দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ ৩’রা জানুয়ারী রবিবার সকালে ফুরফুরা শরিফে হাজির মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন তথা মিমের সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। লক্ষ্য পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি’র সাথে দেখা করা। ওয়াইসি’র পূর্বনির্ধারিত জানুয়ারি সফরের অংশ হিসেবেই আব্বাসের বাসভবনে তাঁর উপস্থিতি। যদিও আজ এই দুজনের সাক্ষাত্ বিশেষ অর্থবহ কারণ এই দুই সংখ্যালঘু নেতাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টো স্রোতে বয়ে চলা দুই নেতা।
উল্লেখ্য, এর আগে সিদ্দিকি জানিয়েছিলেন তিনি পৃথক দল করে বিধানসভা ভোটে লড়বেন। কিন্তু এই মূহুর্তে যা খবর তাতে ওয়াইসি চাইছেন আব্বাস তাঁর দলেই যোগ দিন। আসলে গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে মিম এখন প্রায় সর্বভারতীয় পার্টি হয়ে উঠেছে। সেই সাথে যদি সত্যিই সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন করতে হয় তাহলে সংসদে জোরালো বার্তা রাখতে হবেই। আর তার জন্যে প্রয়োজন শক্তিশালী ও সমষ্টিগত প্রয়াস। সিদ্দিকি মিমে যোগ না দিলেও যাতে একুশের ভোটে বাংলায় সংখ্যালঘুদের জয় হয় সেই চেষ্টায় রয়েছেন ওয়াইসি। শোনা যাচ্ছে তারা সেক্ষেত্রে পৃথক দল তৈরি করতে পারেন।
অন্যদিকে এর আগেই গত মাসে বাংলার চার জেলা থেকে চব্বিশ জন সংখ্যালঘু নেতা হায়দরাবাদে গিয়ে ওয়াইসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আর ওই বৈঠকেই স্থির হয়েছিল, সমীক্ষা করা হবে যাতে সম্ভাব্য কত আসনে প্রার্থী দেওয়া যেতে পারে। আর ঠিক সেই বৈঠকের কয়েকদিন পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্যের বিরোধিতা করে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ওয়াইসি। সেদিন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, “সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করার জন্য একটা হায়দরাবাদের পার্টি ডেকে এনেছে। সেই পার্টিটা এখানে কয়েকটাকে জোগাড় করেছে। বিজেপি ওদের টাকা দেয়। বিহারেও ওরা তাই করেছে। ওরা বিজেপির বি-টিম।”


এই বিজেপির বি টিম এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে মিম প্রধান বলেন,”ওয়াইসিকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারে এমন বান্দার এখনও জন্ম হয়নি। আমায় কেউ কিনতে পারবে না।” সেই সাথে তিনি এও বলেন যে, “সংখ্যালঘু ভোট কারও জমিদারি নয়! এত দিন আপনি শুধু মীরজাফরদের দেখেছেন। যাঁরা আপনার অনুগত হয়ে ছিলেন এবং শুধু নিজেদের কথাই ভেবেছেন। কিন্তু মুসলিমদের কথা আপনি আদতে ভাবেননি। তাঁদের প্রকৃত উন্নয়ন করেননি।”
যদিও ওয়াইসি’র গুরুত্ব কিছু কম নয় এই বঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা যেমন দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। এমনকি ওয়াইসি সংখ্যালঘুদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনিও নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উগ্র বিরোধী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চেষ্টা দেশের কোনও রাজনৈতিক দলই করেনি। শুধু তাঁদের ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হয়েছে।
তাঁর মতে বাংলাতেও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে, তা কেবলই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি। তবে এই একই সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল সিদ্দিকি’ কেও তাই এই দুই সংখ্যালঘু শক্তি একজোট হলে শাসক দলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসাতে পারে এমন আশঙ্কা ও সম্ভাবনার কথা বলছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এই বিষয়ে পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য ” নতুন পার্টি এলে অনেকেই একটু লাফালাফি করেন। বিশেষ করে এই ধরণের হিন্দু সাম্প্রদায়িক বা মুসলিম সাম্প্রদায়িক পার্টি। তৃণমূল রবীন্দ্রনাথের বাংলা, নজরুলের বাংলা’র মানুষের কথা ভাবে, তাদের উন্নয়ন ঘটায়। তাই কে এল বা কে গেল তা নিযে তৃণমূলের মাথা ব্যথা নেই।”
যদিও অনেকেই মনে করছেন মুখে ‘মারিতম গন্ডার’ হলেও তৃণমূলের অন্দরে যে আসাদউদ্দিন কে নিয়ে মাথা ব্যাথা রয়েছে সে চিত্র একটু একটু করে পরিষ্কার হচ্ছে, এই যেমন গতকাল সবাইকে চমকে দিয়ে জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতির পদ পেয়েছেন হলদিয়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ আসগর আলি। শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী এই তৃণমূল নেতা বিজেপিতে নাম লেখাননি। তাই তাঁকে পদ উপহার দেওয়া হল বলে মনে করছে তৃণমূলেরই একাংশ। তবে লক্ষ্য একটাই সংখ্যালঘু ভোট যেন সিদ্দিকি বা ওয়াইসি কাটতে না পারেন!