দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ বিগত পাঁচ-ছয় বছরে বাঙালিরা কেন এত সর্বদেশব্যাপী বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে! কেন ভিনরাজ্যে গিয়ে বাঙালি যুবক-যুবতীকে হেনস্থার মুখে পরতে হচ্ছে? কেন ঠিকা শ্রমিক খুন হয়ে যাচ্ছে রাজস্থানের বুকে? কেন বাঙালি পড়ুয়াকে মাওবাদী বলে দাগানো হচ্ছে দেশের রাজধানীর বুকে? এই এত ‘কেন’-এর মাঝে আজ বাঙালির অস্তিত্ব বিপন্ন বলে যে অলীক কল্পনা চলতো তা যেন ক্রমশ বাস্তব আকার নিচ্ছে।


গতকাল বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তার টুইটার হ্যান্ডেলে একটি চিঠির ছবি প্রকাশ করে বিবৃতি দেন যে আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্ত্ন হয়ে যাচ্ছে। এই খবরে আন্দোলিত হয়ে পরে সারা দেশ বিশেষ করে পশ্চিমবাংলা। এর আগেও নানা বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে শিরোনামে উঠে এসেছেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কিন্তু এইবারের কান্ডটি সব রকমের সীমাকে অতিক্রম করে গেছে।
আরও পড়ুন: এবার কী গেরুয়া গ্রাসে রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত! প্রতিবাদে সরব গোটা দেশ, কিসের ইঙ্গিত ?
এই টুইট এবং স্বামীর বক্তব্যকে সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে আওয়াজ তুলেছে ‘বাংলা পক্ষ’। এই অস্তিত্বসংকটে বাঙালির ‘বাঙ্গালিয়ানার’ জয়ধ্বজাকে যারা তুলে ধরেছে তাঁদের নাম ‘বাংলা পক্ষ’। হুঙ্কার জানিয়ে বাংলা পক্ষ জানিয়েছে যে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যদি এই বাংলায় ঢুকতে যায় তবে আগুনের লেলিহান শিখা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। যোগ্য জবাবের জন্য যেন তারা প্রস্তুত থাকে। ‘বাংলা পক্ষ’ তাদের নাতিদীর্ঘ বিবৃতিপত্রে জানিয়েছে যে কিভাবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ ও বলিউডের অপসংস্কৃতি বাংলা ভাষা ও বাংলার গানকে অপমানিত করেছে, বিকৃত করেছে।
কখনো বন্দেমাতরম হয়েছে ‘ভ্যান্ডেমাতরম’ আর জনগণমনকে গেয়েছে ‘জ্যানাগ্যানামনো’ বলে, এই সব হিন্দি ও বলিউডি ভাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে ‘বাংলা পক্ষ’। এর আগে সর্বভারতীয় স্তরে যখন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অপমান করা হয়েছে তখন প্রথম আওয়াজ তুলেছে বাংলা পক্ষ। নেতাজী সুভাষ বিমানবন্দরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বা ব্যাঙ্কিং পরিষেবাতে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি সবেতেই বাংলা পক্ষ প্রথম সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
জাতীয় সঙ্গীত বদলের প্রসঙ্গে বাংলা পক্ষের বিবৃতিতে উঠে এসেছে ‘CAA’ ও ‘NRC’ প্রসঙ্গও – বাঙালিদের বাংলাদেশী প্রমাণ করে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে খুন করার চক্রান্তকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছে বাংলা পক্ষ। একই সঙ্গে সর্বভারতীয় ভোটে ইউপি-বিহার তোষণকেও ভালো চোখে দেখছে না বাংলা পক্ষ। তারা সাফ জানিয়েছেন যে কোনো রাজনৈতিক দলের বশবর্তী হয়ে নয় বরং নিজের বাহুবলে বাঙালিরা রাস্তায় নামবে। এতদিন ধরে হিন্দি বলয় থেকে উড়ে আসা ইঁটের জবাব বাঙালি এবার পাটকেলে দেবে। তারা বিবৃতির শেষে হুঙ্কার দিয়ে জানিয়েছে যে ‘আগামী সময় বাঙালির, আগামী দশক বাংলা পক্ষর’। এই উচ্চারণ যে মুগ্ধা বঙ্গজননীর দীর্ঘকালের হাহাকারকে নিষ্কৃতি দেবে তাই আশা করা যায়।