দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে বিতর্ক আরও জোরালো হচ্ছে। এই ইস্যুতে অমর্ত্য সেনকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। এমনকি গত পরশু নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জী বলেন নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের বিষয়ে এই ধরণের উক্তি করা বাঙালি’র লজ্জা তাই তিনি সকল বাঙালির পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের কাছে ‘ক্ষমা’ চেয়ে নিচ্ছেন। এবার মুখ্যমন্ত্রীর পর সেই ইস্যুতেই মুখ খুললেন অমর্ত্য সেন নিজেই।
বিশ্বভারতীর ওই জমি বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, ওই বাড়িটা বানানো হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে। তাঁর বাবা ‘বাজার’ থেকেই জমি কিনেছিলেন, সেই জমি ক্রয়ের ৫০ বছর পর হঠাত্ কেন এই বিতর্ক! তা তাঁর জানা নেই। তাঁর ধারণা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নিয়ে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে ‘মুখ খোলা’র কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ঠিক এমনটাই মন্তব্য করেছেন এই বর্ষীয়ান নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ।
উল্লেখ্য, ভোটের মুখে খুব অদ্ভুতভাবেই শান্তিনিকেতন নিয়ে অশান্তি অব্যহত। কয়েক মাস আগেই এই শান্তিনিকেতন এর পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য এক প্রস্থ সংঘাত হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাইস চ্যান্সেলরের কর্ম পন্থা নিয়েও শাসক দলের থেকে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে দিন কয়েক আগে বিশ্বভারতীর কমিটির একটি অংশ দাবি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে রেখেছেন অনেকেই, যে তালিকায় রয়েছেন অমর্ত্য সেনও। যা নিয়ে সমস্থ মহলেই ইন্ধন পায় জোরালো বিতর্ক।
প্রসঙ্গত,অমর্ত্য সেন জানিয়েছেন যে বিশ্বভারতীর একটি অংশ জমি জবরদখল করে রেখে বাড়ি বানানোর অভিযোগ আনা হলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ তিনি পাননি। এই বিতর্কের পাল্টা আক্রমণ করে তাঁর জবাব, “আমাদের কোনও চিঠি দেয়নি বিশ্বভারতী। কিছু জানাননি উপাচার্য। যাঁর বাড়ি তাঁকে কিছু না জানিয়ে অন্যত্র বলা হচ্ছে, আমি মনে করি এতে ‘ছোটোলোকামি’ আছে, যা ঢাকা যাচ্ছে না।”
অমর্ত্য সেন আরও জানিয়েছেন যে তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবছেন! আপাতত তাঁর বাড়ি ‘প্রচীতি’ যে জমির উপর তৈরি সেখানকার লিজ নিয়েও কোনওরকম গন্ডোগোল নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন। তাঁর ধারণা সম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে ‘সরব’ হওয়ার জেরেই তাঁকে এই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’র জমি নিয়ে এই বিতর্ক’র উল্লেখ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে শুক্রবার চিঠি লিখে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে অমর্ত্য সেনকে এদিন মমতা লিখেছেন, ‘বিশ্বভারতীর কিছু নব্য হানাদার সম্প্রতি আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে’। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে লেখা চিঠিতে তাঁকে ‘সম্মাননীয় অমর্ত্যদা’ বলে সম্বোধন করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে এ দেশের আধিপত্যবাদ এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাকে আপনার বোন এবং বন্ধু হিসেবে গণ্য করুন’।
ওই চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেন পরিবার কীভাবে শান্তিকেতনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তা উল্লেখ করে মমতা লিখেছেন, “আপনার মাতামহ পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের বাসিন্দাদের একজন। আপনার বাবা শিক্ষাবিদ এবং প্রশাসক আশুতোষ সেন আট দশক আগে প্রতীচী নির্মাণ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি এবং বন্ধনের সঙ্গে আপনাদের পরিবার নিবিড় ভাবে আবদ্ধ”। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে শান্তিনিকেতন কে কেন্দ্র করেই যুযুধান রাজনৈতিক দু পক্ষই জমি দখলের লড়াইয়ে নেমেছে। এর ফলে রাজনীতির হাত থেকে এবার রবীন্দ্রনাথও যে বাদ যাচ্ছেন না সেকথা বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের নোবেল গিয়েছে এবার হয়তো শান্তিনিকেতনও হাত ছাড়া হবে!