দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এবার বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার এক জনসভায় তিনি বলেন, আসন্ন বাংলার নির্বাচনে জিততে না পারলে গেরুয়া দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘গোপনে হত্যার’ চেষ্টা করতে পারে। সম্প্রতি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতিক সময়ে তাদের দলীয় ‘কর্মীদের হত্যা’ এবং গুন্ডাদের দ্বারা বিজেপি প্রধান জে পি নাড্ডার কনভয়ের উপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে মমতা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। যদিও এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং তবুও যথাযথ তথ্য’র অভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজেপি প্রধান জে পি নাড্ডা’র ‘নিরাপত্তার ত্রুটির’ জন্য তিনজন আইপিএস অফিসারকে দিল্লিতে ডেপুটেশনে চেয়েছে ও সেই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজি’কে আগামী ১৪ তারিখ দিল্লিতে তলব করেছে।
এই বিষয়ে সংবাদ সংস্থা ANI এর একটি টুইটে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় একটি জনসভাতে দাঁড়িয়ে একথা বলেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করে বিজেপি জিততে না পারলে তারা গোপনে লোক পাঠিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
মমতা বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মুখোমুখি
দিনের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজেপি সভাপতির নিরাপত্তায় ত্রুটির অভিযোগে রাজ্যের তিনজন আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে ডেকে নিতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই মামলায় বাংলার মুখ্যসচিব এবং ডিজিপিকে তলব করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের পাঠাতে অস্বীকার করে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্য পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।
আরও পড়ুন: জে পি নাড্ডা’র পর এবার বঙ্গ সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যেতে পারেন জেলাগুলিতেও
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-র তলব করা তিন আইপিএস অফিসারের নাম প্রকাশ করা রাজ্যের দায়িত্ব বলে তৃণমূল সরকার বিষয়টি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় একটি প্রেস ব্রিফিং-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন যে কেন্দ্র ডেপুটেশনে কর্মকর্তাদের নাম পাঠাতে পারে, কিন্তু তাদের মুক্তির চূড়ান্ত ক্ষমতা তাদের কর্তৃপক্ষ রাজ্যের কাছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এই হামলা পরিকল্পিত কিনা এই বলে যে কে বিজেপিকে আক্রমণ করার সাহস করতে পারে, যা সিআরপিএফের(CRPF) সুরক্ষার অধীনে ছিল ও যিনি Z+ সুরক্ষা নিয়ে যাচ্ছিলেন।
“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৩ জন ডব্লিউবি আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে ডেকেছে, তৃণমূল কংগ্রেস বলছে ‘তাদের মুক্তি রাজ্যের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল'”
নাড্ডার কনভয়ে হামলা
বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার এলাকায় যাওয়ার পথে বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কনভয়লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র গাড়ির জানালাও পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। সেই সাথে কৈলাসের বাম হাতের লিগামেণ্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। টুইটারে বিজয়বর্গীয় বলেন যে বেঙ্গল পুলিশকে ইতোমধ্যে জেপি নাড্ডার সফরের কথা জানানো হয়েছে, কিন্তু তারপরেও তারা তাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পিটিআই সূত্রের খবর, মিডিয়া কর্মীদের গাড়িও এই হামলা থেকে ছাড় পায়নি।
বিজেপি প্রধান নাড্ডা দাবি করেছেন ‘বাংলায় ২০০ আসন অতিক্রম করবে’; তিনি জনসভাতে মমতার ‘অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। ইতিমধ্যে শাসকদল তৃণমূল বিজেপির বাংলা প্রচারণাকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথ এর জন্মস্থান নিয়ে নাড্ডা’র বিতর্কিত মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মিছিল ও করেছে। উল্লেখ্য রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টি তে জয়লাভের পর বিজেপি ২৯৪ সদস্যের বাংলা বিধানসভায় ২২০-২৩০টি আসন জেতার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
ইনচার্জ কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক প্রচারণা শুরু করে গেরুয়া দলের কর্মীরা প্রায়ই সিএএ (CAA), কোভিড-১৯ নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার মৃত্যু ঘটেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের নেতাদের আক্রমণ করার অভিযোগ এনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে প্রজেক্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাড্ডা গতদিন সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন বাংলায় ‘ডাবল’ ইঞ্জিন সরকার হবে! প্রথম ইঞ্জিন বিজেপি হলেও দ্বিতীয় ইঞ্জিন কোন দল? সেটা এখনো রহস্য!