অর্থাৎ পাসপোর্ট ভিসা ইত্যাদি ছাড়া এলে অবৈধ অভিবাসী। সুতরাং পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা অন্য যে কোনো দেশ থেকে আসা মানুষেরা সবাই শরণার্থী নয়। এদের মধ্যে যারা সরকারের কাছে গিয়ে শরণ চেয়েছেন এবং সরকার তার আবেদন মঞ্জুর করেছে তারা অবৈধ অভিবাসী এবং শরণার্থী। কিন্তু যারা সরকারের কাছে শরণার্থী স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য আবেদন জানানি তার শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসী। বলাবাহুল্য দেশভাগের বলি হয়ে আসা মানুষদের মধ্যে খুব সামান্য অংশই শরণার্থী হিসেবে নিজেকে নথিভুক্ত করে রেখেছেন। এই নতুন আইনটি শরণার্থীদের উপর প্রযোজ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডকুমেন্ট অনুযায়ী শরণার্থীর মর্যাদা বা লং-টার্ম ভিসা পেয়েছেন এইরকম ৩১,৩১৩ জন অ-মুসলিম এই আইনের ফলে উপকৃত হবেন। যদি আমরা ধরে নেই যে মোট ৩১,৩১২ জন শরণার্থী আছে, তার মধ্যে ১ জন মুসলিম আছে তবে সেই একজন মুসলিমকেও যদি বঞ্চিত করা হয় তবে এই আইনকে বৈষম্যমূলক বলতে হবে।


কিন্তু এই আইনটা শরণার্থী নয় (অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসী বা নিজের নাগরিকত্ব প্রমান করতে না পারা একজন ভূমিপুত্র) এমন মানুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য করছে না। হিন্দু হোক বা আদিবাসী NRC প্রক্রিয়ায় বাদ হতে চলা কোনো মানুষকে এই আইন রক্ষা করছে না। NRC তে ভাষা ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ নাগরিকত্ব হারাবে। NRC প্রক্রিয়ার সাথে CAA 2019 এর বাস্তবে কোনো সম্পর্ক নেই। যদি ধরে নেই যে এই আইনটায় ৬ টা ধর্মের পাশে ৭ নম্বর ধর্ম ইসলামকে রাখা হল, তবুও এই আইন কোনো মুসলিমকে NRC থেকে সুরক্ষা দেবেনা। যেমন হিন্দু সহ ৬টি ধর্মের নাম আছে বলে ঐ ছটি ধর্মের মানুষকে NRC থেকে সুরক্ষা দেবেনা।
কিন্তু মুসকিল হল এটাই যে বৈষম্য মূলক নাগরিক আইনের বিরোধিতার নামে এমন প্রচার হয়েছে যাতে মনে হয়েছে যে এটা মুসলিমদের তাড়াবার আইন, হিন্দুরা সুরক্ষিত। এই আন্দোলনটা মুসলিমদের আন্দোলনে পরিনত হয়েছে, সংখ্যা গুরু NRC বিরোধী আন্দোলন থেকে দুরে সরে গেছে।
২. বলা হয় যে এই আইনটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা ধর্মের ভিত্তি তে নিপীড়নের কারণে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল, এর উদ্দেশ্য এই জাতীয় লোককে অবৈধ স্থানান্তরের কার্যক্রম থেকে রক্ষা করা, আদতে তাই কি?
এই আইনটা কোনো ভাবেই অবৈধ স্থানান্তর রুখতে পারবে না। আইনে স্পষ্ট লেখা আছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যারা ভারতে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য। আজকে কোনো হিন্দু যদি ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভারতে ঢোকে তবে এই সরকারের কাছে সেও অবৈধ অভিবাসী। অবৈধ স্থানান্তর রোখার দুটি পদ্ধতি আছে বলে আমি মনে করি। প্রথমটি হল স্থানান্তরের প্রক্রিয়া কে সরল এবং বৈধ করে দেওয়া।
নেপাল, ভুটান যেতে আসতে গেলে পাসপোর্ট ভিসা লাগেনা। একই সম্পর্ক বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের সাথে হবেনা কেন? পাকিস্তানের সাথে না হয় যুদ্ধ হয়েছে তাই “শত্রু” দেশের বাহানা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ তো বন্ধুদেশ! বাবু মানুষ ভিসা করিয়ে আসতে পারে, গরিব মানুষ বেড়া ডিঙিয়েই আসবে। দেশ ভাগ তাদের জিজ্ঞাসা করে করা হয়নি।
দ্বিতীয়টি হল- ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন ৪৯ টা নদীর মধ্যে ৪৭-টাতে বাঁধ দিয়ে রেখেছে। ফলে বাংলাদেশের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, কৃষক চাষের জল পাচ্ছে না, জেলে মাছ পাচ্ছেনা, এ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন কার্যকলাপে বাংলাদেশের মানুষ কাজের খোজে ভারতে আসতে বাধ্য হয়। এই কারণ গুলোকে সমাধান করতে না পারলে বেড়া টপকানো ঠেকানো যাবে না।
৩. অনেকে এটা কে দেশ ভাগের সাথে তুলনা করছেন। এটা নিয়ে তোমার বা তোমাদের ভাবনা কি?
এ গুলো আবেগের কথা। কিন্তু এইবারের ভয়াবহতা টা নতুন ধরনের হবে। ২০০৩ সালের CAA এর জন্য হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়ে নিজের দেশে বিদেশী চিহ্নিত হতে চলেছে। ২০১৯ সালের CAA না থাকলেও এই ঘটনা ঘটবে। ২০১৯ সালের CAA এর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। CAA ২০১৯ বাতিল হলেও কেউ বিপদমুক্ত নয়। নাগরিক অধিকার হারিয়ে মানুষ অতি সস্তার মজুরে পরিনত হবে, যার কোনো রকম রাজনৈতিক অধিকার বা দর কষা কষির অধিকার থাকবে না। আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো গোটা পৃথিবী জুড়েই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংকোচন একটা সাধারণ ট্রেন্ড। এবার নাগরিকত্বটাই কেড়ে নিতে পারলে আলাদা করে নাগরিক অধিকার খর্ব করার প্রয়োজন থাকবে না। আন্তর্জাতিক পুজিবাদের সংকটের সাথে এই সমস্যা জড়িয়ে, তাই সমাধানও পুজিবাদের পতনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
৪. দেশে যারা অবৈধ অভিবাসী মানে এর মধ্যে উদবাস্তু যারা কাঁটা তার পেরিয়ে এসেছে এবং তারা এদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি তাদের কে রাখা যাবে না। বিলটি তো সেসব মানুষদের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে?
এই CAA 2019 এই সমস্ত অ-শরণার্থী উদ্বাস্তুদের লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই করছে না। যা ক্ষতি করার করেছে ১৯৮৬ আর ২০০৩ সালের ক্যা। NRC করার আইনটা আছে ২০০৩ সালের CAA তে। ২০০৩ সালের ক্যা ইতিমধ্যে কোটি কোটি মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে রেখেছে। NRC/ NPR তাদের ধরার প্রক্রিয়া মাত্র। একজন মানুষের নাগরিকত্ব দুবার কিভাবে কাড়া সম্ভব? ক্যা ২০১৯ নতুন করে সত্যি কারো নাগরিকত্ব কাড়ছে না। আসলে কেড়ে রেখে দিয়েছে ক্যা ১৯৮৬ আর ২০০৩। অনেকেই বলছেন যে ক্যা ২০১৯ এর বলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেই সে অবৈধ অভিবাসী বা বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবেন। তারা পুরোপুরি ভুল বলছেন না, আবার সবটা ঠিকও বলছেন না। যদি সত্যি নথিভুক্ত শরণার্থী বাদ দিয়ে বাকিদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকে তবে আবেদন করার পর সেই আবেদন সরকার মঞ্জুর না করলে ব্যক্তিটি ফেসে গেলেন, এই কথাটা ঠিক। কিন্তু সেই মানুষটিতো আবেদন করবেন যিনি নিজের নাগরিকত্ব না থাকা নিয়ে সচেতন। সীমানা সংলগ্ন বা অন্য রাজ্যে বসবাসরত মতুয়া বা বাঙালি উদ্বাস্তুদের মধ্যে একটা বড় অংশ হয়রানির শিকার হওয়ার ফলে নিজেদের নাগরিকত্ব না থাকা নিয়ে সচেতন হলেও বেশীরভাগ মানুষই জানেননা যে ক্যা ১৯৮৬ আর ২০০৩ অনুযায়ী তার নাগরিকত্ব চলে গেছে। ফলে তারা আবেদন করবে না। উদ্বাস্তুদের বাছাই করার প্রক্রিয়াটা আসলে NPR/ NRC, CAA ২০১৯ নয়।
৫. এই বিলটি কোথাও গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে আইনত প্রতিষ্ঠা দিচ্ছে যা সংবিধানের আর্টিকেল 14 লঙঘন করছে, মানে সমতার অধিকার লঙ্ঘন করছে, কিন্তু কেন্দ্র বলছে যে এটা সাম্যের অধিকার কে লঙ্ঘন করছে না। এটা নিয়ে তোমার মতামত কি?
ক্যা ২০১৯ সংবিধানকে কতটা লঙ্ঘন করছে সেটা বলার মত সংবিধান বিশেষজ্ঞ আমি নই। বিশেষজ্ঞরা সেটা ভালো বলতে পারবেন। তবে উদ্বাস্তু সংগঠন গুলো দাবি করেছিলো ক্যাব ২০১৬ বা ক্যা ২০১৯ এ ৬ টি ধর্মের নাম উল্লেখ না করে ‘ভিক্টিম অফ পার্টিশন’ বা দেশ ভাগের বলি শব্দটা লেখা হোক। ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে আইনে ধর্মের নাম উল্লেখ থাকা উচিৎ নয়। এই ট্রেন্ড আগামী দিনে ধর্ম ভিত্তিক আইনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিজেপি কিছু করবে আর তাতে সাম্প্রদায়িকতা থাকবেনা, সেটা কখনো হয়? বিজেপি আসলে আলোচনাটা ধর্মে টেনে আনতে চেয়েছিলো। আর অ-মুসলিমদের ভুল বুঝিয়ে NRC বিরাধী আন্দোলন থেকে দুরে সরাতে চেয়েছিলো। ফলে ক্যা ২০১৯ এর বিরুদ্ধে মতাদর্শ গত বিরোধিতা থাকবেই। কিন্তু সত্যি এই আইনটায় মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা হয়নি। এই রকম কোনো প্রভিশন লেখা নেই। আগামীদিনে হয়তো এই সরকার আইন পাস করে মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ঘোষণা করবে, কিন্তু এখনো সেটা হয়নি। ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ, মূলত শ্রমজীবী মানুষ NRC ছুট হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বা বে-নাগরিকে পরিনত হবে। মুসলিমকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা হয়েছে এইসব আবোলতাবোল দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন কথা আসলে সরকারকেই সাহায্য করছে। কারণ সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ ভাবছেন যে এটা মুসলিম বিরোধী প্রকল্প অ-মুসলিমদের চিন্তা করার দরকার নেই। বাস্তবে মুসলিম মহল্লাতেই প্রতিবাদী অবস্থান গুলো হয়েছে। হিন্দু এলাকায় সেই রকম সারা পাওয়া যায়নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরাই ভারতে এসে স্থায়ী ভাবে থেকেছেন, মুসলিমরা নয়।
৬. এই বিল কিন্তু শুধু মাত্র illegal migrant দের বিরুদ্ধে কথা বলছে বলে অনেকে মনে করেন। অবৈধ অভিবাসী ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন থেকে নিষিদ্ধ। অবৈধ অভিবাসী এমন বিদেশী যিনি হয় অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন, যেমন, ভিসা ও পাসপোর্টের মতো বৈধ ভ্রমণের দলিল ছাড়াই বা বৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন তবে তাদের ভ্রমণের নথিতে অনুমোদিত সময়সীমা ছাড়িয়ে যান। ভারতে অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করা, এবং নির্বাসিত বা কারাবরণ করা যেতে পারে। তাহলে যারা এতদিন ধরে নিজেদের রুটিরুজি চালাচ্ছেন তাদের কি হবে? দেশজুড়ে এত আন্দোলন চলছে সেখানে কিন্তু সেভাবে এই অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে সেরকম কোনো তত্ত্ব উঠে আসেনি। তোমার মতামত?
প্রথমত আবার বলছি ক্যা ২০১৯ নাগরিকত্ব কাড়ার বা অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করার আইন নয়। রেজিস্টার্ড রিফিউজিদের মধ্যে অমুসলিমদের যারা ৩টি দেশের কোনো একটি থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে মাত্র। এর বাইরে বিশাল সংখ্যক মানুষ আছেন যারা ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নাগরিক নন। আইনের চোখে তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ বেআইনি। এই মানুষদের মধ্যে যারা যারা হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা মূলত ১৯৭১ এর পরে ভারতে এসেছেন এবং নমঃশূদ্র। বাবু সমাজ ২০১৮/ ১৯ সালে NRC নিয়ে হঠাৎ লাফালাফি শুরু করলেও বাংলার উদ্বাস্তু, ননমঃশূদ্র মতুয়ারা সেই ২০০৩ সাল থেকেই NRC এবং ক্যা ২০০৩ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, আশীষ ঠাকুর প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে। উদ্বাস্তু নেতারা শুরু থেকেই একটি CAA চেয়েছে যা তাদের অবৈধ অভিবাসীর তকমা থেকে মুক্তি দেবে, ফলে পুলিশের নির্যাতন বন্ধ হবে। কিন্তু কলকাতা শহরের বাবু সমাজের প্রগতিশীল বাম আন্দোলন কখনোই তাদের খুব একটা পাত্তা দেননি। অথচ উদ্বাস্তু মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে এমন CAA এর দাবিতে তাদের আন্দোলনের পাশে থেকেছিলো মুসলিম সংগঠন গুলো। ২০১৯ সালে বাবুরা হঠাৎ No Caa বলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবির প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখালেনা। যুক্তিহীন ভিত্তি হীন ভাবে অমিত শাহের মুখের কথায় NRC কে CAA এর সাথে জুড়ে মুসলিম বিরোধী চক্রান্ত হিসেবে প্রচার করলেন। বিজেপি প্রচার করলো মুসলিম বাম প্রগতিশীলরা আসলে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব চায়না। “আমরা সবাই নাগরিক, সরকার নাগরিকত্ব দেওয়ার কে?” বাবুদের এই এইসব কথা হয়রানির শিকার নমঃশূদ্র মতুয়ারা মানবেন কেন? তারা প্র্যাক্টিক্যাল সমাধান চায়। কেউ একবার তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন মনে করলেন না কেন গোটা ভারত জুড়ে বাঙালি উদ্বাস্তুদের মধ্যে নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে পারলো! মার্কসবাদী দর্শন অনুযায়ী মানুষের সামাজিক অস্তিত্ব তার চেতনাকে নির্ধারণ করে। আসলে বাম এবং নাগরিক আন্দোলনের নেতারা মূলত উচ্চ বর্ণ থেকে আসেন, এনারা প্রাত্যহিক জীবনে দলিতের অপমানটা ফেস করেননা। বিজেপির মত সাবকন্সাসে এনারা হিন্দু ধর্মকে হোমোজিনিয়াস ভাবেন এবং অপর হিসেবে মুসলিমকে দেখতেপান। তা ছাড়া এখন প্রগতিশীল আন্দোলনে উত্তর আধুনিকতা আর আইডেন্টিটি পলিটিক্সের প্রভাবতো আছেই। হিন্দু মুসলিম আইডেন্টিটিতে ফেলে দিলেই হল। সব সহজ হয়ে যায়।অর্থনীতি, শ্রেণী,অন্যান্য সামাজিক বিষয় নিয়ে ভাবার কোনো প্রয়োজন থাকেনা আর।
প্রগতিশীলরা যেহেতু নমঃশূদ্র, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবির প্রতি সহানুভূতি দেখাননি তাই উদ্বাস্তরা বাধ্য হয়ে বিজেপি সরকারের প্রতি নরম হয়েছে। আমরা বিজেপির কোমর ভেঙে দিতে পারছি কারণ আমরা NO CAA স্লোগান বাতিল করে পজিটিভ দাবিকে সামনে আনছি। আমরা বলছি শর্তহীন জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দাও, উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করতে এখনো পর্যন্ত ভারতে বসবাসরত সকলকে নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে। এছাড়াও নজরদারির হাতিয়ার আধার NPR বাতিলের দাবি আছে। মুসলিম নেতারা, আদিবাসী নেতারা এখন মতুয়া উদ্বাস্তুদের সমস্যাটা বুঝতে পারছেন, আন্দাওলনের স্লোগানের সমস্যাটা বুঝতে পারছেন ফলে তারা আন্তরিক ভাবে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবির জানাচ্ছেন। আমার প্রেডিকশন মত বার বার ক্যা২০১৯ এর রুল প্রকাশ করতে বিজেপি সরকার ব্যর্থ হওয়ায় উদ্বাস্তুদের মনে ক্যা ২০১৯ এ আদৌ তাদের নাগরিকত্ব দেবে কিনা সেই নিয়ে মনে সন্দেহ জেগেছে। ফলত হিন্দুদের NRC বিরাধী আন্দোলনে বড় মাত্রায় অংশগ্রহণ এবং হিন্দু মুসলিম ঐক্যের বাস্তব ভিত্তি তৈরী হচ্ছে।
ইন্টারভিউে সৌম্য মন্ডলের সাথে সৌরদীপ চক্রবর্তী