দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গতকাল সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছে। সেই আবেদনে রাজীব কুমারকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার কথা যেমন জানিয়েছে, তেমনই দীর্ঘ সেই আবেদনে রাজ্যের তদন্তে বাধা দান সহ একাধিক বিষয় স্পষ্ট করেই তুলে ধরতে চেয়েছে। তবে এর আগে সারদা মামলায় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাজীব কুমারকে কলকাতা হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিল। কিন্তু কিছুটা আশ্চর্যজনক ভাবেই সে সময়ে সেই সিবিআই কেন সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেনি সেটা রহস্য হয়ে রয়ে গিয়েছে। তবে আজ সোমবার সিবিআইয়ের সেই আবেদন এর কপি হাতে নিয়ে আসরে নেমে পড়লেন বিজেপির মুখপাত্র অমিত মালব্য। যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে তৃণমূলের জন্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর!
আজ মালবী যে টুইট করেছেন তাতে তিনি ওই আবেদনের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে দাবি করেছেন যে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের অফিসারদের জেরার মুখে তৃণমূলের তত্কালীন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ জানিয়েছিলেন সারদা গ্রুপের প্রমোটার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। আর সেটা সাত বছর আগেকার ঘটনা।
এমনকি কুণালের ফোন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যাবতীয় কথা বলতেন। এই বিষয়ে সুদীপ্ত সেনের দুটি নম্বরের ‘কল রেকর্ড’ ঘেঁটে জানা গিয়েছে, এক বছরে কুণাল সুদীপ্ত’র একটি নম্বরে ২৯৮ বার এবং অন্য ফোন নম্বরটিতে ৯ বার ফোন করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রতি মাসে ২৭ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হত তারা টিভিকে। সেই সংস্থার মালিকানা ছিল সারদা গ্রুপ। ২৩ মাস ধরে মোট ৬.২১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল সরকারি কোষাগার থেকে। এমনকি তৃণমূলের সাপ্তাহিক মুখপত্র জাগো বাংলার মাধ্যমে সারদা সহ বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থা তথা রোজভ্যালি, অ্যাঞ্জেল, পৈলান, টাওয়ার গ্রুপকে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিক্রি করা হয়েছে। তার মধ্যস্থতা করেছে সরকারের উচ্চ পদে থাকা লোকজন।
এমনকি সারদা গ্রুপের কর্মী সফিকুর রহমান ইডি জেরায় জানিয়েছেন, কুণাল সুদীপ্তকে ফোন করে বিভিন্ন পুজো কমিটিতে চাঁদা দেওয়ার কথা বলতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিধায়ক নির্বাচনে প্রার্থী হন সেই সময়ে ভবানীপুরের সমস্ত পুজো কমিটিকে চাঁদা দিতে সুদীপ্তকে বাধ্য করেছিলেন কুণাল। তবে আগামী বছরের নির্বাচনের আগে ফের সারদা মামলার প্রসঙ্গ উঠে আসায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ করতে শুরু করেছে তৃণমূল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর আগে বিভিন্ন মিটিং এ অনেক বার বলেছেন, তাঁর সরকারকে এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, এজেন্সি বললেই কী চিটফান্ডের টাকা লুঠ করার অভিযোগমাফ হয়ে যাবে! মানুষ এখন জানে কারা আসলে গরিবের টাকা লুঠ করেছে। এই আবেদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি বিক্রির প্রসঙ্গ আগেও একবার তুলেছিল সিবিআই। এ ব্যাপারে কয়েকজনকে জেরাও করেছিল। তা ছাড়া ইতিমধ্যে এক চিত্র প্রযোজকের বিরুদ্ধেও এ ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে যিনি এখন ভুবনেশ্বর জেলে রয়েছেন। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, ছবি কিনতে একটি চিটফান্ড সংস্থাকে নাকি ওই প্রযোজকও বাধ্য করেছিলেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে খুব স্বাভাবিক ভাবে কুণাল ঘোষ কে নিয়ে দল বেজায় সমস্যাতে পড়লো বলেই মনে করছেন তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্বরা। এছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে যেভাবে কুণাল ঘোষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তৃণমূলের মুখপাত্র হয়ে মন্তব্য করছেন, তাঁকে তার অস্ত্রেই ঘায়েল করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট কী বলে সেটাই এখন দেখার।