28 C
Kolkata
Thursday, March 23, 2023
More

    SPECIAL FEATURE প্রণম্য দিদিকে কেন শুভেন্দুর শুকনো “নমস্কার ?” – দেবারুণ রায়

    চালে ভুল করে ফেললেন শুভেন্দু অধিকারী। আলাদা দল তো দূরের কথা, নিজের শর্তে বিজেপিতে যোগদানের  ছক বিসর্জন দিয়ে কোনওমতে শ্যাম আর কুল বাঁচাতে হল। কিন্তু যে অঙ্ক কষে বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি চলছিল তা মিলল না পুরনো দল আর নতুন দলের পাল্টা চালে। তৃণমূল থেকে যাঁরা ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে পদ পেয়েছেন তাঁরাই চাননি নতুন এসে কেউ তাঁদের মাথায় চাপুন। আর যাঁরা পুরনো নেতা দলের,  তাঁরা কখনওই চাননি, অন্য দল থেকে কেউ নতুন যোগ দিয়েই বিজেপির বিশাল নেতা বা বিরাট প্রশাসনিক পদের পদপ্রার্থী হোন। তাছাড়া দলমত নির্বিশেষে বিশাল ফ্যান ফলোয়িং আছে এমন সেলিব্রিটি ছাড়া  কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চায় না

    সংঘ পরিবারের অভিভাবক আরএসএস। তেমন কাউকে না পাওয়া গেলে একজন স্বয়ংসেবককেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করা হবে। এই ছকেই বিজেপি আগাগোড়া চলছে। গোয়ালিয়রের মহারাজার মতো হেভিওয়েট নেতাকেও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি।  তার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রে মন্ত্রীও করা হয়নি এখনও। উপনির্বাচনে তাঁর দলবদলু সাকরেদরা জিতে আসার পর কেন্দ্রে মন্ত্রীত্বের শিকে ছিঁড়বে বলে আঁচ করা হচ্ছে।  মোদী জমানায় বিজেপির এটাই দস্তুর। ফেলো কড়ি মাখ তেল। পারফর্ম করার পর প্রাইজ। আগাম নয়। মুকুল রায়কে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায় বিজেপির ফরমুলা. তাঁকে এতদিনে সহ সভাপতি করা হল। আঠারো এমপি বাংলা থেকে পাওয়ার কতদিন পর এই পদপ্রাপ্তি ?

    রাজস্থানে শচীন পায়লটের  শেষরক্ষা হয়নি। সরকার ভাঙার মত বিধায়ক ভাঙিয়ে আনার কথা দিয়েও শচীন কথা রাখতে পারেননি। এবং মুখ্যমন্ত্রী করার আগাম ঘোষণাও করতে রাজি হয়নি বিজেপি। ফলে গেহলোত সরকারের গদি অটুট থাকায় পায়লট থেকে যান কংগ্রেসেই। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হবার আশা ভাসাতে যাওয়ার দরুণ তাঁর সঙ্গে যাননি কোনও কং বিধায়ক।  পায়লটও পা বাড়াতে গিয়ে বুঝলেন একদিকে ক্ষমতাসীন অশোক গেহলোত আর অন্যদিকে বিজেপির সর্বেসর্বা বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফল আত্মঘাতী হবে। তাই রাহুলের বদান্যতায় নত হয়েই ঘরে থাকলেন শচীন। প্রমাণ হল, হুট করে দল বদল করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বিজেপির বর্তমান যুগে অসম্ভব।  আগে এই বন্দোবস্ত চালু করেছিল বিজেপিই। আডবাণী জমানায় রাজ্যে রাজ্যে বন্ধুদল গড়ে তাদের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করেই সরকার হত এনডিএর। বিহার  থেকে কাশ্মীর এই কৌশলে ফল ফলেছে। কাশ্মীরের ক্ষেত্রেই একমাত্র এই পুরনো ফরমুলা প্রয়োগ করেন মোদীশাহী। বাংলায় তৃণমূলের নেতৃত্বেই বিজেপি পা রাখার জায়গা করতে পেরেছে।

    বাম সরকারের উচ্ছেদে বিজেপি অবশ্যই অণুঘটক হিসেবে হাজির থেকেছে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের রামধনু জোট পর্যন্ত।  পরে কংগ্রেসের সঙ্গে  রফা করে সরকারে আসে তৃণমূল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী মমতার মতো দল গড়ার ক্ষমতা কোথায় পাবেন ? তাঁর বাবা প্রবীণ ও অভিজ্ঞ সংগঠক হলেও তৃণমূলের সাংসদ পরিচিতি অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন দল গড়ার ঝক্কি নিতে পারেন না এই বয়সে। তাছাড়া দল গড়ার জন্য সারা বাংলায় যে জনভিত্তি দরকার তা কোথা থেকে হবে মেদিনীপুরের পূবদিকে প্রতিপত্তিশালী অধিকারী পরিবারের? মেদিনীপুরেরই সাংসদ দিলীপ ঘোষ তো সর্বাগ্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট দিয়েছেন কোথায় শুভেন্দুর প্লাস পয়েন্ট,  আর কোথায়  মাইনাস। দল জেনেছে, শুভেন্দু বিজেপিতে এলে কিছু বিধায়ক তাঁর সঙ্গী হবেন অবশ্যই।  তবে একুশের ভোটে ক’জন জিতে ফিরবেন সেটা বলা কঠিন। কারণ শুধু নন্দীগ্রামেই ৩৫ % মুসলমান ভোট। এই ভোটের  ৯৯ভাগই মমতার সঙ্গে থাকবে। তবে পাঁচটা জেলায় শুভেন্দু অধিকারী হতে পারেন তৃণমূলের স্পয়লার। মানে ভোট কাটুয়া। মাত্র ২% ভোট টানলেও এইটুকু ভোটের রূপান্তরেই রাজ্যের শাসকদলের টান পড়বে গরিষ্ঠতায়। ব্যাস, এটুকু  হলেও শাসন টলে যাবে।

    আরও পড়ুন: রাজীব বললেন, ‘যত মত, তত পথ’ সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণ, উদয়ন দেখালেন ‘বাইরের পথ’?

    এটা বুঝেই সুপ্রিমো প্রথমে আক্রমণের পথে যাননি সেভাবে। যদিও রণনীতি তাঁর তুখোড়। রাজনীতিতে বহু শীত বসন্তের সাক্ষী, পোড় খাওয়া নেতা শিশির অধিকারীও নেত্রীর তির বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি জেলায় তৃণমূলের ঘোষিত নেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধিকারীতেই অধিষ্ঠিত। অখিল গিরির আচরণ তিনি  অনুমোদন না করলেও গিরি তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই। শুভেন্দু কাণ্ডের আগাগোড়াই  তাই পূর্ব মেদিনীপুর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পাঁকে ভরে গেছে।  আর তাতেই ফুটছে পদ্ম। কিন্তু দলনেত্রীর হস্তক্ষেপে প্রথমত, জেলাকেন্দ্রিক দল গঠনের উচ্চাশা ভেস্তে গিয়েছে শুভেন্দুর।  তাঁর নিজের অনুগামীদের মধ্যে মুসলমান কর্মী ও এলাকার ছোটখাটো নেতাদেরও ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে নিজেরই। অথচ পয়লা চালে তৃণমূলকে মাত দিতে না পারলে মাতব্বরের মান পাওয়া কঠিন বিজেপি আরএসএসের জহুরিদের কাছে। তবে এক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর একটা নিজস্ব পকেট তাঁকে ব্যাপক সাহায্য করছে করবে।

    সম্প্রতি শিবসেনার রাজ্য নেতা শুভেন্দুর প্রশস্তি করেই কিছু কথা বলেছেন। দিনকতক হল, বিজেপিতে না গিয়ে হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার সঙ্গে যাওয়ার কথা উঠেছিল শুভেন্দুর। সম্ভবত জল মাপার জন্যে। সেসময় শিবসেনার রাজ্য নেতা বলেন, মেদিনীপুরের দুদিকেই হিন্দুত্বের আন্দোলনে শুভেন্দুর অবদান স্বীকার করতেই হবে। নানাভাবে ওই এলাকার আরএসএসের সংগঠন শুভেন্দুর কাছে ঋণী। “অর্থে সামর্থ্যে তাঁর সাহায্যেই আরএসএস অফিস চালায়।” সুতরাং বিজেপির সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র  অনেকদিনের। কিন্তু এই যোগাযোগ এখন তার কিছুটা বিড়ম্বনারও কারণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্রয়ে ও পালনে সংখ্যালঘুরা “দাদা”র আরএসএস কানেকশন নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। কিন্তু এবার ঘাসফুলকে হারাতে পদ্মফুল ছাপ নিলে তাঁরা তাঁর সঙ্গে যাবেন কীকরে ?

    এই ধর্ম সংকটে তাঁদের প্রশ্ন শুনেছেন “দাদার অনুগামীরা।” প্রশ্ন, দাদা কি পদ্মফুলের মন না হোক অ্যাজেন্ডা বদলাতে পারবেন ? যে দল সংবিধান থেকে সংখ্যালঘুর অধিকারের স্বীকৃতিটাই তুলে দিতে চায় ! এসব নিয়ে চর্বিতচর্বণ এবং তৃণমূলের সক্রিয়তা বা আক্রমণাত্মক রণকৌশলে প্রথম দিনেই পিছু হটা  শুভেন্দুর পদক্ষেপের আকস্মিকতা বা চমক সবটাই  নষ্ট করে দিয়েছে। মমতা জানতেন শুভেন্দু কোনও কথাই শুনবেন না।  সেজন্যই দলের কোর গ্রুপের কাউকে মধ্যস্থ করতে দেননি। নিজেও অকারণে মুখ নষ্ট করে বাগী নেতার দাম বাড়িয়ে দেননি। দায়িত্ব দিয়েছেন সৌগত রায়ের মতো সাংসদ নেতাকে। এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকের স্থান করাটাও তাৎপর্যপূর্ণ। শুভেন্দু চর্মচক্ষে দেখলেন ওই বৈঠকে হাজির শুধু অভিষেক নন, পিছু পিছু প্রশান্ত কিশোর। এতে অশান্ত হওয়া ছাড়া তাঁর উপায় ? আর ফিরিবার পথ নাই। তাই ধরাধরির ফোনে, তাঁর প্রণম্য দিদিকে শুকনো “নমস্কার।”

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    সরে গেল ‘এটিকে’ , পরের মরশুমে ঝড় তুলতে আসছে ‘মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস’

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বড় ঘোষণা করলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। মোহনবাগানের নামের শুরু থেকে সরে গেল...

    ভারতসেরা ‘মোহনবাগান’ ! বাঙালির গর্বের দিন

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাপ বনাম পাল্টা চাপ। পেনাল্টি বনাম পাল্টা পেনাল্টি। অফুরান দৌড় আর স্কিলের ফুলঝুরি দেখাতে...

    ISL চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : আই এস এল ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিলো এটিকে মোহনবাগান । বেঙ্গালুরু এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো...

    বাড়িতে আনুন বেশকিছু হোমিওপ্যাথি ঔষধ , পাবেন বহু সমস্যা মুক্তি

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : হোমিওপ্যাথি এক পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতি। আয়ুর্বেদের সঙ্গেও এই চিকিৎসা পদ্ধতির বেশ কিছু মিল...

    বড় বড় মার্কিন ব্যাংকের পতন ! আসছে মহামন্দা ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক – পর পর দুই বড় মাপের মার্কিন ব্যাঙ্কের...