দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এবার সাহসী হওয়ার পথে এক পা এগিয়ে শুভেন্দু’র অনুজ সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। সম্প্রতিক সময়ে ওপর ভাইকে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে সরানোর ‘কৈফিয়ত’ চেয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই চিঠিতে মূলত: দুটো প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রথমত: কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে কোন ‘অপরাধে’ তাঁর ভাই সৌম্যেন্দু অধিকারীকে সরানো হয়েছে? দ্বিতীয়ত, কাঁথির বর্তমান পুরবোর্ড ভেঙে নতুন প্রশাসক হিসেবে সিদ্ধার্থ মাইতিকে নিয়োগ করার পেছনে কী কারণ ? আজ অর্থাত্ ৩১ শে ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার এই চিঠি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছনর কথা।
এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী জানান, “আমার ভাই সৌমেন্দু এখনও দলেই রয়েছে। সে যে তৃণমূল ছাড়বে, এমন কথা কিন্তু কোথাও কাউকে বলেনি। আমার প্রশ্ন, হঠাৎ কেন ওকে ওর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? কী এমন অপরাধ করেছে ও? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজেই আমি দলনেত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছি। চিঠিতে আমি ন্যায়বিচারের দাবি জানাব।” আর তাঁর নজরে ‘ন্যায়বিচার’ চাক্ষুস না করা পর্যন্ত তিনি কাঁথির পুরভবনে পা রাখবেন না, এমনটাই নিশ্চিত করেছেন। এমনকি তাঁর বাবা তথা কাঁথির প্রাক্তন পুরপ্রধান শিশির অধিকারী বা পুরসভার প্রাক্তন প্রধান প্রশাসক সৌম্যেন্দুও পুরসভায় যাবেন না ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার খড়দার এক সভায় শুভেন্দু অধিকারীর “আমার ঘরেও পদ্ম ফুটবে” এই মন্তব্যের পরেই সৌমেন্দুকে সরানোর সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন খড়দায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘রামনবমী, বাসন্তীপুজো হয়ে যাক, আমার পরিবারের লোকজনও পদ্ম ফোটাবে। এখন সবে পদ্মে কুঁড়ি ধরেছে।’ যদিও এই অপসারণ প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, “পুরসভার কাজ নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছে। তাই এমন অভিযোগ পাওয়ার পর পরই প্রশাসক বদল করা হয়েছে।” যদিও এ বিষয়ে দিব্যেন্দু অধিকারীর প্রশ্ন,” যাঁকে প্রধান প্রশাসক করা হয়েছে তিনি এলাকারই ভোটারই নন। প্রায় ৫০ বছর ধরে পুরসভার সঙ্গে জড়িত আমাদের পরিবার। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।”
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূলের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী অনেক কড়া কড়া মন্তব্য করেছেন। এমনকি সম্প্রতি তিনি ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ির সদস্যরাও পদ্ম ফোটাবে।’ তাঁর এই মন্তব্যের কারণ অভিষেক দাবি করেছিলেন, “যে ঘরেই পদ্ম ফোটাতে পারেনি, সে বাংলায় পদ্ম ফোটাবে কি করে!” মূলত: এই বক্তব্যেরই জবাব দিয়েছিলেন শুভেন্দু।
শুধু সৌমেন্দু অধিকারী নয় এই মূহুর্তে শিশির অধিকারীকেও একটু অফকালার লাগছে। শিশির বাবু নিজেও দলের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। আর প্রকাশ্যে দিব্যেন্দুকে বলতে হচ্ছে, আমি তৃণমূলেই আছি। দলের সব অনুষ্ঠানেই থাকব। আমন্ত্রণ পেলেই থাকব। এমনকি বীরভুমের পদযাত্রার পর মঞ্চের একপাশে দিব্যেন্দুকেও দেখা গিয়েছিল। তবুও তৃণমূলের পদক্ষেপ দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মন্তব্য, তৃণমূলের নীতিগত কারণেই অধিকারী পরিবারকে একটু একটু করে পদ্ম শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে তৃণমূলের বিপরীত পথে হেঁটে নিজের গড় কাঁথিতে বিজেপি’র সংগঠন জোরদার করছে শুভেন্দু অধিকারী। রণকৌশল ঠিক করতে গতকাল নিজের বাড়িতেই বৈঠক করলেন তিনি। আর সেখানে কিছুটা চমক দিয়েই শিশির অধিকারীর সঙ্গে এসে দেখা করেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাত–সহ বেশ কয়েকজন নেতা। যদিও এই বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য এটি একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎকার। এই বিষয়ে জানিয়ে রাখা ভাল যে আগামী কাল অর্থাত্ ১’লা জানুয়ারি কাঁথির ডরমেটরি সংলগ্ন মাঠে বিজেপি’র সভা হবে। যেখানে থাকবেন শুভেন্দু অধিকারীর হাত থেকে গেরুয়া পতাকা নেবেন কাঁথি পুরসভার ১৬ জন কাউন্সিলর–সহ তৃণমূলের অনেক নেতাই!