দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ ডায়মন্ডহারবারের কেল্লার মাঠ থেকে নাম না করেই শুভেন্দু অধিকারীর জবাব দিলেনব ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ তথা দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রবিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে সভা করলেন অভিষেক। শুভেন্দু দলত্যাগ করার পর এটাই তাঁর প্রথম প্রকাশ্য জনসভা। তাই সকলেরই আগ্রহ ছিল গত কয়েকদিনের শুভেন্দুর মুহূর্মুহ আক্রমণের জবাবে তিনি কি বলেন। আর মানুষের প্রত্যাশা মতোই তিনি শুভেন্দু সহ বিজেপি এবং অমিত শাহ-কে আজ তুমুল আক্রমণ করলেন। এমনকি শুভেন্দু-বিজেপি যোগদান ইস্যুতে অভিষেক বললেন, ” ২১ বছর ধরে তৃণমূল দলটা করে লজ্জা লাগছে! বলছি আপনার বাড়িতেও তো বাবা, ভাই তৃণমূলে রয়েছে। একই বাড়িতে থাকতে লজ্জা করছে না! নিজের ঘরে পদ্মফুল ফোটাতে পারছেন না, রাজ্যে পদ্মফুল ফোটাবে!
এরপর আরও সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল করতে যদি এতই অপমানিত বোধ হয়, তাহলে এক বাড়িতে বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন কী করে। আসলে মেরুদণ্ড বিকিয়ে বিজেপিতে গিয়েছ তুমি’। এরপরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, আগামী দিনেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩১-০ করবো। শুভেন্দুর ‘তোলাবাজ’ উক্তিকে ধরে এদিন কার্যত ফুঁসে ওঠেন অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, “টিভির পর্দায় নারদার টাকা খবরের কাগজে মুড়িয়ে ঘুষ খেতে তোমাদের দেখা যাচ্ছে আপনাদের। ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন আপনারা। আর বলছেন তোলাবাজ ভাইপো হঠাও। যেদিন আমার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে, সেদিন আমি ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে মৃত্যুবরণ করব। আমার পিছনে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর দিতে হবে না। ওদের আমি ভয় পাই না।”
করোনা ভাইরাস যখন ভারতে এলো তখন বহু মানুষ সংক্রমিত হন। যাদের মধ্যে ৪০% ছিলেন উপসর্গবিহীন বা অ্যাসিম্পটোমেটিক তেমনি ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে এই করোনা সংক্রমণ হয়েছিল যখন মমতা ব্যানার্জী জেলা পর্যবেক্ষক মডেলে কাজ করতে শুরু করেন। এখন নিজেই তো বলছেন ২০১৪ সাল থেকে দাদার সাথে যোগাযোগ ছিল। তাহলে অমিত শাহ যদি দাদা হয় তাহলে তাঁর ছেলে কী হবে ভাইপো! তাহলে কোন ভাইপো তোলাবাজ?
অভিষেক আরও বলেন, এরা খেতে খুব ভালোবাসে। দিল্লিতে তে কৃষকরা আন্দোলন করছে। তাদের ঠেঙিয়ে মেরে ফেলছে তোমার দিল্লি পুলিশ। এখোও অবধি ৩১ জন মারা গিয়েছে। কই তাঁদের কাছে যাওযার তো সাহস নেই। সেই অমিত শাহ এসে কখনও বাঁকুড়া, কখনও মেদিনীপুরে এসে খেয়ে যচ্ছেন। আর মিডিয়া সারাদিন ধরে দেখিয়ে যাচ্ছে অমিত শাহ পোস্তর বড়া খেলেন, কলা পাতায় খেলেন। যাদের বাড়িতে খেতে যাচ্ছেন, তাদের সুখ দু:খের কথা না শুনেই চলে গেলেন। এসব রাজনীতি মানুষ বোঝে!
অমিত শাহ’র সাথে বিজেপিকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘নোট বাতিলের সময় লাইন পড়েছিল, সেটি ছিল আতঙ্কের লাইন, আর দুয়ারে সরকারে লাইন পড়ছে, এটা ভরসার লাইন’। তিনি জেপি নাড্ডার সভা প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন। অভিষেকের দাবি, আমাদের জনসভা করতে কলকাতা থেকে বাসে করে লোক আনতে হয় না। গত ১০ তারিখ জেপি নাড্ডা এসেছিলেন, লোক কত হয়েছিল? আমি লোক দেখতে পাইনি। আর মিটিং করেছে কোথায়? কুলপিতে, আরে সভা করতে হয় সীমান্তে কেন? লোক আনার জন্যে? সভা করে দেখাক বজবজে, সভা করে দেখক আমতলায়, মধ্য ডায়মণ্ডহারবারে! বুঝব দম। কোনওদিন শুনেছেন, ভিআইপি কনভয়ে মিনিবাস থাকে, বাইক থাকে? কিছু মানুষ পথ আটকেছিল, কয়েকজন ইট ছুড়েছে, এটা ঠিক করেননি। আমি আবেদন করবো ইট মেরে নয়, ইভিএম জবাব দিন।


আজ অভিষেক এও বলেন যে গরুপাচার, কয়লা পাচার হচ্ছে আমার কথা শুনে, তাহলে বলি, সীমান্ত সামলায় কে ? বিএসএফ, বিএসএফ কে চালায় কে অমিত শাহ! কয়লা মন্ত্রক কার? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। সুরক্ষা দেয় কে সিআইএসএফ। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে কে? অমিত শাহ। তাহলে অমিত শাহ’র কথা না শুনে যদি এরা আমার কথা শোনে। তাহলে অমিত শাহ’র উচিত পদত্যাগ করা। সেই সাথে অভিষেক দিলীপ বাবুর বাঙালি’র অবদান কম প্রসঙ্গে পাল্টা মন্তব্য করে বলেন স্বামী বিবেকানন্দ ভারতকে প্রথম বিশ্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন, নেতাজি সুভাষের আজাদহিন্দ বাহিনীর ভয়ে ইংরেজদের বুকে ভয় জন্মায়, আর রাজা রামমোহনে’র জন্যে আজ আমাদের মাতৃ স্থানিয়েরা ‘সহ মরণ’ থেকে দূরে। ঠিক তেমনি ৩৪ বছরের বাম আমলের বন্দুকের মুখ থেকে বারুদের স্তুপ থেকে বাংলার মানুষ কে উন্নয়নের মুখ দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
আজ কেল্লার মাঠ ছিল জনগনে ভরাট। আজকের জনসভাতে সকলেই অভিষেকের বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করতে দেখতে পাওয়া যায়। তবে আজ অভিষেক যেভাবে সচিন টেন্ডুলকরের সাথে মমতা ব্যানার্জীকে তুলনা করলেন তা এক কথায় অভাবনীয়। অভিষেক বলেন যখন ব্যাটিং এর সময় উইকেট পড়তে থাকে আর ননস্ট্রাইকার এন্ড এ সচিন দাঁড়িয়ে থাকে, তখন ও বিপক্ষ বোলারদের বুকে দুরু দুরু শব্দ হয়। আর এখন এটাই শোনা যাচ্ছে বিজেপির বুকে।