25 C
Kolkata
Friday, March 31, 2023
More

    আরও একবার ব্যক্তিগত আক্রমণে কল্যাণ, এবার শুভেন্দু’র মায়ে’র দেওয়া শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন?

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিকেন শুভেন্দু অধিকারী। আর এই যোগদান পর্বে প্রবেশের ঠিক এক ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক পেজে’র ওয়ালে টাঙ্গিয়ে দিয়ে গেলেন ৬ পাতার একটা খোলা চিঠি। আর সেই চিঠির ছত্রে ছত্রে যেমন তৃণমূল ছাড়ার কৈফিয়ত লুকিয়ে তেমনি কটাক্ষ ছিল এই বলে যে তৃণমূল দল পরিবার তন্ত্র’র ঘেরাটোপে হয়ে উঠেছে ‘পচনশীল’ মূলত আজ ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ ব্যবস্থার উপর চরম আঘাত হানতে চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

    এমনকি আজ রাজ্য বিজেপিতে যোগদান করে বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে তিনি গলা ছেড়ে বলেছেন ‘এ বার বলব তোলাবাজ ভাইপো হঠাও..তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’। আর এই চিঠি ও তারপর মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘ভাইপো’ বিতর্ক উস্কে দিয়ে শুভেন্দু তথা বিজেপির আক্রমণের মুখে কী জবাব দেয় তৃণমূল সেদিকেই সবার নজর ছিল।

    মূলত: শুভেন্দুর বিদ্রোহের প্রথম দিন থেকেই তাঁর প্রতি আক্রমণাত্বক ছিল শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়, সে কারণেই আজ সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিরোধী শুভেন্দু’র বক্তব্যের জবাব দিতে তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কল্যাণ। মেদিনীপুরে বিজেপির সভা শেষ হতেই ওই সাংবাদিক বৈঠকে দলের মুখপাত্র কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওনার তো সত্‍ সাহস হল না ভাইপো কে তাঁর নাম নেওয়ার! ওনার মায়ের নাম তো গায়ত্রী অধিকারী। মা শেখাননি যে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করো তাঁর নাম নিতে হবে? নামটা নেওয়ার মতো ক্ষমতা ওনার হল না? উনি একবার নামটা নিয়ে দেখুন না!’

    শুধু এখানেই থেমে থাকেন নি কল্যাণ; তিনি বলেন, ‘আমিও বলছি, আমরাও এবার থেকে হলদিয়া, তমলুক, কাঁথির কন্ট্রাকটরদের যে মাস্টার, তাকে আমরা শেষ করব, রাজনৈতিক ভাবে’। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চড়া গলায় দক্ষ বাচিক শিল্পীর মত গলা খেলিয়ে খেলিয়ে যা যা বললেন আজ সেটা নিচে দেওয়া হলো-

    ও কী ভেবেছে আমরা কি কিছু জানি না? হলদিয়া তমলুক কাঁথিতে কন্ট্রাকটরদের রাজার রাজা কে তা আমরাও জানি’। শুনলাম বলেছেন, তৃণমূল দলটা পচে গিয়েছে। দলটা যদি পচে গিয়ে থাকে, তা হলে আপনিও তো পচে গিয়েছেন সেই দলে থেকে। দশ বছর ধরে দলে ছিলেন, সব ভোগ করেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। এতই যদি পচা, তা হলে ছিলেন কেন? আপনার ব্রেনের থিঙ্কিং প্রসেসটা কি অত্যন্ত স্লো? এটা বুঝতে দশ বছর লেগে গেল?’ আজ উনি যা করলো তাতে অধিকারী পরিবারটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেলো। এত পদ, এত মন্ত্রীত্ব আরও চাই? এত ভোগ করেও চাই। কী মুখ্যমন্ত্রী হবে? মমতা ব্যানার্জী বা তাঁর পরিবারের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে চান নি, চান না। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছেন। ২০২১ শে আকাশ বাতাসে শুধুই মমতা মমতা ঝড় উঠবে।

    ‘দল বদলেছেন। এবার বুলেটপ্রুফ গাড়ি পাবেন। তিরিশটা সিআইএসএফ জওয়ান পাবেন। দয়া করে ওই নন্দীগ্রামেই আবার দাঁড়াবেন কিন্তু। আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি বলে বলে হারাব’। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে আপনি ছিলেন না। অতএব দাবি করবেন যে প্রথমদিন থেকে আপনি তৃণমূল কংগ্রেস করছেন। শিশির অধিকারী এই দাবি করলে মেনে নেবো। আপনি না’।

    ‘আপনারা পরিবারতন্ত্রের কথা বলছেন, কই আপনি অধিকারি বাড়ির পরিবারতন্ত্রের কথা তো বললেন না! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারে কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে চান না। বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন’। ভাগ্যিস জেলার পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল। নইলে পিছন থেকে কত বড় ছুরিটা মারত ভাবুন।’ ‘আজ এত ভাল করে কথা বলছেন, আমার কাছে ভিডিও আছে (নিজের মোবাইলের দিকে ইশারা করে) ছেড়ে দিলে লোকে দেখবে আপন মুখের ভাষা কী!

    মুকুল রায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন আর যে বলেছেন, তিন অঙ্কে তৃণমূল যেতে পারবে না, তাকে বলি আপনারা ৫০ টা পেরোতে পারবেন না। আর ২১০ এর উপর সিট নিয়ে মমতা সরকার গড়বে আবার’।

    অমিত শাহর উদ্দেশে বলেন ‘অর্থনীতি নিয়ে বলছেন! মাননীয় অমিত শাহজি আপনার লজ্জা লাগল না একথা বলতে। দেশের জিডিপি আজ তলানিতে ঠেকেছে। আর আপনি বড় বড় কথা বলছেন! যে ভাবে আইপিএস অফিসারদের ডেকে পাঠাচ্ছেন তা অসাংবিধানিক। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলছেন। অমিত শাহ বাংলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাই ভুলভাল বলে গেছেন, মিথ্যে বলে গেছেন’।

    বিজেপির মিটিং এ মানুষের ভিড়ের উদ্দেশে— ‘মেদিনীপুরের ওই কলেজ মাঠে আমি খেলতাম ক্লাস ফাইভ থেকে এইট পর্যন্ত। সেই মাঠ আপনি ভরাতে পারেননি’। ‘একটু আগে সারা বিশ্বের সব থেকে দুর্নীতিপরায়ণ পার্টি মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সভা করল। মাঠে লোক ভরেনি। দিলীপ ঘোষ যখন বলা শুরু করলেন তখন থেকে ফাঁকা হওয়া শুরু হল। আর অমিত শাহ যখন বলছেন তখন মাঠা ফাঁকা। কারণ অমিত শাহকে কেউ শুনতে চান না। তাই তো উনি বলেছেন, আরে ভাইয়া শুনো’। আপনারা কৃষক বন্ধু নন, কৃষকদের বাড়ি খেতে গেলেই কৃষক বন্ধু হওয়া যায় না। আপনারা দাঙ্গাবাজের দল’।

    এরপরে কল্যাণ বাবু মমতার সরকারের খতিয়ান দেওয়া শুরু করেন। তিনি জানান যে মমতার শাসন কালে যেখানে দেশের বেকারত্ব ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে আমাদের রাজ্যে ৪০% হ্রাস পেয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি এও জানান যে মমতার সময়ে কৃষকেরা কিভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তবে শুভেন্দু দল ছেড়ে যাওয়াতে কিছুটা হলেও যে দল সমস্যার মধ্যে রয়েছে তা আজ কল্যাণবাবুর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এ স্বল্প হলেও ধরা পড়েছে।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...