দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বুকে ‘বাংলা ভাষা’ নিয়ে আন্দোলনের প্রথম সারিতে লড়াকু মুখ ‘বাংলা পক্ষ’। মূলত: বাংলা ভাষাকে অগ্রাহ্য করে যেভাবে প্রতিদিন ও প্রতিমুহূর্তে বঙ্গজনের মস্তিষ্কে বলপূর্বক হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে আঞ্চলিক ভাষার স্বকীয়তা হারাচ্ছে রোজ। সাইনবোর্ড থেকে ফর্ম, কল সেন্টার থেকে কলমের আঁচড় এখন সবতেই হিন্দীয়ানির একটা অনুপ্রবেশ। আর এই অনুপ্রবেশ রক্ষার জন্যে ‘বাংলাপক্ষ’ তার অনুরাগী ও সহযোদ্ধাদের পাশে নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে রোজ রোজ। আর সেরকমই একটি জয়ের নিদর্শন হয়ে রইল ঠাকুরপুকুর কলকাতার বিপ্লব পালের লড়াই।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে ইউনিয়ন ব্যাংকের বেহালা’র এই শাখাতে বিপ্লব গিয়েছিলেন পাস বই পাল্টানোর জন্যে। সেখানে ম্যানেজার থেকে কর্মী সকলেই তার সাথে হিন্দী মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু একজন ‘বাংলা পক্ষের’ একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সেই হিন্দির প্রবল অত্যাচার বিপ্লবের কর্ণ ও মন উভয়েতেই তীব্র বিক্ষোভের সঞ্চার করে। বিপ্লব জানায় যে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাতেই পরিষেবা দিতে হবে। কিন্তু বিপ্লবের সেই প্রতিবাদ ব্যাংকের ম্যানেজারও শুনতে চান নি। শুনবেই বা কেন? তিনি নিজেও একজন বহিরাগত। হিন্দী ভাষী।
বিপ্লব ব্যাংকের ফর্ম ও পাশ বইয়ে হিন্দী ও ইংরেজি’র বিপক্ষে প্রতিবাদ চালিয়ে গিয়েছেন। অপমানিত হয়েছেন। কিন্তু থেমে থাকেন নি। এমন কী মুম্বাই থেকে ফোন কল আসে হিন্দী তে। কল সেন্টার থেকে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র’র কর্মীরাও হিন্দীতে কথা বলে। বিপ্লব তাদের কেও জানান যে বাংলাতে পরিষেবা দিতে গেলে বাংলায় কথা বলতে হবে গ্রাহকদের সাথে। এমন কী কলসেন্টারের প্রতিনিধিদের কেউ কেউ বিপ্লবকে গালি গালাজ করতেই পিছ পা হয় নি। কিন্তু বিপ্লবও নাছোড় বান্দা। বার বার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করে জানিয়েছে বাংলায় পরিষেবা দেওয়ার জন্যে। এমনকী মুম্বাইয়ে’র কলসেন্টারে বিপ্লবের নামও জেনে গিয়েছিলেন সব কর্মীরা।
তবে বিপ্লব কিন্তু শুধু নিজের জন্যে এ লড়াই লড়েছেন তা নয়, এর পাশাপাশি ব্যাংকের ভিতরে,বাইরের গ্রাহকদেরকেও বুঝিয়েছেন কেন ‘বাংলার মাটিতে’ দাঁড়িয়ে বাংলায় পরিষেবা পাওয়াটা আমাদের জন্মগত অধিকারের মধ্যে একটা। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলেছে এই লড়াই। বিপ্লবের এই বিপ্লব থেমে থাকে নি। অবশেষে আজ জয় এসেছে। পাস বইয়ে বাংলা ভাষা এসেছে সবার উপরে। আজ সে নতুন পাশ বই নিয়ে এসেছে ব্যাঙ্ক থেকে।


শুধু তাই নয়, ব্যাংকের ম্যানেজার বাংলায় বলেছেন যে ব্যাংকের প্রতিনিধি সহ কল সেন্টারে বাংলা জানা এবং বলতে পারে প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়বে। বিপ্লবের প্রতিবাদ কে সমর্থন করে গর্বিত বাংলাপক্ষের কলকাতার সম্পাদক অরিন্দম চ্যাটার্জী জানিয়েছেন “ঠাকুরপুকুরের বিপ্লব পাল কৈশোর পেরোনো সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা বাংলা পক্ষের সহযোদ্ধা। ঠাকুরপুকুর এলাকায় পোস্টার মারতে গিয়ে প্রথম দেখেছিলাম কম কথা বলা লাজুক ছেলেটিকে। কিন্তু ইউনিয়ন ব্যাংকের পাস বইয়ে বাংলা লেখাতে বাধ্য করে দেওয়া এই লড়াকু বিপ্লব কে কুর্নিশ। আমার সহযোদ্ধা বিপ্লব পালকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। জয় বাংলা”
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই জয় সামগ্রিকভাবে ‘বাংলা পক্ষ’র নিরলস প্রচেষ্টা ও সহযোদ্ধাদের তুমুল আন্দোলনের ও লড়াইয়ের ফসল। বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাংলাকে রাখতে হবে আগে। বাঙালির এই ভাষা নিয়ে রক্ষনশীলতা তার ভাষা, তার মায়ের স্পর্শকে আগলে রাখার লড়াই। এ লড়াই মাটি কামড়ে আর সেখানেই বিপ্লবের মত কৈশোরের এই সাফল্য আগামী দিনে বাংলার স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনুক এটাই চাইছে ‘বাংলাপক্ষ’।