দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: রবিবার বোলুপরে অমিত শাহের ‘রোড শো’ এর অব্যবহিত পূর্বে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন আগে থেকেই মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময়ে হিন্দী ভাষা ব্যবহার করছিলেন হিন্দী ভাষার মানুষদের সমর্থন আদায় করতে। এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডেপুটেশন নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করে রবিবার টুইট করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি টুইটারে লিখেছেন, পুলিশ আধিকারিকদের বদলি করে রাজ্যের অধিকারে নির্লজ্জভাবে নাক গলাচ্ছে কেন্দ্র। একইসঙ্গে তিনি বাংলাকে সমর্থন করার জন্য দিল্লি, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং এম কে স্টালিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই টুইট দেখে বাংলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু এই যে তাহলে কী মমতা ব্যানর্জী মেনেই নিলেন যে দলের ভাঙ্গন ধরাচ্ছে ‘বহিরাগত’ বিজেপি! আর সেই জন্যে এবার তিনি লোকসভা ভোটের সময়ে মহাজোট গড়ার মতই বহিরগত অবিজেপি মন্ত্রীদের নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছেন!
রবিবারের টুইটে মমতা ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেষ বাঘেল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট ও ডিএমকে প্রধান এম কে স্টালিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা লিখেছেন, এঁরা প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে মজবুত রাখার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বাংলার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে সূত্রের খবরে জানা যাচ্ছে যে, মহারাষ্ট্র’র শরদ পাওয়ারের সাথেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা বলেছেন, তিনি অনুযোগের সুরে জানিয়েছেন যে বিজেপি অহেতুক দল ভেঙে অনৈতিকভাবে তৃণমূলকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপি প্রধান জে পি নড্ডার কনভয়ে ‘ন্যাক্যার জনক’ হামলার ঘটনায় কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে উঠেছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজি’কে তলব করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আর সেই তলব ঘিরে অনেক চিঠি চালাচালি হয়। অবশেষে গত পরশু ভার্চুয়াল মিটিং এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সতর্ক করে দেয় যে এমন ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে। আর এরপর রাজ্যের ৩ আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠানোর নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে জারি করা এক নির্দেশিকায় দক্ষিণবঙ্গের এডিজি রাজীব মিশ্রকে ইন্দো–তিব্বত বর্ডার পুলিশ, প্রেসিজেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি প্রবীণ ত্রিপাঠীকে সীমা সুরক্ষা বল ও ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পান্ডেকে পুলিশ রিসার্চ ব্যুরোতে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ মহলের মতে, এই বদলি ‘শাস্তিমূলক’। যদিও এই বদলিকে অসাংবিধানিক বলছেন না কোনও বিশেষজ্ঞই। তবে তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে সাজানো ও প্রতিহিংসমূলক বলেই মনে করছেন। এমন কী তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর শরীর নিয়ে ঠাট্টা করতেও ছাড়েন নি। তাঁর মতে ‘মোটার ভুরি ও টাকে এক ফোঁটাও বুদ্ধি নেই’!
যদিও এদিকে কেন্দ্রের সাথে সম্মুখ সমরেই নামার কথা ভেবে নিয়েছে নবান্ন। নির্দেশিকা অমান্য করে ৩ আইপিএস অফিসারকে রাজ্য সরকার রিলিজ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন। তাদের দাবি, রাজ্যে আইপিএস আধিকারিকের সংখ্যা কম। তার ওপর তিনজন অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠালে প্রশাসন চালানো মুশকিল হবে। আর এ নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে রাজ্য। সেক্ষেত্রে রাজ্য সুপ্রীম কোর্টে যাওয়ার কথাও ভাবেছে। তবে বিরোধীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কী ভয় পাচ্ছেন যে তাঁর সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে! এর আগেও রাজীবের ক্ষেত্রে তাঁকে কলকাতায় ‘ধর্ণা’ দিতে বসতে দেখা গিয়েছিলো তারপর দিল্লি গিয়ে গোপন সেটিং এ মিটিয়ে ছিলেন সেই রাজীব কান্ড, তবে কী নাড্ডার কনভয়ে হামলা পূর্ব পরিকল্পিত!
এক কথায় নাড্ডা’র সফরে ‘হামলা’ আর এরপর পরেই অমিত শাহের ‘মেগা শো’ সেই সাথে শুভেন্দু সহ একগুচ্ছ বিধায়ক ও নেতা, মন্ত্রীর বেরিয়ে যাওয়া যথেষ্ট চাপে রেখেছে শাসকদল তৃণমূলকে। এবার দেখার আগামী দিনে বঙ্গ রাজনীতিতে আর কী চমক অপেক্ষা করে আছে।