দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গতকাল শিলিগুড়িতে বিজেপি’র উত্তরকন্যা অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে জানান হয়। তার শরীরে ছিল গুলির আঘাতের চিহ্ন। এই মৃত্যু নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে যখন বিরোধী-শাসক তর্জা তুঙ্গে সেই সময়ে জরুরী ভিত্তিতে গতকাল রাতে করা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলো। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে শটগানের গুলি বা ছবরার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট উল্লেখ করে এমনই দাবি করল রাজ্য পুলিশ। একইসঙ্গে রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য পুলিশ ‘এরকম’ বন্দুক ব্যবহার করে না। মিছিলে উপস্থিত আততায়ীর হাত থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমনটাই দাবি পুলিশের। আর এই ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে ইতিমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে রাজ্য পুলিশের তরফে টুইটারে বলা হয়, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শটগানের আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ শটগান ব্যবহার করে না। এটা স্পষ্ট যে গতকাল শিলিগুড়িতে বিক্ষোভের সময় সশস্ত্র লোকজনদের নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তারা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালিয়েছে।’
সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হয় উলেনের। এই মৃত্যু নিয়ে বিজেপির তরফে অভিযোগ গুলি চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার রাতে করা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানিয়েছে, খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের টুইটে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মৃতের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও ব্যক্তি খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়েছিল। যা অভূতপূর্ব। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সশস্ত্র লোকজন নিয়ে আসা এবং গুলি চালানোর জন্য তাদের উস্কানি দেওয়ার কথা শোনা যায়নি।’
যদিও বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, কিছু ‘লুকানোর’ জন্য রাতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কারণ আইন অনুযায়ী রাতে ময়না তদন্ত করা যায় না। সেকারণে বিজেপি দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে। এমনকি উলেনের দেহ নিতেও অস্বীকার করেন বিজেপি নেতারা। ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফির কপি দেওয়ার কথা জানান বিজেপি নেতৃত্বরা। সেই সাথে তিন চিকিৎসকের দলকে সশরীরে উপস্থিত থাকার কথাও বলা হয়েছে। এমন কি দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের সময় বিজেপি নেতাদেরও থাকতে দেওয়ার দাবি উত্থিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে এই মর্মে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনও মেডিক্যাল কলেজের তরফে সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, এই “রিপোর্ট থেকেই আমাদের অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে যে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছিল এবং উলেনকে তারাই গুলি করেছে। আমাদের (বিজেপি) বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা হাস্যকর। কারণ পুলিশের ব্যারিকেডের দিকে যাওয়ার সময় উলেনের বুকে গুলি লেগেছে। যদি মিছিলের কেউ তাঁকে গুলি করত, তাহলে পিছনে গুলি লাগত।”
যদিও এই মৃত্যু প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের পাশে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই মৃত্যু ও তা নিয়ে রাজনীতির প্রসঙ্গে সাংসদ এবং দলের মুখপাত্র সৌগত রায় বলেছেন, “পুলিশ জানিয়েছে যে তারা শটগান ব্যবহার করেনি। যা থেকে ছররা ছোড়া হয়। আর এই সত্য উদঘাটন করবে সিআইডি। বিজেপি চাইছে বলেই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা যেতে পারে না। তাতে বিচারবিভাগীয় আদেশ লাগবে। বিজেপি চাইলে অবশ্যই আদালতে যেতে পারে।”