দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বৃহস্পতিবার বাংলায় বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এই বিষয়ে শাহ রাজ্যপালের কাছে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত রিপো্র্ট চাইলেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বাংলার প্রশাসনের কাছে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ২টি রিপোর্ট চাইল। এদিকে বঙ্গ বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, ।
বিজেপি’র বক্তব্য শাসক দল তৃণমূলের সমর্থকরা বিজেপি প্রধানের কনভয়ে হামলা করেছে। কলকাতা থেকে ৬০ কিমি দূরে ডায়মণ্ডহারবার রোডের ওপর শিরাখোল মোড়ে এই হামলাটি হয়। নাড্ডা তখন কর্মী সম্মেলনে ডায়মণ্ডহারবার যাচ্ছিলেন। এই লোকসভা কেন্দ্রটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওই আক্রমণে সংবাদ মাধ্যমের একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সংবাদমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায় পাথর ছুঁড়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকরা পাথর, লাঠি ও রড নিয়ে হামলা করে।
নাড্ডা কর্মী সভাতে বলেন, মা দুর্গার আশীর্বাদে আমি এখানে বৈঠকে পৌঁছতে পেরেছি। তিনি বলেন, বুলেট প্রুফ গাড়িতে থাকায় তিনি বেঁচে গেছেন। কিন্তু বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায় আহত হয়েছেন। তবে এই হামলা নিয়ে মমতা দাবি করেছেন, এই হামলা সাজানো ঘটনা। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি তাঁর সরকারকে বদনাম করতে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘নাটকে’র আশ্রয় নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনার পুলিশি তদন্ত হবে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন করেন এতে কোনও ষড়যন্ত্র বা উস্কানি আছে কি না। তিনি বলেন, বিজেপি নাড্ডার জন্য নিরাপত্তা চায়নি, নাড্ডা জেড-ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান।
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা; কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায় সামান্য আহত
এছাড়াও মমতা ব্যানার্জী আজ বলেন ‘তোমার পিছনে ৫০টা গাড়ি কেন যায়? আমার ৩টে গাড়ি যায়। তোমার ৫০টা গাড়ির কনভয়। তার মধ্যে আবার প্রেসের কনভয় ৩০টা। তার মধ্যে বাইকের কনভয় আবার ৪০টা। তাহলে কে দেখছিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? তার মানে কি প্ল্যান করা ছিল? কেউ একটা ঢিল মারছে…. লেজুড় কার, টেল কারে কাচের এ-তে এটকা ইট এসে পড়ছে। তো বন্ধু ওটা কে দেখল? কী করে দেখল? ছবিটা কী করে তুলল,ভিডিয়োটা কী করে তৈরি হল? এত তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেল। ইউ আর সো স্মার্ট। মনে হচ্ছে স্যাটালাইট থেকে কাজ করছে’।


এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘পিছনে ৪টে করে সিকিওরিটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিকিওরিটিগুলো কালো কালো ড্রেস পরে বড় বড় বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহারা দিচ্ছে। তা এত তোমার CISF, CRPF, BSF, কম্যান্ডো আছে, এত ফোর্স আছে, তাহলে তোমার গাড়িতে হাত দিতে পারে কী করে? তোমরা তো আমাদের নির্ভর করো না। তোমরা তো নির্ভর করো সেন্ট্রাল ফোর্সকে। আপনারা তো কত লোককে সিকিওরিটি দিয়েছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলেছি, কারও যদি কোনও সমস্যা হয় রাজ্যকে বলবেন। রাজ্য বিচার করে দেখবে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের ব্যাপার। কিন্তু তাও করছেন’।
এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন দিল্লি গিয়ে বারবার বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘যতবার আমি দিল্লি যাই বিজেপির লোকগুলো গিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করে। যতবার আমি দিল্লি যাই প্রত্যেকবার আমার গাড়ির সামনে ঝামেলা করে। প্রত্যেকবার আমার গাড়ির সামনে ঝামেলা করে। তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি আজ চোর বটে’।
আরও পড়ুন: দশ বছর পড়ে তৃণমূলের রিপোর্ট কার্ড! বিরোধীরা বলছেন ‘এজেন্সির’ ভয়ে না ‘জমি’ হারানোর ভয়!
নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনাকে ছোট্ট ঘটনা বলে দাবি করে মমতা বলেন, ‘যদি কোনও ছোট্ট ঘটনাও ঘটে থাকে…. আমি জানি না কী করে ঘটেছে। কারণ শিরাকোলে একটা প্রোগ্রাম আমাদের ছিল। আমরা বলেছিলাম আমাদের ছেলেদের না করতে। ওরা করেনি, পরে করেছে টাইম অ্যাডজাস্ট করে। শিরাকোলে কিচ্ছু হয়নি। একটা চায়ের দোকানের সামনে না বাসস্ট্যান্ডের সামনে তোমার ৫০টা গাড়ির লেজুড় কে কাকে ধাক্কা মেরেছে, না কে কাকে থ্রো করেছো না প্ল্যানিং করে করেছো। যেমন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরটা প্ল্যানিং করে করেছিলে। আমি পুলিশকে বলেছি পুরোটা তদন্ত করছে’।
এদিকে অমিত শাহ টুইট করেন, বলেন বাংলা তৃণমূলের শাসনে স্বৈরাচার, বিশৃঙ্খলা ও অন্ধকারের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের শাসনে বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে উঠেছে ও চরমে পৌঁছেছে তা দুঃখের ও আশঙ্কার।
এছাড়াও অমিত শাহ আরও যোগ করেন যে, কেন্দ্র সরকার এই হামলাকে খুবই গুরুতর ভাবে নিয়েছে। রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষ এই সরকার পোষিত হামলার জন্য রাজ্যের সরকারের কাছে জবাব চাইবে।