25 C
Kolkata
Saturday, April 1, 2023
More

    দীর্ঘ ৯ বছর পর রাস্তা’র হস্তান্তর! ভোট আবহে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক দের ‘পাওনা’!

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আবেদন উঠেছিল সেই ২০১১ তেই। কিন্তু আবেদন নীল ফিতের ফাঁসে আটকে ছিল। অবশেষে ২০২০ তে এসে বিধানসভা ভোটের আবহে ‘শান্তিনিকেতন’ কে কেন্দ্র করে চলা কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতিতে শেষপর্যন্ত জয় হলো ‘রাস্তার’ ই। পূর্ত দফতর মারফত বছর তিনেক আগে হস্তান্তর করা শান্তিনিকেতনের ডাকঘর মোড় থেকে কালিসায়র মোড় পর্যন্ত রাস্তার দায়িত্ব এবার রাজ্যের! বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে আজ ফিরিয়ে নেওয়ার ছাড়পত্র মূলক চিঠিতে সই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

    আজ সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজই সকালে শান্তিনিকেতনের কয়েকজন আবাসিক তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে একটি চিঠিও দিয়েছেন যা তিনি গণমাধ্যম সহ উপস্থিত সকল প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে পড়ে শোনান-” এতে তাঁরা প্রধানত লিখেছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃক যত্রতত্র কুৎসিত উঁচু পাঁচিল নির্মাণ এবং পথ অবরোধ এবং তার ফলে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক এবং স্থানীয অধিবাসীবৃন্দের দুর্দশার কথা আমরা জানাচ্ছি শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতনে যাতায়াতের শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তাটি যেটা পূর্ত দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা, (সেখানে) শিক্ষাভবনের মোড় থেকে কাঁচমন্দির পর্যন্ত সবধরনের মালবাহী গাড়ির চলাচল সবসময়ের জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্বে নিয়ন্ত্রণ ছিল সংগীত ভবনের মোড় থেকে কাঁচমন্দির পর্যন্ত সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত। সেটা ছিল জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে।”

    মমতা ব্যানার্জী

    এই চিঠি পড়া থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কাকতলীয়ভাবে আজ বীরভূমে আসার আগে হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে তিনি সেই ‘রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশিকায়’ স্বাক্ষর করে এসেছেন। এই ফাইল পূর্ত দফতরের তরফ থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। আর সেই ফাইল স্বাক্ষরের পরই তিনি এই চিঠি পড়েছেন! আজ যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কাকতালীয় আদতে কী সত্যিই তা। একটু পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলে চোখে পরবে মমতার আমলেই এই রাস্তা বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মূলত: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত-সহ বিভিন্ন কারণে সেই সুপারিশ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে অবশ্য সেই প্রক্রিয়া আটকে ছিল!

    এরপরে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এসে শান্তিনিকেতনে ভ্রমণে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও তাঁকে সেই বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এরপর সাময়িকভাবে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় গতি পেলেও অজানা কারণে সেই রাস্তা অবহেলিতই রয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালের মার্চে সরকারিভাবে ওই রাস্তার নথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিল পূর্ত দফতর। আর আজ সেই রাস্তা আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নিলো সরকার! বিরোধীদের বক্তব্য ভোট আসলেই উন্নয়নের কথা মনে পড়ে শাসক দলের!

    আজ বিশ্বভারতীর হাত থেকে এই রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আইন মেনে দ্রুত সেই রাস্তার উন্নয়নের কাজ করতে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেন। মমতা বলেন,”রাস্তাটা আমরা আবার ফেরত নিচ্ছি। তাহলে আশ্রমের সমস্যাটা সমাধান হয়ে যায়। এই অঞ্চলেই অমর্ত্য সেন, ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসুদের মতো আশ্রমিকদের বাড়ি এবং বাড়ি মেরামত করার জন্যও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ এর সঙ্গে আবার কটাক্ষ করে বলেন, “বাদ বাকি লাইনটা পড়লাম না ভদ্রতা করে।”

    যদিও আজ মমতা’র এই বৈঠকের আগে ‘পোস্টার বিতর্ক’ দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথের কাটআউট নিয়ে আশ্রমিকদের এক অংশের দাবি- রবীন্দ্রনাথ কখনো রাজনীতিতে থাকতে চান নি। সুতরাং ওনার আশ্রমটিকেও রাজনীতির বাইরেই রাখা হোক। যদিও পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলাকে ঘিরে গন্ডগোল আর তা নিয়ে শাসক দল এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর সংঘাত স্পষ্ট করেছে যে এই বিশ্বভারতীকে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েই রাজনীতি করছে।

    এদিন পাঁচিল প্রসঙ্গে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ করে পরোক্ষভাবে মমতা বলেন, ‘শান্তিনিকেতন যেহেতু রবীন্দ্র সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত, তাই আমি চাই যে রবীন্দ্র সংস্কৃতি এখানে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হোক। এখানে ছেলেমেয়েরা যেভাবে নৃত্য, কলা, গান…পৌষমেলা থেকে শুরু করে, এখন অবশ্য সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘শুনুন পাঁচিল তুলে দিলে তো সেলফিস জায়েন্টের কথা এসে যাবে। আমরা চাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা যেটা মুক্ত, মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা, মুক্ত পরিবেশে শিক্ষাকে এখানে নিয়ে আসুন।”

    এই চলতি মাসেই কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে প্রকাশ্য যে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়েই শান্তিনিকেতনের আবেগ কে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্বভারতীয় শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি যা নিয়ে মমতা সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ’র অভিযোগনিয়ে খোলাখুলি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়ান মমতা ও তাঁর দল আশ্রিত বুদ্ধিজীবিরা। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বাদানুবাদ হয়েছে তাতে পরিষ্কার রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সংঘাত স্পষ্ট।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...